এজেন্ট ব্যাংকিং: প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে যাচ্ছে প্রবাসী আয়

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় সময়োপযোগী অবদান রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং। বিশেষ করে এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে প্রবাসী আয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন সময়ে এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা প্রবাসী আয় এসেছে।

এটি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। যার মধ্যে বিপুল পরিমাণ, প্রায় ৯০ শতাংশ প্রবাসীয় আয় গেছে গ্রামীণ এলাকায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোট এজেন্টভিত্তিক প্রবাসী আয় বিতরণের ৯০ শতাংশের বেশি পরিচালনা করেছে তিনটি ব্যাংক।

এপ্রিল-জুন সময়ে এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসার শীর্ষে ছিল ইসলামী ব্যাংক। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ডাচ-বাংলা ব্যাংক এবং তৃতীয় স্থানে ব্যাংক এশিয়া।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এজেন্ট ব্যাংকিং ধীরে ধীরে একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠছে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও ব্যাংকিংসেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে প্রবাসী আয় পৌঁছে দিতে সবয়চেয়ে কার্যকর চ্যানেল হয়ে উঠেছে।

মূলত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচলিত ব্যংকিং ব্যবস্থার বাইরে নিরাপদ আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে বিকল্প হিসেবে ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সূচনা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'এটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়; দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে মৌলিক পরিবর্তনের প্রতিফলন। এজেন্ট ব্যাংকিং এখন আর পরীক্ষামূলক প্রকল্প নয়, এটি মূলধারার প্রবাসী আয় বিতরণ চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং প্রত্যন্ত এলাকার পরিবারগুলোকে ক্ষমতায়ন করছে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নকে ত্বরান্বিত করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামীণ আর্থিক কাঠামোতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে এবং বৈধ ও নিরাপদ পথে প্রবাসী আয় দেশে আনতে সরকারের প্রচেষ্টায় অবদান রাখছে।'

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এপ্রিল-জুন সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা মোট প্রবাসী আয়ের ৫৫ দশমিক ০৮ শতাংশ বা ১ দশমিক ০১ লাখ কোটি টাকার বেশি বিতরণ করেছে। দ্বিতীয় স্থানে ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসি প্রায় ৫১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা এবং তৃতীয় স্থানে ব্যাংক এশিয়া পিএলসি ১৪ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের প্রযুক্তিগত যোগাযোগ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তারের কারণে এ খাতে তাদেরকে শীর্ষে রেখেছে।

'অন্যদিকে, ইসলামী ব্যাংকের প্রতি প্রবাসী কর্মীদের আস্থা তাদের ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে রেখেছে,' বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'এই প্রবৃদ্ধির প্রভাব কেবল আর্থিক নয়—প্রবাসী আয় বহু গ্রামীণ পরিবারের আর্থিক মেরুদণ্ড। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত ও সহজ অর্থ পাওয়া মানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতে দ্রুত বিনিয়োগ।'

এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট মূলত স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়। তারা পিওস ডিভাইস ও মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করে মিনিটের মধ্যে গ্রাহকের কাছে প্রবাসী আয় পৌঁছে দেন। এতে লেনদেন নিরাপদ হয়, মধ্যস্বত্বভোগীর প্রয়োজন হয় না এবং অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমে।

ঘরে ঘরে নগদ অর্থ

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার শামেরগাঁও গ্রামের ৬০ বছর বয়সী বিবি হাজরা বলেন, 'সরকার প্রবাসী আয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়, আর আমাকে ব্যাংক শাখায় যেতে হয় না।'

তার তিন ছেলে কাতার, দুবাই ও ওমানে কাজ করেন এবং আনুষ্ঠানিক ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠান। তিনি ফোনে পিন পাওয়ার পর স্থানীয় এজেন্ট ব্যাংকিং এজেন্টকে দেখান। তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যে অর্থ ও প্রণোদনা পান।

তার ভাষ্য, 'এখন আর দূরে যেতে বা লাইনে দাঁড়াতে হয় না।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলো তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কে ডিজিটাল অবকাঠামোয় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। মোবাইল অ্যাপস, বায়োমেট্রিক ও নিরাপদ লেনদেন এখন অনেক আউটলেটেই চালু আছে।

আউটলেটগুলোতে সাধারণত ট্যাবলেট, বায়োমেট্রিক স্ক্যানার এবং সেফ থাকে—যা এজেন্ট আউটলেটকে প্রচলিত শাখার বিকল্প ছোট শাখায় পরিণত করেছে।

প্রতিটি প্রবাসীয় আয় লেনদেনে এজেন্ট আউটলেট ৫৩ টাকা সেবামূল্য পায়। ব্যাংক এশিয়া ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আউটলেট প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করে।

যদিও এ খাত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবুও কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ৩০টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার লাইসেন্সপ্রাপ্ত হলেও রেমিট্যান্স বিতরণে কয়েকটি ব্যাংক প্রভাবশালী অবস্থানে আছে।

প্রতিবেদন আরও বলছে, এ খাতে নারীরা ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক সেবা প্রাপ্তিতে এখনও পিছিয়ে আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Only one agreement under Indian line of credit cancelled: Foreign adviser

Touhid says several agreements mentioned in social media discussions 'don't even exist'

1h ago