সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ ৯৩.৭ শতাংশ কমেছে

সুইজারল্যান্ড, সুইস ব্যাংক, সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক, অর্থপাচার,
রয়টার্স ফাইল ফটো

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বা সুইস ব্যাংকে গত এক বছরে বাংলাদেশি নাগরিক ও ব্যাংকগুলোর জমা করা অর্থের পরিমাণ ৯৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ৫ কোটি ৫৩ লাখ সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়িয়েছে।

অথচ, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তির জমা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের জমা থাকা ৫ কোটি ৫৩ লাখ সুইস ফ্রাঁর মধ্যে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ব্যক্তি পর্যায়ের। যা ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থ জমার পরিমাণ বছরে ৩৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই অর্থ কার কিংবা বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে কি না সেই তথ্য উল্লেখ করেনি এসএনবি। কিন্তু, জমা অর্থের একটি অংশ হয়তো বাংলাদেশের বাইরে বৈধভাবে অর্জিত আয় হতে পারে।

২০২২ সালের শেষে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর মাত্র ১৯.৬ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ ছিল, যা ৮৪৪.৮ মিলিয়ন থেকে অনেক কম। এর অন্যতম কারণ দেশের ডলার ঘাটতি। ফলে, ব্যাংকগুলো বিদেশি লেনদেন নিষ্পত্তিতে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে জমা অর্থ ব্যবহারে বাধ্য হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২৬ শতাংশ কমে ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছিল। ফলে, কর্তৃপক্ষকে ডলার সরবরাহ করতে বাধ্য হয়।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ২০১৬ সাল থেকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে শুরু করে এবং তখন ছিল ৪৭.৬ মিলিয়ন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'যেহেতু বৈধ উপায়ে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই এসব গ্রাহকের আমানতের সিংহভাগ অবৈধ উপায়ে যেমন ভুল চালান, হুন্ডি ইত্যাদি বাণিজ্যিক অর্থপাচারের মাধ্যমে হতে পারে বলে ধারণা করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এই উচ্চ বৃদ্ধির একটি কারণ আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং চলমান অর্থনৈতিক সংকটে বৈদেশিক মুদ্রার প্রতি আগ্রহ তৈরি।'

'কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, অর্থপাচার শনাক্ত বা এভাবে পাচার করা অর্থ ও সম্পদ ফেরত পাঠানোর হয় এমন উদাহরণ নেই। আর কোনো অপরাধ অনিয়ন্ত্রিত হলে তা নিরবচ্ছিন্নভাবে বাড়তে বাধ্য।'

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'পাচার করা অর্থ সফলভাবে প্রতিরোধ ও ফিরিয়ে আনতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া আছে এবং সেই রোডম্যাপও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অজানা নয়।'

গত বছরের ১০ আগস্ট ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেছিলেন, 'সুইস ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কখনো তথ্য চায়নি।'

তিনি আরও বলেছিলেন, 'সুইস সরকার চায় না কোনো দুর্নীতি বা পাচার করা অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা হোক। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ রাখার বিষয়ে উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশের সরকার আলোচনা করতে পারে।'

পরে সরকার কেন তা করেনি তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, 'চুয়ার্ডের বক্তব্য সত্য নয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য চেয়ে অনুরোধ করলেও সুইস কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করেনি।

অর্থপাচার, সন্দেহজনক লেনদেন ও নগদ লেনদেনের প্রতিবেদন তদন্তের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট জানিয়েছে, তারা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে অর্থ জমা করা ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়েছে।

কিন্তু, সুইজারল্যান্ডের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট জানিয়েছে, তাদের কাছে মাত্র একজনের তথ্য আছে।

শুধু বাংলাদেশ নয়, ২০২২ সালে সুইস ব্যাংকে ভারত ও পাকিস্তানের আমানতও কমেছে।

২০২১ সালের তুলনায় ভারত থেকে আমানত ১১.২ শতাংশ কমে ৩.৪ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ হয়েছে। পাকিস্তানের ৪৪.৯ শতাংশ কমে ৩৮৮.৭ মিলিয়ন হয়েছে।

তবে, অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার আমানত গত বছর ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৬৬.৫ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ হয়েছে। নেপালের আমানত ৬১.৯ শতাংশ বেড়ে ৪৮২.৫ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ হয়েছে।

সুইজারল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে সারা বিশ্বের ধনীদের কর ফাঁকি দিয়ে অর্থ জমা রাখতে পছন্দের গন্তব্য।

Comments

The Daily Star  | English

Ignore Gen Z at your peril, experts tell Nepal govt

Prominent personalities warn government and parties not to dismiss the demands of youths

2h ago