যেভাবে বদলে গেল শাকিব খানের ক্যারিয়ার

শাকিব খান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ঢাকাই সিনেমায় ২৬ বছর পূর্ণ করেছেন শাকিব খান। দর্শকরা ভালোবেসে তাকে সুপারস্টার বা কিং খান বলে ডাকেন। প্রিয়তমা, রাজকুমার, বরবাদ, তুফান, তাণ্ডব—এই সিনেমাগুলো তার ক্যারিয়ার বদলে দিয়েছে। তার নামেই এখন দর্শকরা হলমুখী হন। নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। তবে, চলচ্চিত্রে তার যাত্রা এতটা সহজ ছিল না।

কীভাবে বদলে গেল শাকিব খানের ক্যারিয়ার? জানা যাক সেই গল্প।

১৯৯৯ সালের ২৮ মে শাকিব খান অভিনীত প্রথম সিনেমা 'অনন্ত ভালোবাসা' মুক্তি পায়। পরিচালক ছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। সেই থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ঢালিউড যাত্রায় শাকিব খানের পথচলা এতটা সহজ ছিল না। পদে পদে পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাকে। ভাগ্যের ওপর নয়, পরিশ্রম ও মেধার পরিচয় দিতে হয়েছে। সাধনা করতে হয়েছে। লেগে থাকতে হয়েছে। কখনোই সিনেমা থেকে দূরে সরে যাননি।

প্রিয়তমা, রাজকুমার, তুফান, বরবাদ, তাণ্ডব—এই সিনেমাগুলো তাকে দিয়েছে অন্যরকম দর্শকপ্রিয়তা। তার সমালোচকদের অনেকেও এখন বলছেন, 'শাকিব খান নম্বর ওয়ান'। সবশেষ মুক্তি পাওয়া 'তাণ্ডব'ও তাকে বিপুল ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে।

ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

শাকিব খান বিরামহীনভাবে যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন রূপালি পর্দায়। ফেলে আসা দিনগুলো তার জন্য ভিন্ন একটি অধ্যায়। এদেশের সিনেমায় নিজেই ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। কেননা, নব্বই দশকের পর তাকে ছাড়া আর কোনো চলচ্চিত্র নায়ক এত দীর্ঘ সময় নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এটি তার সফলতা কেবল নয়, বড় প্রাপ্তি-অর্জন।

ঢাকাই সিনেমায় একেক সময় একেকজন নায়ক রাজত্ব করেছেন। একটা সময় নায়ক রুবেলের সিনেমা মানেই ছিল হলভর্তি দর্শক। আবার নায়ক মান্না অনেক বছর দর্শক টেনেছেন। রিয়াজ ও ফেরদৌসও দর্শক টেনেছেন। কিন্তু, শাকিব খানের মতো দীর্ঘ সময় কেউই পারেননি।

সিনেমাপাড়ায় একটি কথা চালু আছে—নায়ক মান্না মারা যাওয়ার পর খুলে যায় শাকিব খানের ভাগ্য। কিন্তু, ভাগ্যটা তাকে গড়ে নিতে হয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে।

ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

অন্যদিকে, ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা দিয়েই বাজিমাত করতে পারেননি এই নায়ক, যেটা কিনা সালমান শাহের ভাগ্যে জুটেছিল। শুরুতে অনেক বছর ধৈর্য ধরে অভিনয় করে গেছেন তিনি। মুনমুন ও সাহারার বিপরীতেও তিনি নায়ক ছিলেন। বছরের পর বছর লেগে থাকার পর একটা সময় বদলে যেতে শুরু করে তার অবস্থান। হাতে আসতে শুরু করে বড় বড় বাজেটের সিনেমা। বড় বড় নায়িকারাও তার বিপরীতে কাজ করতে শুরু করেন।

একে একে শাবনূর, পপি, পূর্ণিমাসহ সব শীর্ষ নায়িকার বিপরীতে নায়ক হয়েছেন শাকিব খান। তা ছাড়া, অনেক নতুন নায়িকার বিপরীতেও তিনি অভিনয় করেছেন। সবশেষ ছোটপর্দার নায়িকা সাবিলা নূরের নায়ক হয়েছেন 'তাণ্ডব' সিনেমায়। অপু বিশ্বাসের বিপরীতে ৭০টি সিনেমার নায়ক তিনি। বুবলির ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সিনেমার নায়কও তিনিই।

