রামোজি ফিল্ম সিটি: শহরের মধ্যে যেন এক টুকরো পৃথিবী

ছবি: সংগৃহীত

শহরের ভেতরে শহর নয় এ যেন এক গোটা বিশ্ব! একদিকে মিলবে রাজা-বাদশাহদের রাজপ্রাসাদ আবার কিছু দূরেই গ্রামের আবহ—কুড়ে ঘর, দেখা মিলবে মরুভূমির পিরামিড, কোথাও আবার সাদা বরফের চাদরে মোড়ানো একটি ছোট শহর।

এক জায়গায় কাউকে মেরে রক্তাক্ত রক্তাক্ত করা হচ্ছে, আবার কোথাও চলছে প্রেমিক-প্রেমিকার রোমান্স। এমনই এক অদ্ভুত জায়গা ভারতের রামোজি ফিল্ম সিটি।

অদ্ভুত এই সিনেমা রাজ্যে কী কী আছে? কোন কোন সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে এখানে? জানবো এই লেখায়।

যখন থেকে শুরু

১৯৯৬ সালে রামোজি গ্রুপের চেয়ারম্যান রামোজি রাও ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদে এই ফিল্ম সিটি নির্মাণ করেন। রামোজি রাও নিজেও একজন সিনেমা প্রযোজক যিনি ২০১৬ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মভূষণ পেয়েছেন। প্রায় ২ হাজার একরের ওপর নির্মিত এই ফিল্ম সিটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিল্ম সিটি ও ফিল্ম স্টুডিও কমপ্লেক্সের হওয়ার জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি সিনেমা নির্মিত হয়েছে এই ফিল্ম সিটিতে আর প্রতি বছর ২০০টির মতো ফিল্ম ইউনিট আসে এখানে শুটিংয়ের জন্য।

ছবি: সংগৃহীত

কী আছে এই সিনেমা রাজ্যে

একটি ফিল্ম সিটি যখন তৈরি হয় তখন সিনেমা নির্মাণের প্রায় সব উপকরণ, যেমন সেট থেকে শুরু করে কৃত্রিম বাড়ি-ঘর, গাড়ি সবকিছুই আছে এখানে। দর্শনার্থীরাও জায়গাটি পরিদর্শন করতে পারেন।

এসব ছাড়াও আছে সেট নির্মাণের ডিজাইন, অডিওরুম, যেকোনো সময়ের জন্য প্রস্তুত রাস্তাঘাট বা এমন এলাকা যা কিছুটা পরিবর্তন করলেই হয়ে যাবে কলকাতা, দিল্লি কিংবা গোয়া!

সিনেমা ও নাটক নির্মাণের জন্য আছে ভিন্ন ভিন্ন সেট। সিনেমা নির্মাণের তিনটি ধাপ—প্রস্তুতি, শ্যুটিং ও পোস্ট প্রোডাকশন সবগুলোর কাজই এই ফিল্ম সিটিতে শেষ করে মুক্তির জন্য ছেড়ে দেওয়া যাবে। আছে ভিএফএক্সের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। ভৌতিক দৃশ্য ধারণ, পাহাড়ি এলাকার আবহ, থ্রিলার মুভির প্রয়োজনীয় উপকরণ, বিদেশি শহরের দৃশ্য, ঝর্ণা, হাইওয়ে, বস্তি, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, খেলার মাঠ, গলফ মাঠ, পাহাড়, নদী, আধুনিক শহর, শপিং মল এবং প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই রয়েছে এই সিনেমাটিক রাজ্যে।

যেসব সিনেমার সেট দেখা যাবে

ছবি: সংগৃহীত

রামোজি ফিল্ম সিটিতে এখন পর্যন্ত নির্মিত আড়াই হাজার সিনেমার প্রায় সবগুলোর সেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। দৃশ্যমান বেশিরভাগ স্থাপনাই কৃত্রিম। তবে এসবের মাঝেও টিকিয়ে রাখা হয়েছে মহেশপতী রাজ্যের রাজপ্রাসাদ যেখানে বিচরণ করত বাহুবালি। গত কয়েক বছর ধরে এই সেটের অংশগুলো পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে।

