হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ঋণদান ক্ষমতা বাড়াচ্ছে সরকার

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। এটি দেশের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান, যা দীর্ঘমেয়াদে ও কম সুদে গৃহঋণ দেয়। সেক্ষেত্রে আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

তহবিলের ঘাটতির কারণে এই করপোরেশন ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিএইচবিএফসি এক হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয়। কিন্তু এর মধ্যে বিতরণ করতে পারে ৯২২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৪১২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে পারেনি সংস্থাটি, যদিও আগের বছরের তুলনায় বিতরণ সামান্য বেড়েছে।

প্রস্তাবিত সংশোধনীর আওতায়, বিএইচবিএফসির বোর্ড আরও স্বাধীন হবে এবং সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ কমাবে। বোর্ড নিজেই ঋণের সুদের হার ঠিক করবে এবং সরকারের জন্য বার্ষিক লভ্যাংশ নির্ধারণ করবে। এতে করপোরেশন তার ঋণের ভিত্তি সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হবে।

বর্তমানে বিএইচবিএফসি বার্ষিক ৫০ কোটি থেকে ৮০ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএইচবিএফসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনটি জানান। গত দুই বছরে মূলধন ১১০ কোটি টাকা হলেও বিএইচবিএফসি সরকারকে ১৬০ কোটি টাকার বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে। অর্থাৎ, তারা মূলধনের চেয়ে বেশি অর্থ দিয়েছে।

প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, আইন সংশোধন হলে বিএইচবিএফসি আয়ের কিছু অংশ সংরক্ষণ করতে পারবে, ঋণের ক্ষতির জন্য প্রভিশন তৈরি করতে পারবে, সম্পদের মূল্যহ্রাস করতে পারবে এবং রিজার্ভ ফান্ড গঠন করতে পারবে।

বিদ্যমান বিএইচবিএফসি আইনে আয় সংরক্ষণের কোনো নিয়ম নেই। অথচ আন্তর্জাতিক হিসাবরক্ষণ মান ও আন্তর্জাতিক আর্থিক রিপোর্টিং মান অনুযায়ী, এটি একটি সাধারণ বিধান।

বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, 'যদি আয়ের কিছু অংশ সংরক্ষণ করার সুযোগ না থাকে, তাহলে লভ্যাংশ ও কর পরিশোধের পর বাকি থাকা অতিরিক্ত অর্থ সরাসরি সরকারের কাছে পাঠাতে হয়। এতে আমাদের মূলধন কমে যায় এবং যে তহবিল দিয়ে আমরা আরও ঋণ দিতে পারতাম, তা সীমিত হয়ে যায়।'

তিনি আরও বলেন, আমরা যা আয় করি, সবই যদি সরকারকে দিয়ে দিই, সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বিকশিত হতে পারে না। আয়ের কিছু অংশ সংরক্ষিত না থাকলে আমাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যায়।

ঋণের সুদের হার নির্ধারণে করপোরেশনের নমনীয়তার অভাবকেও তিনি আরেকটি বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিএইচবিএফসির ঋণের সুদহার অর্থ মন্ত্রণালয় ঠিক করে দেয়।

বর্তমানে এই সরকারি প্রতিষ্ঠান ৮ থেকে ১০ শতাংশ সুদে লোন দেয়, যার সর্বোচ্চ পরিশোধের সময় ৩০ বছর পর্যন্ত। বিপরীতে বেসরকারি খাত ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ উচ্চ সুদের হারে ঋণ দেয় যার সর্বোচ্চ পরিশোধের সময় ২০ বছর।

বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মান্নান বলেন, 'এ কারণেই আমাদের ঋণের চাহিদা বেশি।'

ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য করপোরেশন ২০ বছরের জন্য ৩ শতাংশ সুদে এক হাজার কোটি টাকা ঋণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মান্নান আশা করেন, তহবিলটি মঞ্জুর হবে।

তিনি আরও বলেন, করপোরেশনের একটি শক্তিশালী ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। 'আমরা কখনও ঋণ মওকুফ করিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনাদায়ী ঋণের হার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে।'

বিএইচবিএফসির খেলাপি ঋণের অনুপাত ২০২৫ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
 

Comments