আবারও ব্যাংক ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে

আবারও ব্যাংক ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে

ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় মধ্যে আগামী অর্থবছরে টানা দ্বিতীয় বারের মতো ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়া ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থায়ন ঘাটতি মেটাতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ১.২৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। চলতি অর্থবছরে যার পরিমাণ ১.০৬ লাখ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লক্ষ্যমাত্রাটি সম্প্রসারণমূলক এবং এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে। 

জাহিদ হোসেন আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ব্যাপক হারে ঋণ নেওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশ থেকে কমেনি।

চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১০ মে পর্যন্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৭৮ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ৬৭ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা।

জাহিদ হোসেন বলেন, 'যদি লক্ষ্যমাত্রা হয় মুদ্রাস্ফীতি ৯ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, তাহলে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম ঋণ নিতে হবে।'

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের আনুমানিক বাজেট ধরা হয়েছে ৭.৬১ লাখ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি থাকবে জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ৫.৫ শতাংশের নিচে থাকবে এবং ঘাটতির প্রায় ৩ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ঋণের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ১.৫০ লাখ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলেও জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র।

ব্যাংকিং ব্যবস্থার পাশাপাশি, সরকার সঞ্চয়পত্রের মতো নন-ব্যাংকিং দেশীয় উৎস থেকেও ঋণ নেয়। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নেওয়ার ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

তবে, আগামী অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বলে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র। 

আয়কর রিটার্ন দাখিলসহ নতুন কিছু শর্ত আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে যাওয়ায় এ লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে এবং একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৯ মাসে (২২ জুলাই থেকে ২৩ মার্চ) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৪ হাজার ১৬১ কোটি টাকা কমেছে।

মূল পরিমাণ থেকে মোট বিক্রয় বাদ দিয়ে নেট বিক্রয় গণনা করা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানান, আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ কর্মসূচিতে (চলতি বছরের শুরুতে অনুমোদন দেওয়া হয়) সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর শর্ত দেওয়া হয়। 

এসব কারণে সরকার ব্যাংক থেকে আরও বেশি টাকা ধারের পরিকল্পনা করছে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফের শর্ত যৌক্তিক, তার কারণ সুদ পরিশোধে সরকারি ব্যয় অনুপাতিক হারে বেড়েছে।

আগামী অর্থবছরে সরকারের সুদ পরিশোধের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। চলতি অর্থবছরে যেটার পরিমাণ ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার কীভাবে ঋণ নেবে তার ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, 'যদি সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি ঋণ নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এর পাশাপাশি, ডলার সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ সংকীর্ণ করবে।'

তিনি বলেন, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর চাপ অনেকটাই কমে যাবে।

'আগামী অর্থবছরে কম-অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলো থেকে তহবিল প্রত্যাহার সরকারের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ কমানোর আরেকটি উপায় হতে পারে' বলেন জাহিদ হোসেন।
 

Comments

The Daily Star  | English
child victims of July uprising Bangladesh

Child victims of July uprising: Of abandoned toys and unlived tomorrows

They were readers of fairy tales, keepers of marbles, chasers of kites across twilight skies. Some still asked to sleep in their mother’s arms. Others, on the cusp of adolescence, had just begun to dream in the language of futures -- of stethoscopes, classrooms, galaxies. They were children, dreamers of careers, cartoons, and cricket.

11h ago