কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে রংপুর অঞ্চল
গত কয়েক দিন ধরে কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশায় কাঁপছে দেশের উত্তরাঞ্চল। রংপুর অঞ্চলের লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলায় জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত মঙ্গলবার থেকে রংপুর অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। তিনি বলেন, 'আকাশে সূর্য দেখা না যাওয়ায় ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে, সঙ্গে রয়েছে হিমেল বাতাস। এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন থাকতে পারে।'
হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও কৃষিশ্রমিকেরা। তীব্র শীত উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে ও ফসলের মায়ায় মাঠে নামতে হচ্ছে তাদের।
বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, গঙ্গাধর, জিঞ্জিরাম ও ধরলা নদী–তীরবর্তী গ্রাম এবং দুর্গম চরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নিম্ন আয়ের অনেক মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
শীতের দাপটে কৃষিশ্রমিকেরা মাঠে কাজে আসতে চাইছেন না। ফলে ফসলের পরিচর্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভাটিবাড়ী গ্রামের কৃষক নরেন চন্দ্র বর্মণ (৬৬) বলেন, 'ভুট্টা ও আলুখেতে এখনই যত্ন নেওয়া দরকার। কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে আমাকে নিজেকেই মাঠে কাজ করতে হচ্ছে।'
শীতের সঙ্গে লড়াই করার কষ্টের কথা জানিয়ে এই কৃষক বলেন, 'খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু নিরুপায়। সংগ্রামটা একার হলেও ফসলটা সবার জন্য। আমরা ফসল না ফলালে দেশের মানুষ কী খাবে?'
একই কথা বলেন আদিতমারী উপজেলার বত্রিশহাজারী গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন (৬৮)। গায়ে জ্যাকেট আর মাথায় মাফলার পেঁচিয়ে ভুট্টাখেতে কাজ করছিলেন তিনি। লোকমান হোসেন বলেন, 'হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, তবু কাজ করতেই হচ্ছে। কুয়াশা আর শীতের সঙ্গে লড়েই আমাদের বাঁচতে হয়।'
শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে দিন পার করছেন দিনমজুরেরা। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামের দিনমজুর বদিয়ার রহমান (৬০) বলেন, 'সকাল ও রাতে কষ্ট সবচেয়ে বেশি হয়। খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে হচ্ছে। কাজের খোঁজে বাড়ির বাইরে যাওয়ার সাহসই পাচ্ছি না।'
তবে সংসারের প্রয়োজনে শীত উপেক্ষা করেই কাজে নামতে হচ্ছে অনেককে। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট গ্রামের কৃষিশ্রমিক মাহবুবর রহমান (৪৮) বলেন, 'গরম হোক বা ঠান্ডা—আমাদের মতো শ্রমজীবীদের মাঠে নামতেই হয়। এমন ঠান্ডায় প্রতিদিন কাজ করা সম্ভব নয়, তাই অনেকে এখন দৈনিক মজুরির বদলে চুক্তিভিত্তিক কাজে ঝুঁকছেন।'
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন সতর্ক করে বলেন, 'প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে শ্রমিকরা মাঠে কাজ করতে না পারলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শীত দীর্ঘস্থায়ী হলে কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।'

Comments