সেপ্টেম্বর–ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি বেড়েছে ৩১০ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ডিয়ারফিল্ড এলাকায় সয়াবিন কাটার সময় ড্রোন থেকে তোলা ছবি। ৭ অক্টোবর, ২০২১। রয়টার্স ফাইল ফটো।

গত চার মাসে (সেপ্টেম্বর–ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি অনেক বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রধান কারণ হলো কম দাম ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বেসরকারি খাতের চেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্র সয়াবিন রপ্তানি কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ টন সয়াবিন আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১০ শতাংশ বেশি।

নতুন বিপণন বছর শুরুর প্রথম ১১ সপ্তাহেই এই আমদানি বেড়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিপণন বছর ধরা হয়।

চলতি বছরের শুরুতে চীন পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের প্রতিবাদে কিছু সময়ের জন্য মার্কিন সয়াবিন কেনা বন্ধ করে দেয় বেইজিং। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের কাছে সয়াবিনের মজুত বেড়ে যায় এবং বাজারে দাম কমে যায়।

অবশ্য অক্টোবরে নতুন বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে চীন আবার সয়াবিন কেনা শুরু করে। কিন্তু তার আগেই বাংলাদেশি আমদানিকারকেরা কম দামের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সয়াবিন কিনে নেয়।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত মার্কিন তুলা, গম ও তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য, এ বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তবে দীর্ঘ আলোচনার পর গত আগস্টে তা কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনে যুক্তরাষ্ট্র।

সাম্প্রতিক কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য অনেক বেড়েছে। তবে বাণিজ্যের ভারসাম্য এখনো বাংলাদেশের পক্ষেই বেশি। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, আর বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

যুক্তরাষ্ট্র সয়াবিন রপ্তানি কাউন্সিলের (ইউএসএসইসি) প্রধান নির্বাহী জিম সাটার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসা সবচেয়ে বড় কৃষিপণ্য হলো সয়াবিন ও সয়াবিনজাত মিল।

তিনি জানান, বাংলাদেশের শীর্ষ সয়াবিন প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও মিল আমদানিকারকেরা আগামী এক বছরে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সয়াবিন ও সয়াবিন মিল কেনার জন্য সম্প্রতি একটি আগ্রহপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) সই করেছে।

জিম সাটার এই চুক্তিকে 'একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক' হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, 'এই চুক্তির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ইউএসএসইসির সঙ্গে কাজ করছে, যেন কাঁচামাল সংগ্রহের মান উন্নত হয়, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ে এবং বাংলাদেশে প্রোটিন খাত আরও শক্তিশালী হয়।'

বাংলাদেশ বছরে প্রয়োজনীয় সয়াবিনের মাত্র প্রায় ৭ শতাংশ নিজে উৎপাদন করে। বাকি অংশ আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।

জিম সাটার বলেন, দেশে এখন বড় ও আধুনিক সয়াবিন প্রক্রিয়াজাত শিল্প আছে, যা দেশের বেশিরভাগ সয়াবিন মিল ও তেলের চাহিদা মেটায়। এছাড়া বাংলাদেশে সয়াবিন ও সয়াবিন মিল আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই, তাই বাণিজ্য সহজ ও স্থিতিশীল।

২০২৩–২৪ বিপণন বছরে বাংলাদেশের মোট সয়াবিন আমদানির ৩২ শতাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আর সয়াবিন মিল আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ছিল ৩ শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক চুক্তির ফলে এই হার দ্রুত বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, গত ছয়–সাত মাসে বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে সয়াবিন আমদানি কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকেছে।

তিনি জানান, বর্তমানে মার্কিন সয়াবিনের দাম টনপ্রতি ৪৮৫ থেকে ৪৯০ ডলার, যা ব্রাজিলের সয়াবিনের তুলনায় প্রায় ১০ ডলার কম। তবে পরিবহন খরচ প্রায় ১৫ ডলার বেশি।

ডেল্টা অ্যাগ্রোফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, প্রতিযোগিতামূলক দামই এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বেসরকারি খাত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমিরুল হক বলেন, 'আমরা সরকারের নীতিগত সহায়তা চাই, যেন দেশের জন্য আরও বেশি অবদান রাখতে পারি।

'আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমানোর চেষ্টা করছি,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia laid to eternal rest

Buried with state honours beside her husband Ziaur Rahman

8h ago