৮ মাসে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ

প্লাস্টিক পণ্য
স্টার ফাইল ফটো

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও প্রতিযোগিতামূলক দামে সরবরাহের পাশাপাশি নতুন বাজারে চালান পাঠানোয় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি ১৭ শতাংশ বেড়ে ১৬ কোটি ২০ লাখ ডলার হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের যেকোনো বছরের একই সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

মূলত যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত ও নেপালে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করা হয়।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গবেষণায় দেখা গেছে, নানা ধরনের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করলেও প্যাকেজিং পণ্যের বেশিরভাগই টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয়ভাবে তৈরি প্লাস্টিক পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম এ খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছে।'

ডলার সংকট ও কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে অসুবিধাসহ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও এই খাত রপ্তানি অব্যাহত রাখতে পেরেছে।

শামীম আহমেদ আরও বলেন, 'দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বমানের প্লাস্টিক তৈরি করছে। এটি বিদেশিদের বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী করছে।'

সরকার যদি বিদেশে মিশনের মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন বাজার খুঁজতে সহায়তা করে তাহলে রপ্তানি আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা বাধা মুক্ত হওয়ায় প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। বড় জাহাজ পাওয়া যাওয়ায় এটি চালান বাড়াতে সহায়তা করছে।'

'পণ্য পরিবহন খরচ প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও কমতে পারে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গত অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আশাব্যঞ্জক ছিল না। ধারণা করছি, পশ্চিমে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় এ বছর উন্নতি হবে।'

ডলারের বেশি দামের কারণে উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা কমেছে বলে জানান তিনি।

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'পণ্যের দাম বাড়াতে না পারলেও মুনাফা বাড়াতে আমরা উৎপাদনে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।'

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে পলিওলেফিন উৎপাদন সুবিধা না থাকলেও বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১৪২টির বেশি পণ্য তৈরি করছে।

বাংলাদেশ প্রধানত ফিল্ম প্লাস্টিক, গৃহস্থালি সামগ্রী ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজ রপ্তানি করে।

সামগ্রিকভাবে রপ্তানি বাড়লেও সব প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা নিতে পারেনি। আকিজ বশির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আকিজ বিয়াক্স ফিল্মস লিমিটেড রপ্তানি বাড়াতে পারেনি।

আকিজ বিয়াক্স বাই-অক্সিয়ালি ওরিয়েন্টেড পলিপ্রোপিলিন, বাই-অক্সিয়ালি ওরিয়েন্টেড পলিথিলিন টেরেফথালেট, কাস্ট পলিপ্রোপিলিন, ফিল্ম ও স্ট্রেচ ফিল্ম তৈরি করে।

আকিজ বশির গ্রুপের ডিরেক্টর অব অপারেশনস হোসেন ইরাজের অভিযোগ—বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সমর্থন না পাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান রপ্তানিতে সমস্যা পড়ছে।

তিনি বলেন, 'সরকার এ খাতের রপ্তানি বাড়াতে কর মওকুফ করতে পারে।'

'আন্তর্জাতিক বাজারে এই খাতকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে দেশীয় বাজারকে কাজে লাগানো যেতে পারে,' উল্লেখ করে হোসেন ইরাজ বলেন, 'স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি সুরক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা আরও কম খরচে পণ্য উৎপাদন করতে পারে। রপ্তানি বাজারে আরও কম দাম দিতে পারে।'

বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সের আওতায় আমদানি করা পণ্য স্থানীয় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, যা আকিজ বিয়াক্সের মতো আংশিক রপ্তানিমুখী কারখানার জন্য ক্ষতিকর বলে জানান তিনি।

তিনি দেশীয় বাজারে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর জোর দেন। কেননা, এটি স্বাভাবিকভাবে রপ্তানি বাড়িয়ে তুলবে।

তিনি জানান, সরকার এখন প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে আট শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। গত অর্থবছরে এটি ছিল ১০ শতাংশ।

বিপিজিএমইএর হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের বাজারে প্লাস্টিক পণ্য বিক্রি ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটি ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

2h ago