খাবার আছে একদিনের, ওয়াকিটকির চার্জও শেষ: ড্রোন হামলায় বিধ্বস্ত জাহাজের বাংলাদেশি নাবিক

ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংকারে বাংলাদেশি নাবিক প্লাবন। ছবি: সংগৃহীত

কৃষ্ণ সাগরে ড্রোন হামলায় বিধ্বস্ত তেলের ট্যাংকারের বাংলাদেশি নাবিকসহ ১০ ক্রু সদস্য গত ৬ দিন ধরে বুলগেরিয়ার উপকূলের কাছে চরম দুর্দশায় আছেন।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে বুলগেরিয়ান কোস্টগার্ড এবং জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান কেউই তাদের উদ্ধারে সাড়া দেয়নি।

আজ রোববার জাহাজের বাংলাদেশি চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুল ইসলাম প্লাবন হোয়াটসঅ্যাপে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনো কেউ আমাদের উদ্ধার করতে আসছে না। আর এদিকে আবহাওয়া খুবই খারাপ।'

বৃষ্টি ও তুষারপাতে খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তারা চরম খাদ্য সংকটে পড়েছেন বলেও জানান।

ভয়েস মেসেজে প্লাবন জানান, 'যে খাবার আমরা নিয়ে এসেছিলাম, তা শেষ হয়ে গেছে। স্টোর ভেঙে আরও কিছু খাবার পেয়েছি, তাও মাত্র একদিন চলবে।'

গত ২৮ নভেম্বর এমটি কায়রোস জাহাজে ড্রোন হামলার পর প্রথমে তাদের উদ্ধার করে তুরস্কের কোস্টগার্ড। কিন্তু সে যাত্রায় উদ্ধার পেলেও ভাগ্য সহায় হয়নি প্লাবনসহ ১০ জনের।

ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির চীনা মালিকপক্ষ সেটিকে উদ্ধারে একটি টাগবোট ভাড়া করেছিল। সেই টাগবোটে করে গত ৩০ নভেম্বর তারা ইস্তাম্বুল থেকে ৩০ নটিক্যাল মাইল দূরে গভীর সাগরে অবস্থান করা এমটি কায়রোসের কাছে যান তাদের উদ্দেশ্য ছিল জাহাজটিকে গভীর সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা।

এরপর তারা জাহাজে উঠে পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করেন। তারপর তারা জাহাজে থাকা অবস্থাতেই টাগবোটটি জাহাজটিকে টেনে ইস্তাম্বুলের বহির্নোঙ্গর এলাকায় আসে।

কিন্তু, জাহাজটি সেখানে নোঙর করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এরইমধ্যে টাগবোটটি চলে যায়। এরপর বিপদের শুরু।

প্লাবন জানান, 'ড্রোন হামলায় জাহাজের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোবাইল ফোনগুলোর চার্জও শেষ হয়ে যাচ্ছে।'

অডিও বার্তায় তিনি বলেন, 'আমরা একটি মাত্র ওয়াকিটকি দিয়ে ক্রমাগত বুলগেরিয়ান কোস্টগার্ড এবং জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। সেটির ব্যাটারিও প্রায় শেষ।'

আবহাওয়ার কারণে বুলগেরিয়ান কোস্টগার্ড হেলিকপ্টার বা বোট পাঠাতে অক্ষম বলে জানিয়েছে।

তবে, মালিকপক্ষ গতকালই প্রথম সাড়া দিয়ে জানিয়েছে যে আবহাওয়ার উন্নতি না হলে তারা বুলগেরিয়ান কোস্টগার্ডের মাধ্যমে উদ্ধারকারী দল পাঠাতে পারবে না।

২৫ বছর বয়সী নাবিক প্লাবন নরসিংদীতে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলছেন এবং তিনি আবহাওয়া অনুকূল হওয়ার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন গতকাল ডেইলি স্টারকে জানান, আটকে পড়া নাবিকদের উদ্ধারের জন্য তারা তুরস্ক ও বুলগেরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

গত ২৮ নভেম্বর বিকেলে তুরস্কের উপকূলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে দুটি তেল ট্যাংকারে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেনীয় নৌবাহিনী। এর মধ্যে এমটি কায়রোসের ৫ নাবিকের মধ্যে ৪ জন ছিলেন বাংলাদেশি। হামলার পরপরই তুর্কি কোস্টগার্ড সব নাবিককে উদ্ধার করে। পরে প্লাবনসহ ১০ জন আবার টাগবোটে করে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংকারে যান।

প্লাবন জানান, হামলার পর উদ্ধার বাকি ৩ বাংলাদেশি নাবিক বর্তমানে উড়োজাহাজে দেশে ফিরছেন।

হামলার সময় এমটি কায়রোস খালি ছিল এবং চীনের হয়ে অপরিশোধিত তেল আনতে মিশরের সুয়েজ বন্দর থেকে রাশিয়ার নভোরোসিস্ক বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Victory Day: Nation honours Liberation War martyrs

The government has taken extensive programmes to celebrate the day

1h ago