বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো প্রতিকার আছে কি?

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে গত শনিবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্য পুড়ে গেছে। এ অবস্থায় আমদানিকারকরা এক কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন—তাদের এই ক্ষতির কোনোরকম আইনি বা আর্থিক প্রতিকার আছে কি?
এখানে দুটি বিষয় বিবেচনায় আসছে—আগে পরিশোধ করা শুল্ক ফেরত পাওয়া যাবে কি না এবং বিমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পাওয়া সম্ভব কি না।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড পয়েন্ট লিমিটেডের ঘটনা। ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ ডলার মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি করেছিল।
এর মধ্যে ৬৭ হাজার ডলারের চালানের জন্য তারা ইতোমধ্যে ১৯ লাখ টাকা শুল্ক পরিশোধও করেছিল। এই পণ্যগুলো রবিবার ছাড় হওয়ার কথা ছিল।
আরও তিনটি চালান ছিল প্রতিষ্ঠানটির, যেগুলোর মূল্য যথাক্রমে ৯৫ হাজার, ৬৮ হাজার ও ৩ হাজার ৫০০ ডলার। এগুলো শুল্ক প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় ছিল, এমন অবস্থায় আগুন লাগে।
প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, 'পুরো চালানটাই পুড়ে গেছে, কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। শুল্ক ফেরত বা ক্ষতিপূরণ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা অপেক্ষা করছি।'
এখন পর্যন্ত সরকার, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কিংবা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি)—কেউই ক্ষতিপূরণ বা শুল্ক ফেরতের বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।
জাকির হোসেন বলেন, 'শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ও প্রস্তুতকারক সমিতি (বিজিএমইএ) আংশিকভাবে কিছু বেঁচে যাওয়া পণ্যের তালিকা দিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। তিন থেকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ নথি যথাযথভাবে সংরক্ষিত করেছি। সরকার যখন নির্দেশ দেবে, আমরা সব নথি দিয়ে শুল্ক ফেরতের আবেদন করব।'
ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের চালান, মালিকানা ও পণ্যের ধরন সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানান জাকির হোসেন। তিনি বলেন, 'তারা এসব তথ্য চেয়েছে, আমি বুধবার সব দাখিল করব।'
আইনে কী বলা আছে
কাস্টমস আইন ২০২৩ অনুযায়ী, কোনো আমদানি পণ্য দেশীয় ব্যবহারের জন্য ছাড় হওয়ার আগে দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট, হারিয়ে যাওয়া বা ধ্বংস হয়ে গেলে শুল্ক বা কর ফেরত পাওয়ার আইনি সুযোগ আছে।
আইনের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, এমন কোনো ক্ষতির ক্ষেত্রে আমদানিকারক কাস্টমস কমিশনারের কাছে পুনর্মূল্যায়ন ও শুল্ক ফেরতের জন্য আবেদন করতে পারেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কয়েকজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী বিষয়টি বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনবিআরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, 'যেসব প্রতিষ্ঠান পণ্য হারিয়েছে, তাদের বিদ্যমান আইন অনুসরণ করতে হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরে এলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।'
এই বিষয়ে মতামতের জন্য এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যুগ্মসচিব মো. মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারীর নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিমার আওতায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি কী?
শুল্ক ফেরত পাওয়ার সুযোগ থাকলেও কোটি টাকার পণ্য হারানোর ক্ষতিপূরণ নির্ভর করছে বিমার আওতার ওপর—অথবা কার্গো সুবিধার দেখভাল করা কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতার ওপর।
অধিকাংশ আমদানিকারকের জন্য এমন দুর্যোগে বিমাই একমাত্র ভরসা। তবে ছোট কোম্পানিগুলোর অনেক চালান আংশিকভাবে বিমা করা বা একেবারেই বিমা করা থাকে না।
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মামুন বলেন, 'খাদ্য, তৈরি পোশাক, রাসায়নিক, সিমেন্ট, ওষুধ এবং বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সাম্প্রতিক এই দুর্ঘটনার পর বিমা দাবি দাখিল করেছে।'
তিনি জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৮০টি প্রতিষ্ঠান দাবি সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছে, যার মোট পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এই পরিমাণ এখনো প্রাথমিক হিসাবের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণে বিস্তারিত জরিপ করা হবে। তারপর অনুমোদিত দাবি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সেহাব উল্লাহ আল-মনজুর বলেন, 'আমরা তৈরি পোশাক ও ওষুধ খাতের প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠানের দাবি পেয়েছি, যা এখন পর্যালোচনাধীন।'
নিটোল ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী এস এম মাহবুবুল করিম বলেন, 'চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি প্রাথমিক বিমা দাবি জমা দিয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন শেষ হবে।'
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জাকির হোসেন জানান, তার কিছু চালানের বিমা ছিল। তিনি বলেন, 'শুল্ক ফেরতের একটা আশা আছে, কিন্তু বিমা থেকে কী আসবে—তা এখনো অনিশ্চিত।'
Comments