কৃষকের জন্য স্মার্ট কার্ড চালুর পরিকল্পনা করছে সরকার

কৃষক, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প, আইএমইডি,
স্টার ফাইল ফটো | আলোকচিত্রী: মোস্তফা সবুজ

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ভর্তুকি ও অন্যান্য সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করতে কৃষকদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণের লক্ষ্যে সরকার একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে।

'কৃষক স্মার্ট কার্ড নীতি ২০২৫' খসড়ায় প্রোফাইল ও নিবন্ধন নম্বর সম্বলিত কৃষকদের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে জাতীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়াঁ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কৃষকের জন্য স্মার্ট কার্ড তৈরি ও বিতরণের প্রক্রিয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের মতোই হবে।

তিনি বলেন, 'প্রকল্পটি আগের সরকার শুরু করেছিল এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটি পর্যালোচনা করার পর খসড়া নীতি প্রস্তুত করা হয়েছে।'

এই কার্ডের মাধ্যমে কৃষকরা বীজ, সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ সংগ্রহ করতে পারবেন। পাশাপাশি ফসল উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য সহায়ক হবে এই কার্ড।

এছাড়া এই কার্ডটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যেমন ঋণ বিতরণ, টেকসই কৃষি চর্চার প্রসার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কৃষি পরামর্শ ও বাজার সংক্রান্ত তথ্য প্রদান।

সার্বিকভাবে এই কার্ড কৃষি উৎপাদনশীলতা ও খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'এটি একটি ভালো উদ্যোগ। তবে যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে সবসময় উদ্বেগ থাকে।'

তিনি বলেন, এই তথ্যভাণ্ডারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এবং কৃষকদের সরকারি সহায়তা বা ভর্তুকি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই কার্ড ব্যবহৃত হবে।

'যেমন—যখন সরকার ধান বা চাল ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করে, তখন অনেক কৃষক ভালো দামে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে এই কার্ড ব্যবহার করেন,' তিনি যোগ করেন।

তবে তিনি বলেন, কার্ড থাকলেই সমস্যা মিটবে না। পুরো ব্যবস্থাটি কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

এই কার্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকৃত কৃষককে যথাযথভাবে চিহ্নিত করা—তারা ছোট কৃষক, বড় কৃষক, মধ্যম কৃষক বা প্রকৃত কৃষক কিনা তা নিশ্চিত করা।

তিনি আরও বলেন, 'যারা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত, তাদের স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।'

'আমি যদি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করি, তবে বলব যে এই তথ্যভাণ্ডার অবশ্যই নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে,' তিনি বলেন।

তার ভাষ্য, 'এটি যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ হবে। তবে সমস্যা হলো, এটি একটি প্রকল্পভিত্তিক উদ্যোগ। ফলে, নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। যেমন¬—কৃষকের জমির মালিকানা পরিবর্তন হলে সেটিও নথিভুক্ত করতে হবে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ২৮ জানুয়ারি তাদের ওয়েবসাইটে নীতির খসড়াটি প্রকাশ করেছে এবং আজকের মধ্যে জনসাধারণের মতামত চেয়েছে।

এই নীতির প্রণয়ন পাঁচ বছর মেয়াদী 'কৃষি ও গ্রামীণ রূপান্তর কর্মসূচি (পুষ্টি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা)' এর অংশ, যা ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়।

এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে আনুমানিক সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। সরকার, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল যৌথভাবে এই অর্থ সরবরাহ করবে।

২০১৯ সালের কৃষি শুমারি অনুযায়ী, দেশে প্রায় এক কোটি ৬৯ লাখ কৃষি পরিবার রয়েছে।

বাংলাদেশের মোট ১৪ দশমিক তিন  মিলিয়ন হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৬১ দশমিক সাত শতাংশ আবাদযোগ্য।

২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাত দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১১ দশমিক তিন আট শতাংশ অবদান রেখেছে।

ওই বছরে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৪৫ দশমিক চার শতাংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

NBR activities disrupted as officials continue work abstention

This marks the ninth day of protests since the interim government issued the ordinance on May 12

1h ago