জুলাইয়ে ১২ মন্ত্রণালয়-বিভাগের এডিপি ব্যয় শূন্য

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, আইএমইডি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, এডিপি,

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই বাংলাদেশে উন্নয়ন ব্যয় সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে। অন্তত ডজনখানেক মন্ত্রণালয়-বিভাগ এই খাতে একটি টাকাও খরচ না করায় দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের গতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে মাত্র ১ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা খরচ করেছে—যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত ২ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকার মাত্র ০.৬৯ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর এটাই সবচেয়ে দুর্বল সূচনা। সেই অর্থবছরের জুলাইয়ে এডিপির মাত্র ০.৫৭ শতাংশ খরচ হয়েছিল।

আইএমইডির তথ্য থেকে আরও দেখা যায়, উন্নয়ন ব্যয় আগের বছরের তুলনায় ৪৪ শতাংশ এবং ২০২৩ সালের তুলনায় অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ৩ হাজার ৪৫৯ কোটি এবং ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল।

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ১২টি চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসের বরাদ্দ থেকে এক টাকাও খরচ করেনি।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ আরও কিছু মন্ত্রণালয়-বিভাগ রয়েছে এই তালিকায়।

সরকার ও নীতিনির্ধারকরা সতর্ক করেছেন, এভাবে ধীর সূচনা উদ্বেগজনক। কেননা, এডিপির অর্থ দিয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প চালানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কথা।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে বলেন, 'এটা ভালো লক্ষণ না। এ বছর কাজ দ্রুত এগোনো উচিত। গত বছরের অজুহাত এখন আর চলবে না।'

গত বছরের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে আন্দোলন ও অস্থিরতায় প্রকল্পগুলো ব্যাহত হয়েছিল।

এরপর পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে।

তারপরও পরিস্থিতি বদলায়নি। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, এর অন্যতম কারণ হলো, অনেক জায়গায় ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়নি এবং একাধিক প্রকল্প পরিচালক বদলি বা স্থানান্তরিত হয়েছেন।

তবে অর্থনীতিবিদরা সমস্যা দেখছেন আরও গভীর।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশে এডিপি বাস্তবায়নের যে সমস্যা, সেটা অর্থের ঘাটতির কারণে নয়, বরং দুর্বল পরিকল্পনা ও দক্ষ আমলার ঘাটতির কারণে। পেশাগত সক্ষমতা না থাকলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সময়েও প্রকল্প থমকে থাকে।'

নির্বাচিত সরকার না থাকাটাও একটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক সরকার না থাকার মানে হলো, আমলারা আর প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার চাপ অনুভব করছেন না। রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে আমলাদের ওপর চাপ তৈরি করত দ্রুত কাজ শেষ করতে। সেটা এখন নেই।'

তিনি সতর্ক করে বলেন, 'এর গুরুতর প্রভাব পড়ছে। এডিপি বাস্তবায়ন ধীর হলে কর্মসংস্থান, রাজস্ব ও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব পড়ে। উন্নয়ন ব্যয়ের বহুগুণ প্রভাব রয়েছে, যা পুরো সমাজের উপকার আসে।'

অনেক প্রকল্প পরিচালক পদ ছেড়ে দিয়েছেন। নতুন করে সেখানে নিয়োগের ক্ষেত্রের কাজ চলছে ধীর গতিতে। বেশ কয়েকজন ঠিকাদার—বিশেষ করে যাদের সঙ্গে পূর্ববর্তী সরকারের সম্পর্ক ছিল—মাঝপথে প্রকল্প ছেড়ে দিয়েছেন।

বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্প এর একটি বড় উদাহরণ। বিপুল অর্থ ব্যয় করা হলেও প্রকল্পটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ভোগান্তিতে রয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারাও।

অধ্যাপক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান প্রস্তাব করেন, প্রকল্প অনুমোদনের আগে বাস্তবায়নযোগ্যতা আরও কঠোরভাবে পরীক্ষা করা উচিত এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও এর ধারাবাহিকতা যেন থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, 'উন্নয়নকে রাজনৈতিকভাবে জিম্মি করা উচিত না।'

উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সব মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেয় এবং কোনো অজুহাত না দেখায়।

Comments

The Daily Star  | English
honor smartphone inside

How to build a smartphone

Smartphones feel inevitable in the hand, yet each one begins as a set of drawings, components and hypotheses. The journey from concept to finished device is a carefully sequenced collaboration between design labs, supplier networks and high-throughput assembly lines. In leading electronics hubs across Asia, that journey can take as little as days once a design is frozen and parts are on site.

3h ago