কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত থাকতে পারে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এনবিআর, কালো টাকা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি,

সরকার আসন্ন অর্থবছরে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে যাচাই-বাছাই ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সাধারণ ক্ষমার সুযোগ বহাল রাখতে পারে। যদিও অর্থনীতিবিদ, পর্যবেক্ষক, ব্যবসায়ী এমনকি একাধিক সংসদ সদস্য এই বিধানের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অর্থবিলে এ বিধান রাখার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।

তাই সংসদ সদস্যরা আপত্তি না তুললে শনিবার বিলটি সংসদে পাস হতে পারে। এরপর চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা এ সুবিধা নিতে পারবেন।

নতুন বিধান অনুযায়ী, কোনো করদাতা ফ্ল্যাট ও জমির মতো স্থাবর সম্পত্তির জন্য নির্ধারিত হারে কর প্রদান করলে এবং নগদ, সিকিউরিটিজ, ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয় স্কিমসহ অন্যান্য সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ বিধান উপস্থাপন করেন।

কিন্তু অর্থনীতিবিদ, পর্যবেক্ষক, ব্যবসায়ী এমনকি বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য এই বিধানের সমালোচনা করেছেন। তারা এটিকে অনৈতিক, অন্যায্য ও অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেন।

চলতি সপ্তাহে ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ জাতীয় সংসদে বলেন, 'আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলে কালো টাকার উৎস কেন যাচাই করা যাবে না?'

'সার্বভৌম সংসদ কীভাবে কালো টাকার পাচারকে বৈধতা দিতে পারে তা বোধগম্য নয়,' বলেন তিনি।

সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুমিল্লা-৭ আসনের প্রাণ গোপাল দত্ত, মানিকগঞ্জ-১ আসনের জাহিদ মালেক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুন নাহার বেগম সম্প্রতি সংসদে এই বিধানের সমালোচনা করেন।

গত ২৩ জুন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) অর্থমন্ত্রীকে এই সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে কেবল ব্যবসায়ী ও কোম্পানিকে সাধারণ ক্ষমার অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়, ব্যক্তিকে নয়।

এফবিসিসিআই বলছে, কোম্পানিগুলো কেবল এই সুযোগ দেওয়া যেতে পারে, যদি তাদের আয় আইন অনুযায়ী বৈধ হয়।

'তাহলে এ ধরনের ব্যবস্থা কর নীতির স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা রক্ষা করবে এবং কর প্রদানকারী সব কোম্পানির জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে,' বলছে এফবিসিসিআই।

এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সাধারণ ক্ষমাকে 'অনৈতিক বিধান' বলে অভিহিত করেছে।

টিআইবি বলছে, 'এটি দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতিও এই বিধানের সমালোচনা করেছে।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদ্যমান কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব সংশোধন করতে পারে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারে, তবে তাদের কিছু নতুন শর্ত পূরণ করতে হবে।'

বর্তমানে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা তাদের উৎপাদনের প্রথম দশ বছরে ২০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত কর ছাড় পান। প্রস্তাবিত বাজেটে রাষ্ট্র পরিচালিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য এই সুবিধা অব্যাহত রাখা হলেও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

এছাড়া সরকার সম্ভবত সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির অনুমতি দেয় এমন সুযোগ-সুবিধা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব রাখতে পারে। ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশের সংসদ সদস্যরা এই সুবিধা পেয়ে আসছে।

একইসঙ্গে চূড়ান্ত বাজেট প্রস্তাবে কিছু পণ্যের প্রস্তাবিত শুল্ক ও শুল্ক কাঠামো সংশোধন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Tug-of-war over water lily continues

The Election Commission and National Citizen Party remain locked in a heated debate over the party’s choice of electoral symbol, the water lily -- a dispute that began in June.

4h ago