কানাডায় কীভাবে সময় কাটছে নায়িকা ববিতার?
ববিতা, কালজয়ী সব সিনেমার কালজয়ী নায়িকা তিনি। অভিনয় করেছেন অসংখ্য সিনেমায়। তার অভিনীত সিনেমা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের নায়িকা হয়ে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন নিজেকে।
একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে। এখনো তার অভিনীত সাদাকালো যুগের সিনেমাগুলো দর্শকরা দেখেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে।
বর্তমানে ববিতা কানাডায় আছেন পুত্র অনিকের কাছে। সেখান থেকে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
দ্য ডেইলি স্টার: কেমন আছেন?
ববিতা: ভালো আছি। খুব ভালো আছি। পুত্র অনিকের কাছে আছি। পুত্রকে নিয়ে ভীষণ ভালো আছি।
দ্য ডেইলি স্টার: কানাডায় সময় কাটছে কীভাবে ?
ববিতা: সন্তানের সঙ্গে আনন্দে সময় কাটছে। এখন তো প্রচুর বরফ পড়া শুরু হয়েছে, সেজন্য কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না তেমন একটা। ঘরেই বেশিরভাগ সময় পার করছি। কিন্তু, গত সামারে দারুণ সময় পার করেছি।
আমার ছেলে অনিকের বাসা নদীর পাড়ে। এখানকার প্রকৃতি অনেক সুন্দর। ঘর থেকে বের হলেই সুন্দর একটা নদী। অনিকের ছুটির দিনে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। দুজনে মিলে ফুলের গাছ কিনে এনে বাগান করেছি। সত্যি বলতে, সন্তানের সঙ্গে কাটানো সময়ের মতো সুন্দর কিছু নেই। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় পার করছি।
অনিকের পছন্দের খাবার রান্না করি ওর ছুটির দিনে। আমার হাতের চিকেন কোরমা, গরুর মাংস এবং ডাল ওর খুব পছন্দ। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি ওর পছন্দের খাবারগুলো রান্না করি। এ ছাড়া, দুজনে মিলে গল্প করি।
অনিক অনেক ব্যস্ত অফিস নিয়ে। ছুটির পর বাসায় আসার পর সুন্দর সময় কাটে আমাদের। ওর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যায়। যদিও এখন প্রচণ্ড বরফ পড়ার কারণে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না ।সব মিলিয়ে মা ও ছেলে মিলে ভালো সময় পার করছি।
দ্য ডেইলি স্টার: একমাত্র সন্তানের বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছেন?
ববিতা: বিয়েটা অনিকের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। তাছাড়া, ওপরওয়ালা যেখানে লিখে রেখেছেন। আমি ফোর্স করব না। ওর নিজস্ব ব্যাপার। কাউকে যদি ভালো লাগে তাহলে বলবে। তারপর আমরা আলোচনা করব।
দ্য ডেইলি স্টার: অনেক সিনেমা করেছেন, কখনো কি নস্টালজিক হন? সেইসব সিনেমা দেখেন?
ববিতা: যেসব সিনেমা খুব আলোচিত হয়েছে, দেশে-বিদেশে পুরস্কার পেয়েছে এবং প্রশংসা কুড়িয়েছে- সেইসব সিনেমাগুলো মাঝে মাঝে দেখি। দেখতে ভালো লাগে। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। পেছনে ফিরে যাই। দেখুন, আমার সময়ের অনেক বিখ্যাত পরিচালক ছিলেন, বেশির ভাগই বেঁচে নেই। সহশিল্পীরাও অনেকে বেঁচে নেই। নস্টালজিক হলে তাদের কথা মনে পড়ে। খুব মনে পড়ে তাদের কথা ।
দ্য ডেইলি স্টার: ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রথম সিনেমার নায়িকা আপনি। তাকে নিয়ে কী বলবেন?
ববিতা: একজন ভালো মানুষ ইলিয়াস কাঞ্চন। শিল্পী হিসেবে যেমন বড় মাপের, মানুষ হিসেবেও অনেক ভালো। সামাজিকভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মানুষ। এই মানুষটির অসুস্থতার খবর শুনে মর্মাহত হয়েছি। কষ্ট পেয়েছি । প্রার্থনা করছি তিনি যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সৃষ্টিকর্তার কাছে তার জন্য দোয়া করছি মন থেকে, যেন দ্রুত আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন আগের মতো। একটা জীবন তিনি সিনেমার জন্য দিয়ে গেছেন। পাশাপাশি একটা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।
বিশেষ করে তার গড়া নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনটি দারুণভাবে প্রশংসা পেয়েছে। সড়ক কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়, এ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে কাজ করছেন। সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে আগের হাসিমুখ ফিরিয়ে দেন।
দ্য ডেইলি স্টার: নায়ক জাফর ইকবাল, রাজ রাজ্জাকসহ অনেকের নায়িকা ছিলেন, তাদের কথা মনে পড়ে?
ববিতা: জাফর ইকবাল আমার নায়ক এবং ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি বেঁচে নেই। তার সঙ্গে অনেকগুলো সিনেমা করেছি, যা দর্শকরা মনে রেখেছেন। আমাদের জুটি দর্শকরা পছন্দ করতেন। খুব স্টাইলিশ নায়ক ছিলেন।
রাজ্জাক আমার নায়ক ছিলেন এবং তার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ভীষণ ভালো মানুষ ছিলেন। যারা আমার নায়ক ছিলেন, তাদের সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। সবাই খুব ভালো মানুষ। কেউ কেউ বেঁচে আছেন, কেউ কেউ বেঁচে নেই।
রাজ্জাক ভাইয়ের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত সিনেমায়ও অভিনয় করেছি। নায়ক ফারুক ভাইয়ের সঙ্গেও সুপারহিট সিনেমা করেছি। তিনি বেঁচে নেই। সোহেল রানা ভাইয়ের সঙ্গেও সিনেমা করেছি। তিনি বেঁচে আছেন। বুলবুল আহমেদে ভাইয়ের বিপরীতে সিনেমা করেছি। তিনি বেঁচে নেই। সবার কথা মনে পড়ে ।

Comments