২০২৫–২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪.৮ শতাংশ: বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই ধারা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বলেছিল যে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি বেড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিকটি ইতিবাচক, তবুও গতিশীলতা বজায় রাখতে এবং বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে জরুরি ও সময়োপযোগী সংস্কারের প্রয়োজন।

২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিভিন্ন ব্যাঘাতের পর শেষার্ধে এসে জিডিপি পুনরায় বেড়েছে। এর পেছনে মূল কারণ ছিল শক্তিশালী রপ্তানি, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি।

বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নীতির কারণে বৈদেশিক চাপ কমেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে এবং চলতি হিসাব ঘাটতি কমেছে। এ ছাড়া, রপ্তানিও ধারাবাহিকভাবে ভালো ফল দেখিয়েছে।

কঠোর মুদ্রানীতি, প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের কম আমদানি কর এবং ভালো ফলনের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে দুর্বল কর সংগ্রহ, বেশি ভর্তুকি এবং ঋণের ঋণপরিশোধ বৃদ্ধির কারণে বাজেট ঘাটতি সম্প্রসারিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুর্বল কর সংগ্রহ, উচ্চতর ভর্তুকি এবং ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজেট ঘাটতি বেড়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য বেড়েছে। মোট শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ কমে ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমেছে, যেখানে নারীরা বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। শ্রমবাজারের বাইরে থাকা ৩০ লাখ অতিরিক্ত কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে ২৪ লাখ নারী।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্য পেম বলেন, 'অর্থনীতি দৃঢ়তা দেখিয়েছে, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায় না।' 

তিনি আরও যোগ করেন, 'শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পথ নিশ্চিত করতে এবং আরও বেশি ও উন্নতমানের চাকরি সৃষ্টি করতে, বাংলাদেশের জন্য সাহসী সংস্কার এবং দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে আঞ্চলিক রাজস্ব বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা দূর করা, জ্বালানি ভর্তুকি হ্রাস, নগরায়ণ পরিকল্পনা, এবং বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা।'

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দুই দশকে শিল্পখাতের চাকরি ঢাকায় ও চট্টগ্রামে কেন্দ্রীভূত হয়েছে, যা আঞ্চলিকভাবে সমান উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরে। এতে দেশব্যাপী সার্বজনীন চাকরি সৃষ্টি নিশ্চিত করতে স্থানীয় উন্নয়ন কৌশল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেটও প্রকাশ করেছে, যা প্রতি আড়াই বছরে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবণতা এবং নীতি সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষণ করে।

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি এই বছর বেড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়তে পারে, তবে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জও রয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্য চালু রাখা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার দেশগুলোকে নতুন চাকরি সৃষ্টি করতে এবং স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দেশগুলোকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য ঝুঁকি সক্রিয়ভাবে মোকাবিলা করতে হবে।'

তিনি আরও যোগ করেন, 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা সর্বাধিকভাবে কাজে লাগানো এবং বিশেষ করে মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য বাণিজ্য বাধা কমানোর মাধ্যমে দেশগুলো উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এবং অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তির জন্য নতুন চাকরি সৃষ্টি করতে পারবে।' 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি এখনও বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য খুব খোলা নয়। অনেক খাতে উচ্চ শুল্ক থাকায় সেগুলোতে চাকরি কমছে। অন্যদিকে, কম শুল্কযুক্ত খাত, যেমন সেবা খাত, গত দশকে নতুন চাকরির বড় অংশ তৈরি করেছে।  

বিশ্ব ব্যাংক আরও বলেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কিছু খাতে মানুষের কাজের সঙ্গে মিলে উৎপাদন ও আয় বাড়াতে পারে। তবে, এখনও দক্ষিণ এশিয়ার বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠী কম দক্ষ, কৃষি বা শারীরিক কাজে নিয়োজিত।

Comments

The Daily Star  | English

Tribunal sends 15 army officers to jail

Chief prosecutor says government and jail authorities will decide where to house the accused

3h ago