মজুত ট্যাংকে চলছে মেরামত, চট্টগ্রামে ডিজেল সংরক্ষণের জায়গা সংকট

মজুত সক্ষমতার অধিক ডিজেল আমদানি করে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ডিজেল রাখার জায়গা নেই চট্টগ্রামে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারির দুটি বিশালাকার ট্যাংকের মেরামত কাজ চলায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংকট সমাধানে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহ শুরু করছে বিপিসি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানিকৃত দেড় কোটি লিটার ডিজেল পাইপলাইনের মাধ্যমে ঢাকার গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে পাঠানো হচ্ছে। একইসঙ্গে কুমিল্লা ডিপোতেও সরবরাহ করা হবে ডিজেল।
বিষয়টি জানতে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মনিলাল দাশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'জ্বালানি তেল আমদানির নিয়মিত সিডিউল অনুযায়ী আমরা ডিজেল আমদানি করছি। হঠাৎ করে ইস্টার্ন রিফাইনারির দুটি ট্যাংকের মেরামত কাজ শুরু করায় চট্টগ্রামে ডিজেল রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমরা পাইপলাইনের মাধ্যমে কিছু ডিজেল ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছি।'
বর্তমানে দেশে ডিজেল মজুদ (ডিপো ও ফ্লোটিং) আছে প্রায় পাঁচ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে চট্টগ্রামে আছে দুই লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন।
আগামী ১০ দিনে আরও এক লাখ টন ডিজেল নিয়ে চারটি জাহাজ চট্টগ্রামে আসার কথা রয়েছে বলে জানান বিপিসির কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, ইস্টার্ন রিফাইনারির মেরামত কাজ চলা দুটি ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা ৮৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এই ট্যাংক দুটিতে মেরামত কাজ চলায় রিফাইনারিতে দৈনিক উৎপাদিত ডিজেল রাখতে হচ্ছে অন্যত্র।
ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ হাসনাত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রিফাইনারির দুটি বিশালাকার ট্যাংকের মেরামত কাজ শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে। ২০০০ সালে নির্মিত ট্যাংক দুটি মেরামত করতে আরও তিন সপ্তাহ কিংবা এরচেয়ে কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। বিষয়টি বিপিসি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।'
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, বিদেশ থেকে প্রতি চালানে আমদানি হয় ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল। সিডিউল অনুযায়ী আমদানিকৃত ডিজেল নিয়ে প্রতি মাসে ১২টি জাহাজ আসে চট্টগ্রামে। সারা দেশে দৈনিক ডিজেল চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনে সরবরাহ হওয়া ডিজেলের হিসেব এখনো পুরোপুরি মিলছে না। তারপরও চট্টগ্রামে ডিজেল রাখার জায়গা না থাকায় ঢাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে ডিজেল।
গত ১৬ আগষ্ট চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উদ্বোধনের আগেই চট্টগ্রাম থেকে যে পরিমাণ ডিজেল গোদনাইল, ফতুল্লা ও কুমিল্লা ডিপোতে সরবরাহ করা হয়েছে, সেই পরিমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ডিজেল সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এ বিষয়ে পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রায়হান আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাইপলাইনে ঘাটতি নিরসনে দুই প্রান্তের ফ্লো মিটারে টিউনিং সম্পন্ন হয়েছে। ফ্লো মিটার ও ডিপোগুলোর ট্যাংকের ডিপে এখনও পার্থক্য রয়েছে। ফাইন টিউনিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'চট্টগ্রামে জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনায় ডিজেল রাখার জায়গা নেই। তাই ঢাকায় ডিজেল সরবরাহ করা হচ্ছে। নিয়মিত সরবরাহ কার্যক্রম চালু থাকলে টিউনিংয়ের কাজ দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
Comments