পোশাক খাতে বাংলাদেশের দক্ষতা চীনা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে

পোশাক খাতে বাংলাদেশের দক্ষতা চীনা বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে
গতকাল ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় সুতা, ফ্যাব্রিক এবং ডেনিম পণ্যের প্রদর্শনীতে ক্রেতারা পণ্য দেখছেন। ছবি: এসকে এনামুল হক

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অর্ডার বাড়ছে। এতে বোঝা যায়, তৈরি পোশাক পণ্যের শীর্ষ সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হচ্ছে। ফলে, চীনা টেক্সটাইল ও পোশাক উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে আশাবাদী এবং আগ্রহী হচ্ছেন।

বাংলাদেশের বস্ত্র ও গার্মেন্টস খাতে ব্যবহৃত কাপড়, সুতা, রাসায়নিক, রং ও মূলধনী যন্ত্রপাতির উচ্চ চাহিদা আছে। এই চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের বৃহত্তম সরবরাহকারীতে পরিণত হয়েছে চীন।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, চীন থেকে ফেব্রিক্সসহ প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা আরও বাড়ছে, কারণ স্থানীয় তাঁতিরা বোনা কাপড়ের চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ পূরণ করতে পারে। বাকি ৬০ শতাংশ মূলত চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়।

এদিকে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনার মধ্যে চীনে দক্ষ শ্রমিকের অভাবে দেশটিকে তৈরি পোশাকের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। তাই চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে বিনিয়োগ করছেন।

একই সময়ে, চীনের কাপড় ব্যবসায়ীরা রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। কারণ বিশ্বব্যাপী খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে অর্ডার বাড়ছে।

তাই রাজধানীর বসুন্ধরা (আইসিসিবি) ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২১তম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন অ্যান্ড ফেব্রিক শো এবং ষষ্ঠ ডেনিম বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোতে চীনের বস্ত্র ও পোশাক খাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে।

চীনের সিইএমএস গ্লোবাল ও সিসিপিআইটি-টেক্সট যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে, যেখানে ১৫টি দেশের ৪১০টি কোম্পানি টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস পণ্য প্রদর্শনে ৫৫০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। আগামী ৯ মার্চ পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন।

মংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে কারখানা থাকা পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জিনলাইটের মহাব্যবস্থাপক ইয়ং ঝাং বলেন, 'ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৩ সাল ব্যবসার জন্য ভালো ছিল না। এখন বাংলাদেশে প্রচুর অর্ডার আসছে এবং অদূর ভবিষ্যতে অর্ডার আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।'

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক, রেইনওয়্যার, অ্যাক্টিভওয়্যার ও জ্যাকেটের চাহিদা মেটাতে ২০১৮ সালে শতভাগ চীনা বিনিয়োগ নিয়ে কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন ইয়ং ঝাং। বর্তমানে কারখানাটি বছরে ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে।

টপ ওয়ান ডাউন অ্যান্ড ফেদার কোম্পানি লিমিটেডের বিক্রয় ব্যবস্থাপক মেলোডি ঝৌ বলেন, তাদের কারখানায় পালকের তৈরি উচ্চমানের জ্যাকেটের চাহিদা বাড়ছে।

তিনিই প্রথম বাংলাদেশে এ ধরনের পণ্যের পরিচয় করিয়ে দেন এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে অনেক পোশাক কারখানা আছে এবং এখানে ব্যবসার সুযোগ বেশি।'

গত নয় বছর ধরে বাংলাদেশে ভিসকস বিক্রি করা চীনা উদ্যোক্তা আইলিনও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

তিনি বলেন, 'বিক্রি ভালো এবং চাহিদা বাড়ছে।'

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা আছে বাংলাদেশে। যা এই খাত ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে এবং ক্রেতাদের আস্থা বাড়িয়েছে।

তিনি বলেন, '২০২৪ আমাদের জন্য খুব ভালো একটি বছর হবে, কারণ খুচরা বিক্রেতা এবং ব্র্যান্ডগুলো থেকে অনেক অর্ডার আসছে।'

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ। যা এ খাতে বাংলাদেশের শক্তিমত্তাকে তুলে ধরে।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আমিন হেলালী বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর চীন থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি কাপড় আমদানি করে। তাই চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

3h ago