রংপুরে আরও ৯ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স-সাদৃশ্য উপসর্গ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় আরও নয়জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স-সাদৃশ্য উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার পাঁচজন রোগী পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যানথ্রাক্স-সাদৃশ্য উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে এলে বিষয়টি নজরে আসে। পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টিম রামনাথপুর ইউনিয়নের দারিয়াপুর গ্রামে গিয়ে আরও চারজনের শরীরে উপসর্গ দেখতে পান।
পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে তাদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
উপসর্গ দেখা দেওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১১ অক্টোবর ওই গ্রামে একটি গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটি জবাই করা হয়। এতে ১১ জন অংশ নিয়েছিলেন। গরুর মাংস ৫৫টি বাড়িতে বিতরণ করা হয়। ১৪ অক্টোবর পাঁচজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়। পরে তারা চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে আনেন।
তাদের একজন বলেন, 'আমিও ওই গরুর মাংস ভাগ পেয়েছিলাম এবং খেয়েছি। তবে এখনো আমার শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়নি।'
ডা. মাসুদ রানা বলেন, 'এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়। মানুষ থেকে মানুষে সহজে ছড়ায় না। তবে সংক্রামিত প্রাণীর সংস্পর্শে আসা বা আক্রান্ত প্রাণীর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে।'
তিনি আরও জানান, উপজেলা জুড়ে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে—কেউ যাতে অসুস্থ গরু জবাই না করে। যারা ওই অসুস্থ গরুর মাংস খেয়েছেন, তাদের তালিকা তৈরি করে নজর রাখা হয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফজলুল কবীর বলেন, 'উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ গবাদি পশু রয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অসুস্থ গরু কেনাবেচা বন্ধে আমরা কাজ করছি। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি।'
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, বুধবার পর্যন্ত রংপুরের পীরগাছায় ৩৮ জন, কাউনিয়ায় ১৮, মিঠাপুকুরে ১২, গঙ্গাচড়ায় সাত ও পীরগঞ্জে নয়জন শরীরে অ্যানথ্রাক্স-সাদৃশ্য উপসর্গ দেখা দেওয়ার কথা জানা গেছে। এর মধ্যে ৩৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা বলেন, 'জেলায় এখন পর্যন্ত ১১ জন অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যেহেতু ঘা শুকিয়ে গেলে নমুনা নেওয়া যায় না, তাই অনেকের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে যেসব এলাকায় রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং উপসর্গ দেখা দিয়েছে, সেখানে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে।'
Comments