শাহরুখ-দীপিকার জনপ্রিয় সিনেমা 'চেন্নাই এক্সপ্রেসে'র শুটিং হয় এই ফিল্ম সিটিতে। সিনেমাটির রেলস্টেশনের সেট এখনো অক্ষত আছে। অন্যদিকে সালমান খান ও ঐশ্বরিয়া রায়ের জনপ্রিয় সিনেমা 'হাম দিল দে চুকে সানাম' এর শুটিংও এখানেই হয়েছে। রাজস্থানের সেই প্রাসাদ, সেই ছাদ যেখানে দাঁড়িয়ে সালমান-ঐশ্বরিয়া অপেক্ষা করেছিলেন চাঁদের, সৃষ্টি হয় শ্রোতানন্দিত গান 'চান্দ ছুপা বাদাল মে।' এই সেটটিও এখনো অক্ষত রয়েছে।

ভারতীয় ব্লকবাস্টার সিনেমা 'বাহুবলি'র শুটিং সেটও দেখতে পাবেন রামোজি ফিল্ম সিটিতে। এছাড়া কৃষ, ডার্টি পিকচারসহ বিভিন্ন ভাষাভাষীর সিনেমার সেটও দেখা যাবে।

ছবি: সংগৃহীত

আছে মুঘল দরবার, ব্রিটিশ রাজ্য, ইউরোপ, আমেরিকা আরও কত কী

মুঘল গার্ডের অনুকরণে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে মুঘল গার্ডেন। ঐতিহাসিক সিনেমা বানানোর জন্য কিংবা দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য এই গার্ডেনটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মুঘল দরবার থেকে বেরিয়ে আসলে ব্রিটিশ রাজ্য, ঠিক যেমন মুঘলদের পর ভারতে ব্রিটিশদের আধিপত্য। এরপর একে-একে ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ার ও ইতালীয় সঙ্গীত; নিমিষেই গোটা ইউরোপ। সদূর আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টি, টুইন টাওয়ার ও হলিউডের সফর শেষে দর্শনার্থীদের পা কখন যে ক্যারিবীয় দ্বীপের সৈকতের পানিকে স্পর্শ করবে টেরও পাবে না।

কত খরচ

একা কিংবা পরিবারসহ চাইলেই কেউ ঘুরে আসতে পারে এই ফিল্ম রাজ্যে। ট্রেনের মতো একটি যানে করে ঘুরে দেখানো হয় গোটা শহর। এই যাত্রাতেই দেখা মিলবে দেশি-বিদেশি ঐতিহ্যের। থাকার জন্য বিশাসবহুল হোটেলও আছে এখানে। কেউ চাইলে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার এখানেই সেড়ে ফেলতে পারবে।

এছাড়া নানান ধরনের অ্যাডভেঞ্চারসহ আছে পুরো অঞ্চলটি ঘুরে দেখার সুবিধা। বিয়ের আয়োজন, করপোরেট পার্টি ও জন্মদিনসহ নানা প্রয়োজনে ভাড়া নেয়া যায় এই সিটি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএলের নিলাম, সিনেমা সফল হওয়ার পরের পার্টি হরহামেশাই এখানে হতে থাকে।

রামোজি ফিল্ম সিটি ভ্রমণে আপনি পাবেন অনেক ধরনের ট্যুর প্যাকেজ। পছন্দমতো প্যাকেজ নির্বাচন করে টিকিট সংগ্রহ করুন আর ঢুকে পড়ুন ফিল্মি দুনিয়ায়।

ছবি: সংগৃহীত

রামোজি ফিল্ম সিটির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই ফিল্ম সিটি। ১ হাজার ১৯৯ রুপি থেকে শুরু এর টিকিট মূল্য, শিশুদের জন্য যা ৯৯৯ রুপি। আর সর্বোচ্চ টিকিটের দাম ২ হাজার ৫৪৯ রুপি। শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও প্যাকেজভেদে হয়ে থাকে টিকিটের দাম। ১ হাজার ৩৫০ ও ২ হাজার ৫৪৯ রুপির প্যাকেজে দেখা যাবে বাহুবালির সেট।

এছাড়া হোটেল থাকার খরচ ৮ থেকে ৯ হাজার রুপি থেকে শুরু, সর্বোচ্চ হতে পারে ৬০ হাজার রুপি কিংবা আরও বেশি। শহরটি ঘুরে দেখার জন্য থাকে গাইড। সিনেমার অদ্ভুত এই জগতে প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসে, বছরে প্রায় ১৫ লাখ! যেখান থেকে দৈনিক গড়ে আয় হয় ৪৫ লাখ রুপি।

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

1h ago