প্রয়াত বিখ্যাত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শুভা' গল্প নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণ করেন। নামভূমিকায় অভিনয় করেন পূর্ণিমা। 'শুভা' সিনেমায় দুর্দান্ত অভিনয় করেন শাকিব খান। তার সমালোচকরাও 'শুভা' দেখার পর প্রশংসা শুরু করেন। 'শুভা' চলচ্চিত্রটি শাকিব খানের জীবনে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেছে।

ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

চাষী নজরুল ইসলাম শাকিব খানকে নিয়ে নির্মাণ করেন 'দেবদাস'। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাড়া জাগানো উপন্যাস 'দেবদাস' ঘিরে বাংলাদেশ ও ভারতে একাধিক সিনেমা হয়েছে। বুলবুল আহমেদও দেবদাস চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন। আবার, শাকিব খানও দেবদাস চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসায় ভাসেন। 'দেবদাস' সিনেমা তার ক্যারিয়ারকে উজ্জ্বল করে।

'কোটি টাকার কাবিন' সিনেমা শাকিব খানকে দিয়েছে খ্যাতি। এটি ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করে। এইরকম আরও বহু সিনেমা তার ক্যারিয়ারকে ধীরে ধীরে আলোকিত করেছে।

তবে, 'প্রিয়তমা' মুক্তির পর শাকিব খানের ক্যারিয়ারে নতুন করে সুবাতাস বইতে শুরু করে। 'প্রিয়তমা' কোটি কোটি দর্শকের ভালোবাসা পায়। তার ক্যারিয়ারে নতুন ইনিংস এই সিনেমা। এই সিনেমায় শাকিব খানের একটি লুক দারুণভাবে আলোচিত হয়। 'প্রিয়তমা'র পর 'রাজকুমার' তার জন্য ফের আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দেয়।

ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

সিনেমায় টানা সাফল্য ধরে রাখার উদাহরণ কম নায়কের ক্ষেত্রেই আছে। কিন্তু শাকিব খান ব্যতিক্রম এখানেই। কেননা, 'প্রিয়তমা' ও 'রাজকুমারের' পর 'তুফান' সত্যিই যেন তুফানের মতো কাজ করে। এরপর 'বরবাদ' আরও আলোচিত হয়। আর এখন তো 'তাণ্ডব' ঝড় বইছে। আর এসব কারণেই তার ভক্তরা তাকে ঢালিউডের রাজকুমার বলতেও দ্বিধা করেন না।

এক যুগেরও কিছু সময় আগে তিনি 'হিরো দ্য সুপারস্টার' সিনেমাটি প্রযোজনা করেন। নায়কও ছিলেন তিনি। 'হিরো দ্য সুপারস্টার' তাকে শক্ত ভিত্তি তৈরি করে দেয়। অন্যদিকে, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা 'শিকারি'ও তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে ধরা দেয়। 'শিকারি' সিনেমা করার পর দুই দেশের দর্শকরা নতুন শাকিব খানকে পান।

ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

আড়াইশ সিনেমার নায়ক শাকিব খান। শুধু যে সাফল্য ছুঁয়েছেন, তা নয়। অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে। উত্থান-পতন শব্দটি তার জীবনেও এসেছে। কিন্তু, পেছনে ফিরে তাকাননি। সিনেমাকে ভালোবেসে সামনে এগিয়ে গেছেন। যে কারণে তার ক্যারিয়ারে ভাটা নয়, জোয়ার বয়েছে বেশিরভাগ সময়। আর এখন তো ঢালিউডে তিনি শীর্ষ নায়কের আসনে আছেন।

'অনন্ত ভালোবাসা' থেকে 'তাণ্ডব', ১৯৯৯ সালের ২৮ মে থেকে ২০২৫ সালের ঈদুল আজহা—ঢাকাই সিনেমার সাফল্যের রাজকুমার হয়েছেন শাকিব খান। ২৬ বছরের ঢালিউড যাত্রায় তাই শাকিব খান সত্যিই অতুলনীয়।

Comments

The Daily Star  | English

SC Secretariat Ordinance: Judges may hold executive posts

Lower court judges will be able to hold executive positions in the law ministry as well as state entities even after the establishment of a Supreme Court secretariat aimed at keeping the judiciary free from the executive’s influence, says a draft ordinance.

4h ago