অ্যালকোহলে কেরুর লাভ ১০০ কোটি টাকা, চিনিতে লোকসান

ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বিক্রিতে রের্কড করেছে ৮৩ বছরের পুরনো দেশের একমাত্র সরকারি অ্যালকোহল উৎপাদন প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। কোম্পানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মোট বিক্রি ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এ বছর কেরু শুধু ৩৬৭ কোটি টাকার অ্যালকোহল বিক্রি করেছে। যেখানে লাভ হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি। গত বছর এই ইউনিট থেকে লাভ ছিল প্রায় ৭০ কোটি টাকা।

তবে কেরুর চিনি উৎপাদনে লোকসান অব্যাহত আছে। যদিও এ বছরের লোকসানের পরিমাণ এখনো নিরূপণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই ইউনিটে লোকসান ছিল ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

কেরু সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫০ শতাংশেরও বেশি বাড়ে কেরুর উৎপাদিত অ্যালকোহলের বিক্রি। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।

কেরু কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার ১০ লাখ প্রুফ লিটার অ্যালকোহল বেশি বিক্রি হয়েছে। মোট ৯টি ব্র্যান্ডের অ্যালকোহল প্রতি মাসে গড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার কেস বিক্রি হয়েছে। ব্র্যান্ডগুলো হলো- ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রামে ও ওল্ড রাম। এগুলো ৭৫ মিলিলিটার থেকে শুরু করে ৭৫০ মিলিলিটারের বোতলে বাজারজাত করে কেরু। একটি কেসে ৭৫০ মিলিলিটারের ১২টি, ৩৭৫ মিলিলিটারের ২৪টি ও ১৭৫ মিলিলিটারের ৪৮টি এবং ৭৫ মিলিমিটারের ১২৫টি বোতল থাকে।

দেশে বর্তমানে বিদেশি মদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় কেরুর অ্যালকোহলের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। গত বছর শুল্ক ফাঁকি রোধে অ্যালকোহল আমদানিতে নজরদারি বাড়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে বৈধপথে হ্রাস পায় অ্যালকোহল আমদানি। তাই বিদেশি অ্যালকোহলের সংকট দেখা দেয় দেশের অনুমোদিত বারগুলোতে। তারপর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে দেশে উৎপাদিত অ্যালকোহলের চাহিদা। সেই চাহিদা পূরণে উৎপাদন বাড়ায় কেরু। এতে কেরুর উৎপাদিত অ্যালকোহল বিক্রি বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে মুনাফাও।

আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য বর্তমানে ৯টি ব্র্যান্ডের আওতায় ১০ লাখ ৮০ হাজার প্রুফ লিটার অ্যালকোহল, ২৬ লাখ লিটার দেশি স্পিরিট ও ৮ লাখ লিটার ডিনেচার্ড স্পিরিট উৎপাদন করে কেরু। অ্যালকোহলের পাশাপাশি ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সার, চিনি ও গুড়ের মতো অন্যান্য পণ্যও উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি।

কেরুর অ্যালকোহল উৎপাদনের প্রধান উপাদান আখের গুড়। গুড়ের সঙ্গে ইস্ট প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় অ্যালকোহল।

কেরুর ডিস্টিলারি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ফিদাহ হাসান বাদশা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসব পণ্যের বাইরেও বর্তমানে কেরুতে জৈবসার উৎপাদিত হয়, যা একটি লাভজনক ইউনিট।'

কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেরুর উন্নয়নে ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হবে এবং উৎপাদন সক্ষমতাও দ্বিগুণ হবে।'

'বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দর্শনায় কেরুর ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। এ ছাড়া, পাবনার রূপপুর, কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় একটি করে বিক্রয়কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও রামুতে একটি করে ওয়্যারহাউস নির্মাণের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি', যোগ করেন তিনি।

মোশাররফ হোসেন বলেন, 'সারাদেশে বর্তমানে ১৩টি ওয়্যারহাউস ও ৩টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে কেরুর। এরইমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কেরুর ২টি নতুন বিক্রয়কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে। বিক্রয়কেন্দ্রগুলো পরিচালনার জন্য পর্যটন করপোরেশনের সঙ্গে ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর সবচেয়ে বেশি অ্যালকোহল বিক্রি হয়েছে ঢাকা ও শ্রীমঙ্গল ওয়্যারহাউসে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবে কেরু।' 

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body being taken to Manik Mia Avenue for janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago

Farewell

10h ago