কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট

নদীভাঙনে শঙ্কায় কাটছে দিন, নির্ঘুম রাত

ধরলা নদীর ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন বদরুজ্জামান মিয়াসহ গ্রামবাসী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

বদরুজ্জামান মিয়ার (৬০) বসতভিটা থেকে প্রায় ৩ মিটার দূরে চলে এসেছে ধরলা নদীর ভাঙন। যেকোনো সময় তার বসতভিটা নদীতে বিলীন হতে পারে। এই দুশ্চিন্তায় সোমবার থেকেই নির্ঘুম রাত কাটছে পরিবারের ৬ সদস্যের। শনিবার নদীভাঙনে তার ২ বিঘা আবাদি জমি চলে গেছে ধরলার উদরে।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার গোরকমন্ডল গ্রামের বদরুজ্জামানের মতোই নির্ঘুম রাত কাটছে সফর উদ্দিন (৬৪) ও তার পরিবারের ৪ সদস্যের। সফর উদ্দিনের বসতভিটা থেকে ধরলা নদীর ভাঙনের দূরত্ব এখন ৪ মিটার।

কৃষক বদরুজ্জামান মিয়া সোমবার বিকেলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার জীবনে ৭ বার বসতভিটা হারিয়েছেন ধরলা নদীর ভাঙনে। এখন এই বসতভিটায় বসবাস করছেন গেল ১৩ বছর ধরে। এ বসতভিটাও ধরলার উদরে চলে যেতে পারে যেকোনো সময়।

'নদীভাঙনে বসতভিটা বিলীন হওয়ার ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছি না। এ বসতভিটা নদীর উদরে চলে গেলে ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়ব। চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হবে আমাদের', বলেন বদরুজ্জামান।

কৃষক সফর উদ্দিন ডেইলি স্টারকে জানান, তার জীবনে তিনি ৯ বার বসতভিটা হারিয়েছিলেন। সর্বশেষ বসতভিটায় বসবাস করছেন গেল ১০ বছর ধরে। এ বসতভিটাও যেকোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারে ধরলার উদরে।

'জমি কিনে নতুনভাবে বসতভিটা তৈরির সামর্থ্য আমার নেই। ধরলা নদীর ভাঙন আমাকে নিঃস্ব করেছে', বলেন তিনি।

ধরলা নদীর ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সফল উদ্দিনসহ গ্রামবাসী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলী ডেইলি স্টারকে জানান, তার ইউনিয়নের গোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গেল ৫ দিনে শতাধিক বিঘা আবাদি জমি নদীর উদরে বিলীন হয়েছে। একটি কাঁচা সড়কের অর্ধ কিলোমিটার ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই গ্রামে দেড় শতাধিক বসতভিটা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মেঘারাম গ্রামের শুকচরণ বর্মণ (৪০) ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের গ্রামে ধরলা নদীর ভাঙনে আবাদি জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। ভাঙন হুমকিতে পড়েছে অর্ধশতাধিক বসতভিটা। যেকোনো সময় নদীভাঙনে বসতভিটা চলে যেতে পারে ধরলার উদরে। এজন্য তাদেরকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম গ্রামের কৃষক আজগর আলী (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গেল শুক্রবার থেকে ২ শতাধিক বিঘা আবাদি জমি চলে গেছে তিস্তার উদরে। ভাঙন হুমকিতে থাকায় তিনি বসতভিটা থেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে গেছেন। অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।'

'ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও আবাদি জমি। গ্রামের লোকজন বসতভিটা হারিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন সরকারি রাস্তার ওপর ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। গেল ২ সপ্তাহ ধরে এই গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন চলছে', বলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান (৬০)।

পাউবো সূত্র জানায়, কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, গঙ্গাধর ও ধরলা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে ৫০টি পয়েন্টে। লালমনিরহাট তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছেন ১২ পয়েন্টে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তহবিলের অভাবে ভাঙনকবলিত সবগুলো স্থানে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলছে।'

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা ও ধরলা নদীপাড়ের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে তা এখনো তীব্র আকার ধারণ করেনি। ভাঙন ঠেকাতে জরুরিভিত্তিতে কাজ করতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

3h ago