আবুল হায়াত অভিনীত ৪ চরিত্র

খ্যাতিমান অভিনেতা আবুল হায়াত। এ দেশের নামী নাটকের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত তিনি। বিটিভির অসংখ্য দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছন। আলোচিত অনেকগুলো মঞ্চ নাটকেও অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে টেলিভিশন নাটক ও মঞ্চ নাটককে যারা সমৃদ্ধ করেছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন।
একজন প্রকৌশলী হয়েও অভিনয়ের প্রেমে পড়েন তিনি। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন, নাটক লিখছেন ও পরিচালনা করছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদক পেয়েছেন।
আজ ৭ সেপ্টেম্বর গুণী অভিনেতা আবুল হায়াতের জন্মদিন।
অভিনয়জীবনে অনেক আলোচিত নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সেসব নাটকের চরিত্র নিয়ে আজও আলোচনা হয়। সেখান থেকে তিনটি নাটকের তিন চরিত্র ও একটি চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
অয়োময়
নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের একটি সাড়া জাগানো ধারাবাহিক নাটক 'অয়োময়'। বিটিভির ইতিহাসে কালজয়ী নাটক হিসেবে অয়োময়ের নাম উঠে আসে অনায়াসে। এই নাটকে অভিনয় করে অনেক শিল্পী বিখ্যাত হয়েছেন। তেমনই আবুল হায়াতের অভিনয়জীবনেও এই নাটকটি মাইলফলক হয়ে আছে। তিনি অভিনয় করেছেন কাশেম চরিত্রে, যে কি না একজন গরিব মানুষ। কিন্তু ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে জমি কিনতে শুরু করে এবং এক সময় মির্জা সাহেবের জমি ও বাড়িও কেনে ফেলেন। এই নাটকের একটি সংলাপ আছে—মানুষ বদলায় কিন্তু রাজা বদলায় না। আবার এক সময় ছোট মির্জাকে অনুরোধ করে কাশেম বলেন, মির্জা সাহেব আমি আপনাকে কথা দিলাম, এই বাড়ি ও আপনার জমি কেনার কথা জীবনেও কাউকে বলব না। যতদিন ইচ্ছে এই বাড়িতে থাকবেন। তখন তিনি বলেন, ছোট মির্জা কারও দান গ্রহণ করে না। মার মৃত্যুর পরই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।
আবুল হায়াত বলেন, 'অয়োময়' নাটকটি আমার অভিনয়জীবনের একটি বড় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই নাটকে কাশেম চরিত্রে অভিনয় করে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। মানুষের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
বহুব্রীহি
তুমুল জনপ্রিয় নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদের অনন্য সৃষ্টি 'বহুব্রীহি' ধারাবাহিক নাটক। এই নাটকে আবুল হায়াত অভিনয় করেছেন বাড়ির বড় কর্তার চরিত্রে, যিনি ভীষণ রাগি। কথায় কথায় রাগ করেন। তাকে দেখতে বাড়িতে ডাক্তার আসেন (আফজাল হোসেন), একসময় তার ওপরও রাগ করেন। তার বাড়িতে তারই একমাত্র শ্যালক (আলী যাকের) থাকেন। শ্যালকের যেকোনো কথায় তিনি রাগ করেন। কাজের লোকদের কথায়ও রাগ করেন। বাড়ি ভাড়ার জন্য একদিন উপস্থিত হন আসাদুজ্জামান নূর, তার সঙ্গে এক প্রকার ঝগড়া বাঁধিয়ে দেন। যখনই রাগ করেন অস্থির হয়ে পড়েন এবং সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় পানি ঢালতে হয়। বহুব্রীহি নাটকের একটি সংলাপ খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সংলাপটি হচ্ছে—ইংরেজিতে গালি দেবেন না, বাংলায় অনেক গালি আছে। আরেকটি সংলাপ ছিল—বহিষ্কার হও! বহিষ্কার হও! এটি আবুল হায়াতের দেওয়া সংলাপ। রেগে গেলেই তিনি এই সংলাপটি দিতেন।
আবুল হায়াত বলেন, হুমায়ূন আহমেদের লেখা নাটক দেখে দর্শকরা খুব আনন্দ পেতেন। আমরা অভিনয়শিল্পীরাও অভিনয় করে দারুণ আনন্দ পেতাম। বহুব্রীহি নাটকটি দর্শকরা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছিলেন।
নক্ষত্রের রাত
গাধার বাচ্চার গাধা—এই সংলাপটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল দর্শকদের কাছে। এটি নক্ষত্রের রাত নাটকের সংলাপ। একঝাঁক তারকা শিল্পী নাটকটিতে অভিনয় করেন। আবুল হায়াত অন্যতম প্রধান চরিত্রে ছিলেন। আবুল হায়াত প্রায়ই রেগে যেতেন এবং কিছু হলেই বলতেন—গাধার বাচ্চা গাধা। হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য নাটকের মতোই 'নক্ষত্রের রাত' নাটকেও হাস্যরস যেমন ছিল, পারিবারিক গল্পও ছিল। পরিবারের সুখ, দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করা নেওয়ার গল্পও ছিল। নাটকটিতে আবুল হায়াত একটি বড় পরিবারের বাবা চরিত্রে অভিনয় করেন। তার পুত্র দুজন—আজিজুল হাকিম ও জাহিদ হাসান। ছোট মেয়ে ছিলেন শমী কায়সার।
আবুল হায়াত বলেন, নক্ষত্রের রাত নাটকে অভিনয় করে ভালো লেগেছে। অনেক স্মৃতি জমে আছে। দারুণ সব দিন গেছে তখন আমাদের। মানুষ এখনো সেসব নাটকের কথা বলেন।
আগুনের পরশমণি
হুমায়ূন আহমেদ প্রথম পরিচালনা করেন মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র 'আগুনের পরশমণি'। এটি সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ঢাকা শহরের একটি বাড়ির প্রধান কর্তা হচ্ছেন আবুল হায়াত। তার বাড়িতে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয় দেন। তারপর বাড়িটিকে ঘিরে ঘটতে থাকে নানান ঘটনা। আবুল হায়াতের মেয়ে বিপাশা হায়াত এই সিনেমায় তার মেয়েরই চরিত্রে অভিনয় করেন। একদিন বিপাশা হায়াত বলেন, বাবা দেখ, কী সুন্দর চাঁদ! তখন আবুল হায়াত বলেন, স্বাধীন দেশের চাঁদ সুন্দর হবে না? এদেশ যখন পুরোপুরি স্বাধীন হবে, তখন ওই চাঁদটাই লক্ষ গুণ সুন্দর লাগবে।
Comments