খোয়াই যেন নদী নয়, বর্জ্যের ভাগাড়

হবিগঞ্জের ফুসফুস খোয়াই নদী। একসময় খোয়াই ছিল খরস্রোতা। অথচ আজ তা বিপর্যয়ের মুখে। নগরের বর্জ্য, দখল ও দূষণে আক্রান্ত নদীটি তার প্রাণ হারাচ্ছে। শহরের ক্লিনিক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি বসতবাড়ির বর্জ্য এসে জমছে নদীর পাড়ে। এই বর্জ্য কেবল নদী ধ্বংস করছে না, শহরের পরিবেশও হুমকির মুখে ফেলছে।
পানি নিষ্কাশন ও বন্যা প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নদীটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। দখল ও দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শহররক্ষা বাঁধ। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে বন্যা।
স্থানীয় সাজ্জাদ মিয়া জানান, কয়েক বছর ধরে তারা শহররক্ষা বাঁধে বালুর বস্তা ফেলে কোনো রকমে বসবাস করছেন। তবে অল্প বৃষ্টিতেই তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শহরের সব ময়লা নদীতে ফেলায় নদী প্রায় বিলীনের পথে। এখানকার পানি ও বায়ু দূষিত হয়ে গেছে। দূষণের ফলে রোগবালাই লেগেই থাকে।
'আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই,' বলেন তিনি।

খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, 'দীর্ঘদিন দখল-দূষণের বিষয়টি স্বাভাবিক ছিল। শহরের নদী, যার কোনো তদারকি নেই; সেটি নষ্ট হওয়ারই কথা। এর সবচেয়ে বড় দায় অসচেতন জনগোষ্ঠীর। প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় হবিগঞ্জে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। এখনও দখল অব্যাহত আছে।'
'খোয়াই পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে হবিগঞ্জের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এর পাশাপাশি নিজেদেরও সচেতন হতে হবে,' বলেন তিনি।
ধরার কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার খোয়াই নদী সংরক্ষণে নানা প্রকল্প নিয়েছে।

তার ভাষ্য, 'দীর্ঘদিন ধরে সারাদেশে চলমান নদীরক্ষার নামে গৃহীত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে দখলদারদের বৈধতা দেওয়ার যে বাস্তবতা রয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি হবিগঞ্জের মানুষ হতে দেবে না। তাই খোয়াই পুনরুদ্ধারের আগে চলমান দখল বন্ধ করতে হবে। বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে চলমান মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলা করা উচিত।'
সংশ্লিষ্টরা বলেন, খোয়াই সংরক্ষণে নদীর সীমানা নির্ধারণ যে কোনো সমন্বিত পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ। যেহেতু হবিগঞ্জের সিএস জরিপ নেই, কাজেই স্থানীয় পরিবেশবাদী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সমীক্ষার মাধ্যমে নদীর সীমানা চিহ্নিত করতে হবে।

সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, খোয়াই নদী হচ্ছে হবিগঞ্জের ফুসফুস। দখল দূষণের মাধ্যমে কেবল এ নদীর সর্বনাশ ডেকে আনা হয়নি; পুরো শহরের পরিবেশ ও প্রতিবেশকে হুমকিতে ফেলা হয়েছে। নদীর অবস্থান, আয়তন, গতি-প্রকৃতি সব দিক বিবেচনায় নিয়ে যতটা সম্ভব, একে সংস্কার করতে হবে। এই নদীর মাধ্যমে হবিগঞ্জ একটি পরিকল্পিত, সুস্থ ও সুন্দর শহর হতে পারে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পানি নিষ্কাশনসহ নগরায়ণের যাবতীয় অবকাঠামোগত সমস্যারও সমাধান সম্ভব।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুর রহমান বলেন, 'নদীর বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন ও পুনরুদ্ধার-সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এগুলো চিহ্নিত করতে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ফলাফল দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণ পরিকল্পনার ভিত্তি প্রদান করবে।
Comments