তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকরা ‘উপহার’ হিসেবে শেয়ার স্থানান্তর করছেন কেন?

সম্প্রতি তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক বা স্পনসরদের তাদের আত্মীয়দের কাছে উপহার আকারে শেয়ার স্থানান্তরের বেশকিছু উদাহরণ দেখা গেছে। কাজেই প্রশ্ন উঠছে, কেন তারা এত বিপুল পরিমাণ শেয়ার উপহার হিসেবে দিচ্ছেন এবং কেন এই পদ্ধতি আজকাল এত সাধারণ হয়ে উঠলো?
স্পনসর ও পরিচালকরা সাধারণত তাদের আত্মীয়দের কোম্পানির বোর্ডে আনতে শেয়ার উপহার দেন। বোর্ডে আসতে হলে একজন ব্যক্তির কাছে অন্তত ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হয়।
অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের অংশ হিসেবেও উপহার হিসেবে শেয়ার দেন।
বর্তমানে পরিচালকরা বেশ ঘন ঘন শেয়ার স্থানান্তর করছেন। কারণ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি শেয়ার স্থানান্তরের ওপর কর মওকুফ করেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থ আইন ২০২৪ এর মাধ্যমে, স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে এবং পিতামাতা বা সন্তানদের মধ্যে শেয়ারসহ সম্পত্তি হস্তান্তরের ওপর কর অব্যাহতি দিয়েছে। এ বছর ভাইবোনদের মধ্যে শেয়ারসহ কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের ওপর করমুক্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কর ছাড়ের সুযোগটি আরও বিস্তৃত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের স্পনসররা বিপুল সংখ্যক শেয়ার হস্তান্তর করেছেন।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের স্পনসর ও পরিচালকরা তাদের স্বামী বা স্ত্রী ও ভাইবোনদের কাছে ৫ কোটি ৩৩২ লাখ টাকার প্রায় ১১ কোটি ৭২ লাখ শেয়ার হস্তান্তর করেছেন।
ক্রাউন সিমেন্টের দুই স্পনসর পরিচালক তাদের পরিবারের সদস্যদের ৯১ কোটি টাকা মূল্যের মোট ১ কোটি ৯৪ লাখ শেয়ার উপহার দিয়েছেন।
গত ৪ অক্টোবর বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ছেলে ও ঢাকা ব্যাংকের পরিচালক মির্জা ইয়াসির আব্বাস তার মা আফরোজা আব্বাসকে ৩ কোটি ১৩ লাখ শেয়ার উপহার হিসেবে হস্তান্তরের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, 'প্রচলিত কর আইনে পরিবারের যে সদস্যদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, তাদের মধ্যে শেয়ারের মতো সম্পদসহ উপহারের হস্তান্তর সম্পূর্ণরূপে করমুক্ত।'
এই অব্যাহতির ফলে সরকারকে কোনো কর না দিয়েই পারিবারিক সম্পদ নির্বিঘ্নে স্থানান্তর করা যাচ্ছে। বিশেষ করে শেয়ারের ক্ষেত্রে পরিবারের মালিকানায় থাকা কারো শেয়ার পরের প্রজন্মের কাছে হস্তান্তর ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হচ্ছে।
সম্প্রতি এনসিসি ব্যাংকের স্পনসর রাজিয়া হোসেন তার স্বামী তোফাজ্জল হোসেনকে ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার শেয়ার হস্তান্তর করেছেন।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস জানিয়েছে, আদালতের জারিকৃত উত্তরাধিকার সনদ অনুসারে, কোম্পানির স্পনসর অনিতা চৌধুরীর মোট ৬ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার তার আইনি উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অনিতা স্কয়ার টেক্সটাইলের ৫৮ লাখ ৪৩ হাজার শেয়ারও তার আইনি উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
এভিন্স টেক্সটাইলের স্পনসর পরিচালক আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী তার মেয়ে সঞ্জনা শেহনাজ চৌধুরীকে উপহার হিসেবে কোম্পানির ১৮ লাখ ৩৭ হাজার শেয়ার হস্তান্তর করেছেন।
একই কোম্পানির স্পনসর পরিচালক শবনম শেহনাজ চৌধুরী তার মেয়ে সঞ্জনা শেহনাজ চৌধুরীকে কোম্পানির ১৮ লাখ ৩৭ হাজার শেয়ার উপহার দিয়েছেন।
রানার অটোমোবাইলসের স্পনসর পরিচালক মো. মোজাম্মেল হোসেন তার ছেলে মাহমুদ আল নাহিয়ানকে কোম্পানির ২২ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার এবং তার মেয়ে নওশীন ইশরাত প্রমিকে ১১ লাখ ৩৫ হাজার শেয়ার উপহার হিসেবে হস্তান্তর করেছেন।
Comments