৫ সিনেমার চরিত্র নিয়ে যা বললেন ফজলুর রহমান বাবু

ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন গুণী অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবু। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের প্রশংসা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে। দেশের বাইরেও পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তার অভিনীত 'মাস্তুল' মুক্তি পেয়েছে রাশিয়ায়।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে পাঁচ সিনেমার পাঁচটি ভিন্ন চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন ফজলুর রহমান বাবু।

এই অভিনেতা পাঁচটি সিনেমার পাঁচ চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের কাছে।

অজ্ঞাতনামা

এই সিনেমায় যে চরিত্রে অভিনয় করেছি, তা খুব পছন্দের। এই চরিত্রটি আমার কাছে উল্লেখযোগ্য। দারুণ একটি গল্পের সিনেমা অজ্ঞাতনামা। এদেশের অনেক মানুষ বিদেশে থাকেন। পত্রিকায় পড়ে জানতে পারি কেউ কেউ মারা যায়। তৌকীর আহমেদ এমন গল্প শুনেই লিখেছেন। প্রথমে গল্প পড়ে আকৃষ্ট হই। গ্রামের একজন প্রান্তিক মানুষ, যার ছেলে বিদেশে মারা গেছে। চরিত্রটি পড়ে বারবার ভেবেছি কীভাবে এটা আমার ভেতরে ধারণ করব। চ্যালেঞ্জিং ছিল। চরিত্রটি হয়ে ওঠার জন্য আমাকে কষ্ট করতে হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কয়েকদিন আমি ঘুমাতে পারিনি। ১১ দিন টানা শুটিং করেছি। ওই ১১ দিন কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলতে পারতাম না। কষ্টটা ভেতরে ধারণ করতাম। রাতভরও শুটিং করেছি। এই সিনেমার স্মৃতি ভুলবার নয়।

শঙ্খনাদ

শঙ্খনাদ আমার অভিনীত প্রথম সিনেমা। আবু সাইয়ীদ পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই। বগুড়ার ধুনটে শুটিং করেছিলাম। 'শঙ্খনাদ' সিনেমার গল্প নেওয়া হয় নাসরীন জাহানের 'উড়ে যায় নিশিপক্ষী' উপন্যাস থেকে। আমি ও জাহিদ হাসান একসঙ্গে অভিনয় করি। গ্রামের একজন হতদরিদ্র মানুষ আমি, যে কিনা স্বপ্ন দেখে ডাকাত হবে। আবার তার বন্ধু জাহিদ হাসান ব্যারিস্টার। ওইরকম একটি চরিত্র করার আগে বেশ ভাবতে হয়েছে। শুটিং করার আগে ওই গ্রামে চলে গিয়েছিলাম। গ্রামের মানুষজন কীভাবে কথা বলে, চলাফেরা করে এসব কাছ থেকে দেখেছিলাম। তারপর শুটিং করি। প্রচুর প্রশংসা পেয়েছিলাম কাজটি করে।

স্বপ্নজাল

এই সিনেমায় আমি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছি। দর্শকদের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আমার চরিত্রটি ছিল গ্রামের একজন লোভী মানুষের। নৈতিকতা বিবর্জিত একজন মানুষ। অবশ্য এইরকম মানুষ চারপাশে আছে। এরা কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা স্বপ্নজাল সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। শুটিংয়ে যাওয়ার আগে পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম আমাকে পুরো গল্প বলেন। চাঁদপুরে শুটিং করেছি। এটিও খুব চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্র। চরিত্রটি নেতিবাচক হলেও তা গতানুগতিক ভিলেনের মতো নয়। স্ক্রিপ্ট পড়ার পর শুরু হয় নিজের ভেতরে ধারণ করা। অনেক চিন্তা করেছি সত্যি বলতে। নেতিবাচক মানুষ নিয়ে ভেবেছি। তারপর শুটিংয়ে যাই। স্বপ্নজাল মুক্তির পর অনেক অনেক সাড়া পেয়েছি।

স্বপ্নডানা

গোলাম রাব্বানী বিপ্লব পরিচালিত 'স্বপ্নডানা' সিনেমাটি দেশে-বিদেশে প্রশংসা পেয়েছে। গ্রামের একজন অতি সাধারণ মানুষের জীবন ও সংসার নিয়েই গল্প। সিরাজ চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াই। মাহমুদুজ্জামান বাবু একদিন কিছু বিদেশি নোট পায়। আমার কাছে নিয়ে আসে। গল্প এগোতে থাকে। নওগাঁতে শুটিং হয়েছিল। এই চরিত্রটির জন্যও আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। ২৫-২৬ দিন ওখানে থেকেছি, তারপর শুটিং করেছি। সিরাজ চরিত্রটি নিয়েও আমাকে অনেক প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।

মাস্তুল

এই সিনেমার চরিত্রটিও আমার পছন্দের একটি। মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। এটি অনেক বড় বিষয়। এই সিনেমায় যে চরিত্রটি করেছি, তা কোনোদিন করিনি আগে। এখানে আমার কোনো সংলাপ নেই। শুধু এক্সপ্রেশন দিতে হয়। কাজটি অনেক কঠিন। তারপরও চরিত্রটি পাওয়ার পর ডুবে যাই এর ভেতরে। আর কোনো ভাবনা কাজ করেনি তখন। কেবল ভেবেছি কীভাবে কাজটি ভালো মতো করব। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে আমিও ছিলাম। অনেক প্রশংসা পেয়েছি। কয়েকদিন আগে 'মাস্তুল' রাশিয়ায় মুক্তি পেয়েছে।

সবশেষে বাবু বলেন, আমি সৌভাগ্যবান অভিনেতা। শিল্পী-জীবনে অনেক ভালো ভালো চরিত্র করার সুযোগ পেয়েছি।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

5h ago