যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি কমিয়েছে চীন, লাভ বাংলাদেশের

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ডিয়ারফিল্ড এলাকায় সয়াবিন কাটার সময় ড্রোন থেকে তোলা ছবি। ৭ অক্টোবর, ২০২১। রয়টার্স ফাইল ফটো।

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে চীন। এতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের আমদানিকারকরা এখন তুলনামূলক কম দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি করছেন।

একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল চীন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের পর দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। আর তাতে আমেরিকান সয়াবিন কেনা কমিয়ে দেয় চীন।

বাংলাদেশের সয়াবিন আমদানিকারক, মিলার, তেল নিষ্কাশনকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীনের অনুপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে যে বিশাল সয়াবিনের মজুত তৈরি হয়েছে, তা থেকেই তারা এখন সাশ্রয়ী দামে সয়াবিন কিনছেন।

সাধারণত বাংলাদেশ সয়াবিন আমদানি করত লাতিন আমেরিকা থেকে। কারণ সেখানে সয়াবিনের দাম তুলনামূলক কম। বিশেষ করে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। কিন্তু চীনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও সেখানে দাম বাড়ার কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভালো বিকল্প খুঁজছিলেন।

ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটিও চালান নেয়নি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সয়াবিন আমদানিকারক দেশ চীন। ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। কারণ তারা চীনের বাজারের ওপরই সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল।

২০২৪ সালে চীনের মোট সয়াবিন আমদানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ সরবরাহ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যার বাজারমূল্য ছিল ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের মোট সয়াবিন রপ্তানির অর্ধেকের বেশি।

কিন্তু এখন সেই বাজার হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা ক্রেতা সংকটে পড়েছেন, ফলে দামও কমেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ৪ লাখ টনের বেশি সয়াবিন রপ্তানি করেছে, যা চীনের তুলনায় খুব সামান্য। কিন্তু বাংলাদেশে দেশটির রপ্তানি আগের চেয়ে বেড়েছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সয়াবিন বীজে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পর এই সুযোগ তৈরি হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'ব্রাজিলের তুলনায় মার্কিন সয়াবিনের দামে কখনো কখনো প্রতি টনে ৪০ ডলার পর্যন্ত পার্থক্য থাকে। আমাদের দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা আছে।'

আগস্ট ৭ তারিখে এই নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে মেঘনা গ্রুপ তাদের সয়াবিনের ৬০ শতাংশ ব্রাজিল ও ৪০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনত।

'এ বছর আমরা হয়তো ৮০ শতাংশ সয়াবিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনব, কারণ দাম অনেক কম,' জানান শাহরিয়ার।

ডেল্টা অ্যাগ্রোফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, 'আমেরিকান সয়াবিন বীজের মান ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার তুলনায় অনেক ভালো। দামেও প্রতি টনে ২০ থেকে ৩০ ডলার কম। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এটা বড় পার্থক্য।'

তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্ববাজারে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের দাম প্রতি টন প্রায় ৪৭০ ডলার, যেখানে ব্রাজিলের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৪৯০ ডলারে।

আমিরুল হক আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি বাড়লে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়ক হবে।'

'ট্রাম্প প্রশাসন চায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসুক,' যোগ করেন তিনি।

আমিরুল হক বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে পারস্পরিক শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।

ওই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যেন দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।

বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্যে বাংলাদেশের পক্ষেই বেশি।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয় প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের বাংলাদেশ টিম লিড খবিবুর রহমান জানান, 'পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত দুই মাসে আমদানির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।'

আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ৪ লাখ টন সয়াবিন আমদানি করেছে, যা আগের দুই মাসের ২ লাখ টনের দ্বিগুণ।

শুধু সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ১ লাখ ১৪ হাজার টন সয়াবিন, যা মাসের মোট আমদানির ৮৭ দশমিক ১১ শতাংশ। ব্রাজিল থেকে এসেছে ১৬ হাজার ৮০০ টন (১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ)।

খবিবুর রহমান বলেন, 'জুলাইয়ে শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেও ৪৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ সয়াবিন আসত যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আর ৫৪ শতাংশ ব্রাজিল থেকে। এখন চিত্র পুরোপুরি উল্টে গেছে।'

তিনি জানান, ২০২৫-২৬ বিপণন বছরে বাংলাদেশে সয়াবিন তেল নিষ্কাশনের পরিমাণ ৯ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ লাখ টনে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

10m ago