‘বেতার নাটকে অভিনয় সবচেয়ে কঠিন, চেহারা দেখা যায় না’

ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন আব্দুল আজিজ। অভিনয় করেছেন শতাধিক সিনেমা, কয়েক হাজার টিভি নাটক এবং অসংখ্য বেতার নাটকে।
শুরুটা ছিল রাজশাহীতে স্কুলজীবনে। অভিনয়ের পাশাপাশি বেতারে দীর্ঘকাল চাকরি করেছেন তিনি। জীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে আব্দুল আজিজ কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
দ্য ডেইলি স্টার: ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন, শিল্পী জীবনের বড় অর্জন কী?
আব্দুল আজিজ: মানুষের ভালোবাসা। ৬২ বছর ধরে অভিনয় করছি। এখনো অভিনয় করি। অভিনয় করে মানুষের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। মানুষ আমাকে ভালোবাসে, কাজকে ভালোবাসে। যেখানেই যাই, তাদের ভালোবাসা পাই। এটাই শিল্পী জীবনের বড় অর্জন।
ডেইলি স্টার: পাওয়া না পাওয়া, কিংবা চাওয়া নিয়ে কোনো আফসোস কাজ করে?
আব্দুল আজিজ: কোনো আফসোস নেই। আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে কাজ করি। যতটুকু পেয়েছি অভিনয় করে, ততটুকুতেই খুশি। আফসোস করে লাভ নেই। সেজন্য আর আফসোস করি না। কাজ ভালো মতো করতে পারলাম কি না, তাই ভাবি।
চাওয়ার কিছু নেই। কিছুই চাই না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আছি, ভালো আছি। আমি খুব সাধারণ জীবনযাপন করি। তিন চাকার গাড়িতে চলাচল করি (হাসি)। তিন চাকার গাড়িতে (রিকশায়) চড়ে বেড়াই। আমি এটাকেই বলি বিএমডব্লিউ।
ডেইলি স্টার: অভিনয় জীবনের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
আব্দুল আজিজ: স্কুল জীবনে শুরু। ওই সময় গ্রামোফোন রেকর্ড শুনতাম। মঞ্চ নাটক দেখতে যেতাম। তখনই মনে হতো, যদি অভিনয় করতে পারতাম। রেডিও শুনতাম, প্রচুর নাটক শুনতাম রেডিওতে। আর মনে মনে ভাবতাম, যদি পারতাম অভিনয় করতে!
তারপর একসময় মঞ্চে অভিনয় শুরু। স্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। সেখানেও অভিনয় অব্যাহত রইল। এভাবেই অভিনয়ে লেগে থাকি। আর ছাড়া হয়নি। এখনো একই পথে আছি।
ডেইলি স্টার: একটা দীর্ঘ জীবন অভিনয়ে কাটিয়ে দিলেন, আপনার সময়ের অনেকেই বেঁচে নেই, তাদের কথা মনে পড়ে?
আব্দুল আজিজ: ঠিক বলেছেন। আমার সময়ের অনেকেই নেই পৃথিবীতে। কতজনের নাম বলব। রাজশাহীর অনেকেই নেই। আব্দুল মালেক খান, আনোয়ারুল ইসলাম (আমার ওস্তাদ) আর নেই । ওখানকার অনেকেই নেই। তাদের কথা মনে পড়ে।
সিনেমার অভিনেতা শওকত আকবর নেই। তার কথা মনে পড়ে। গোলাম মুস্তাফা ভাই ছিলেন, বেঁচে নেই, বিখ্যাত অভিনেতা ছিলেন। কবরী নেই। শাবানা, ববিতা আছেন। তাদের সঙ্গে কাজ করেছি।
কমেডিয়ান দিলদার ও টেলি সামাদ নেই। কতশত স্মৃতি তাদের সঙ্গে। আমজাদ হোসেন ছিলেন সেরা একজন লেখক। লেখক, শিক্ষক, পরিচালক, অভিনেতা- বহু গুণ ছিল তার। তার পরিচালিত 'জব্বর আলী' খুব আলোচিত নাটক ছিল। ওই নাটকে আমাকে দিয়ে অভিনয় করান। আমি বেশ জনপ্রিয়তা পাই। তাকে মনে পড়ে। তার মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হয়।
বড় বড় শিল্পী, পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি- এটাও জীবনের বড় ঘটনা। রাজ্জাক ভাই, আনোয়ার হোসেন- কতজনের নাম বলব। তাদের সঙ্গেও অভিনয় করেছি। সবার কথা মনে পড়ে। তারা চলে গেছেন, আমাকেও একদিন যেতে হবে।
ডেইলি স্টার: অসংখ্য বেতার নাটকে অভিনয় করেছেন। বেতার নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা শুনতে চাই।
আব্দুল আজিজ: আমি এখনো বেতার নাটকে অভিনয় করি। কত বেতার নাটকে অভিনয় করেছি, হিসাব নেই। তারপরও বলছি, দুই হাজার তো হবেই। বেতার নাটকে অভিনয় সবচেয়ে কঠিন। বেতারে চেহারা দেখা যায় না।
অনেক বছর নায়কের চরিত্র করেছি বেতার নাটকে। কণ্ঠ দিয়ে অভিনয় করতে হয়। আমি তো বেতারে ৩৩ বছর চাকরি করেছি। এখনো বেতার নাটকে অভিনয় করতে ভালোবাসি।
ডেইলি স্টার: অভিনয় জীবনের কোনো স্মরণীয় ঘটনা আছে?
আব্দুল আজিজ: অনেক আছে। একটি ঘটনা মনে পড়ছে। বিটিভিতে অনেক দিন আগে আতিকুল হক চৌধুরী 'কাবুলিওয়ালা' নাটক করেছিলেন। আমাকে রাম দয়ালের চরিত্র দেওয়া হলো। রিহার্সাল শুরু করি আমরা। প্রথম দিন গেল, দ্বিতীয় দিন, তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিন গেল। কাবুলিওয়ালা চরিত্রে যিনি অভিনয় করবেন, তাকে তো দেখতে পাই না।
পরে একদিন আতিকুল হক চৌধুরী আমাকে বললেন, 'আজিজ সাহেব, কাবুলিওয়ালা চরিত্রটি আপনি করবেন?' আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি? তিনি বললেন, 'হ্যাঁ আপনিই করবেন।' তিনি আমার হাত চেপে ধরে কথাটি বলেন। শেষে দুজনে বিষয়টি শেয়ার করি। পোশাক কিনি। এরপর ক্যামেরার সামনে যাই। তারপর প্রচার হলো এবং মানুষের মুখে মুখে প্রশংসা শুনতে পেলাম। এই ঘটনা মনে পড়ে।
Comments