সাতক্ষীরার ৪৮ ইউনিয়ন প্লাবিত, লোকালয়ে হরিণ

জেলায় ২৭৬টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জে একটি হরিণ লোকালয়ে চলে আসে। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা জেলার অন্তত ৪৮ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

জেলার শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ১০ হাজার একর চিংড়ি ঘের পানিতে একাকার হয়ে গেছে বলে মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।   

এছাড়া, সুন্দরবন সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জে একটি হরিণ লোকালয়ে চলে আসার খবরও পাওয়া গেছে। পরে হরিণটিকে উদ্ধার করে বনে দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করলেও, এর প্রভাবে আজ সোমবার দিনভর জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়। ঝড়ো বাতাসে কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। 

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শ্যামনগর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। জোয়ারের পানিতে সুন্দরবন প্লাবিত হওয়ায় লোকালয়ে হরিণ চলে আসার খবর পাওয়া গেছে। 

আজ সোমবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার ৭৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৮টি ইউনিয়ন কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২৭৬টি ঘরবাড়ি, আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে এক হাজার ১৯২টি বাড়ি এবং মারা গেছে একজন।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জুলফিকার আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাতক্ষীরা শহরে রোববার বিকেল ৩টা থেকে সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটাকে অতি ভারী বর্ষণ বলা যায়।'

সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, আঠুলিয়া, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালি, রমজাননগর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকেনি। তবে অতিবর্ষণে বাড়ির আঙিনায় ২-৩ ফুট পানি জমে গেছে। আঠুলিয়া ও কালীগঞ্জের ঋষিপাড়ায় অনেকগুলো কাঁচা ঘরবাড়ি পড়ে গেছে। 

শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকায় চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরাগামী সড়কের পাশে গাছ উপড়ে অথবা ডাল ভেঙে পড়েছে। 

আঠুলিয়া ইউনিয়নের বিড়ালক্ষ্মী, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালি, নীলডুমুর ও রমজানগর ইউনিয়নের নতুনঘেরি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি ও কালীগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ঋষিপাড়া এলাকায় অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। রোববার দুপুরের দিকে দমকা বাতাসের সঙ্গে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। রোববার রাত ৩টার দিকে বাতাস ও বৃষ্টি কিছুটা কমলেও আবার সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শুরু হয় দমকা বাতাস ও বৃষ্টি।

বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে চুনা নদীর পানি ৪-৫ ফুট বেড়ে ঢেউ আছড়ে পড়ছে গ্রাম রক্ষা বেড়িবাঁধের ওপর। 

দাতিনাখালি গ্রামের রমজান আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাড়ির লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আমি ঘরে ছিলাম। হঠাৎ ঘরটি ভেঙে পড়ে।'

দাতিনাখালি, দুর্গাবাটি ও নীলডুমুর গ্রামের অধিকাংশ পরিবারে বাড়ির আঙিনায় ২-৩ ফুট করে পানি উঠেছে।

আঠুলিয়া ইউনিয়নের বিড়ালক্ষ্মী গ্রামের আবুল কালাম জানান, দমকা বাতাসের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে বৃষ্টি হওয়ায় তাদের কাঁচা ঘর নড়বড়ে হয়ে পড়ে। রোববার রাতে দমকা বাতাসে তাদের পাড়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি পড়ে গেছে।

বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের দুর্গাবাটি গ্রামের রনজিৎ মন্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অতিবৃষ্টিতে আমার চিংড়ি ঘেরসহ অসংখ্য ঘের ভেসে একাকার হয়ে গেছে।'

মুন্সিগঞ্জ গ্রামের সিংহড়তলী গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, রোববার সকালে ওই এলাকায় একটি হরিণ লোকালয়ে চলে আসে। হরিণটিকে উদ্ধার করে বনবিভাগকে খবর দেওয়া হলে গতকাল বিকেলে কদমতলা বনবিভাগের কর্মীরা এসে হরিণ নিয়ে বনে ছেড়ে দেয়।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুন্দরবনের কোনো কোনো এলাকায় জোয়ারের পানি উঠেছে। তবে দুর্যোগ না কমলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। দুর্যোগের একটি হরিণ লোকালয়ে আসার পর সেটিকে উদ্ধার করে সুন্দরবনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।'

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার আওতায় থাকা ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কোথাও পানি উপচে লোকালয়ে ঢোকেনি।'

তবে, দুর্গাবাটি, লেবুবুনিয়া, খলিশাখালি ও হরিষখালিসহ কয়েকটি এলাকার বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির আজ সন্ধ্যায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনো ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে প্রবল বেগে। দুর্যোগ না কমলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে শ্যামনগর ও আশাশুনিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়। ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে এক হাজার ৪৬৮টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবর্ষণে ২-৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
A bitter brew: Climate change and the decline of Sylhet’s tea gardens

A bitter brew: Climate change and the decline of Sylhet’s tea gardens

Projections by the United Nations Food and Agriculture Organization (FAO) indicate that tea cultivation areas could shrink by 2050.

7h ago