দেশি নয়, বিদেশি মেসেজিং অ্যাপেই ভরসা

মেসেজিং অ্যাপ
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

স্মার্টফোনে বাংলায় মেসেজ টাইপ করেন অনেকেই। তবে ইউজার ইন্টারফেস দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় যে তারা দেশি মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করছেন না।

দেশে মোবাইলে আর্থিক সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি প্রায় সব ব্যাংকের ডিজিটাল সেবা জনপ্রিয়তা পেলেও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তৈরি মেসেজিং অ্যাপগুলোর ক্ষেত্রে একই কথা বলা যায় না।

২০২০ সালের শুরুর দিকে, বার্তা পাঠানো ও ভয়েস কলের দেশি অ্যাপ চালু হয়। 'কথা' নামের অ্যাপটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেসময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছিলেন, 'এটি হবে বাংলাদেশের ফেসবুক, পেপাল, নেটফ্লিক্স, টুইটার ও হোয়াটসঅ্যাপ।'

কিন্তু, এখন প্রায় কারোরই হয়ত অ্যাপটির কথা মনে নেই। গুগলের প্লে স্টোরে 'কথা'র ভালো রেটিং থাকলেও এটি দুই লাখেরও কম ডাউনলোড হয়েছে।

তবে 'কথা' টেকনোলজিসের চেয়ারম্যান মাহবুব জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৌশলগত কারণে অ্যাপটির প্রবৃদ্ধি কিছুটা স্থিতিশীল। আমরা অর্গানিক মার্কেটিংয়ের চেষ্টা করেছিলাম। গবেষণা ও উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন। আমরা বিনিয়োগকারী খোঁজার চেষ্টা করছি।'

এখনো পর্যন্ত অ্যাপটির নথিভুক্ত ব্যবহারকারীর সংখ্যা চার লাখ।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অসংখ্য ভার্সন আছে এমন অ্যাপের কপি করলে তা জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা কম। জনপ্রিয় অ্যাপ্লগুলো বিচিত্র, গ্রাহকবান্ধব ও উন্নত। বিশ্বব্যাপী সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা আছে। দেশি অ্যাপে এমনটি পাওয়া যায় না।'

'এ ছাড়া, বিদেশি অ্যাপগুলোর উন্নয়নে গবেষণা ও বিনিয়োগে ব্যাপকতার কারণে দেশি অ্যাপগুলো প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। একবার কোনো অ্যাপ জনপ্রিয়তা পেলে তা ডিঙানো কঠিন।'

সরকার নানা ধরনের যোগাযোগ অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিলেও সেগুলো ব্যাহারকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ।

সরকারি টাকায় তৈরি 'বৈঠক' বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় অ্যাপ জুমের মতো ভার্চুয়াল সভা ও ওয়েবিনারের ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফর্ম। এটি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। তবে সাড়া খুব কম।

সরকারি কর্মকর্তাদের বার্তা পাঠানো ও ফাইল আদান-প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকারের আইসিটি বিভাগ ভাইবারের মতো অ্যাপ 'আলাপন' ২০১৬ সালে চালু করে। আট বছর পর অ্যাপটি আর নেই।

সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, 'গোপনীয়তা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়, তবে তা বড় বিষয় নয়।'

দেশে বৈশ্বিক টেক জায়ান্টদের তৈরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও যোগাযোগ অ্যাপের ব্যবহার গত দশকে বেড়েছে। ব্যবহারকারীর দিক থেকে বাংলাদেশ সেগুলোর বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। ব্যবহারকারীর দিক থেকে দেশে শীর্ষ যোগাযোগ অ্যাপগুলো হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও ইমো।

তথ্য সংগ্রহ ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনে বিশেষজ্ঞ জার্মান অনলাইন প্ল্যাটফর্ম স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটি ৩০ লাখ। গত জানুয়ারি পর্যন্ত এটি বাংলাদেশকে শীর্ষ ১০ ফেসবুক-ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে স্থান দিয়েছে।

ফেসবুকের মেসেঞ্জারকে মেসেজিং, ভয়েস ও ভিডিও কলের জন্য আলাদা অ্যাপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

ম্যানেজমেন্ট ও অ্যানালিটিকস প্ল্যাটফর্ম নেপোলিয়নক্যাটের তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৩০ লাখের বেশি। মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটি ৭০ লাখ।

বাংলাদেশে কতজন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন জানতে চাইলে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা বলেছে, তারা দেশভিত্তিক তথ্য জানাতে পারে না।

কম ডেটা ব্যবহার, সহজ ও বিনামূল্যে ভয়েস-ভিডিও কলের কারণে ইমো বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেও বেশ জনপ্রিয়। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪০ লাখ নতুন ব্যবহারকারী ইমোর নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশে প্রতি মাসে ইমো ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটি। দেশে মোট ২০ কোটি ব্যবহারকারীর চার ভাগের এক ভাগ। ২০২৩ সালে এ দেশে ইমো ব্যবহারকারীরা ৯১ দশমিক ছয় বিলিয়ন অডিও ও ভিডিও কল করেছেন। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক আট বিলিয়ন কল ছিল আন্তর্জাতিক।

এই অ্যাপের মাধ্যমে গত বছর বাংলাদেশ থেকে গ্রুপ কল হয়েছে ৬৭ কোটি ৬০ লাখ। আন্তর্জাতিক কলের জন্য শীর্ষ পাঁচ দেশ ছিল সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, মালয়েশিয়া ও কাতার।

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

5h ago