প্রয়োজনে নিত্যপণ্য পরিবহনে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

নিত্যপণ্য পরিবহনে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

তিনি আরও জানান, শিগগির নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আগামী ১ মার্চ থেকে চালু হবে ৩৩৩ হটলাইন। কোনো ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করলে ভোক্তারা হটলাইনে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এসেনশিয়াল কমোডিটিতে দুটি পণ্যের মূল্য নির্ধারণের সরাসরি ক্ষমতা দেওয়া আছে। একটি হলো তেল, আরেকটি হলো চিনি। আমাদের অগ্রাধিকার তেল। তেলের দাম আমরা আগে সমন্বয় করব। পরবর্তীতে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে খেজুর ও অন্যান্য পণ্যে ইন্ডিকেটিভ প্রাইস সমন্বয় করা হবে। চিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এবং কৃষি পণ্যের জন্য কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, রোজার মধ্যে যাতে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য সরবরাহ ও দাম নিয়ে যাতে দ্বিধা না থাকে। আপনারা প্রত্যাশা করতে পারেন, রমজান শুরু হওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে আমরা যে শ্রম দিচ্ছি, সেটা বাস্তবায়ন হবে।'

এক প্রশ্নের জবাবে আহসানুল বলেন, 'আমরা প্রত্যাশা করছি, ভারত থেকে আমাদের পেঁয়াজ ও চিনি আসবে। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছিলেন, উনিও একইভাবে আশ্বস্ত হয়েছেন। আমরা আশা করি, সোমবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে একটি সুখবর পাব এবং কী প্রক্রিয়ায় কত তারিখ থেকে আমদানি শুরু করব, সেটা অনুমোদন পেলেই জানাতে পারব।'

বাংলাদেশ ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ ও এক লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানির চাহিদা দিয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন চিনির দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, রোজার আগে চাহিদার পুরো পরিমাণ পণ্য আমদানি সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, 'বিকল্প উৎসের কাছেও আমরা চেষ্টা করছি। গত বৃহস্পতিবার আমি চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারাও বলেছেন, পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই।'

নেপাল ও মিয়ানমার থেকে কিছু পণ্য আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও এ সময় জানান আহসানুল।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রভাব না পড়লেও বাজার মনিটরিংয়ের আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, চালের দাম খাত ভেদে দুই থেকে পাঁচ টাকা কমেছে। চালের সরবরাহ কোথাও অপ্রতুল নেই। আস্থা রাখতে হবে, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি—পণ্য সরবরাহে কোনো ঘাটতি থাকবে না এবং যৌক্তিক মূল্যে পাওয়া যাবে। সব সময় যৌক্তিক মূল্যে হয়তো প্রত্যাশিত মূল্যের চেয়ে একটু পার্থক্য থাকে। আমরা চেষ্টা করব, মূল্যটা যেন যৌক্তিক থাকে।'

তিনি আরও বলেন, 'কৃষকরা এখন যে দাম পাচ্ছে, পেঁয়াজ মাঠে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ঢাকায় কিন্তু ১২০ টাকার বেশি নেই। আগে যে রকম ৫০ আর ১০০ টাকা থাকতো, এই পার্থক্য কিন্তু কমে এসেছে। আমাদের কাটা (মুড়িকাটা) পেঁয়াজের মৌসুম প্রায় শেষ। এই জায়গাটা একটা গ্যাপ পিরিয়ড আছে। সেটাও আমাদের স্থানীয় উৎপাদক ও আমদানিকারক চেষ্টা করছেন, বাজারের যেন এই গ্যাপ না থাকে।'

কোনো বাজারে পণ্যের ঘাটতি নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'দামটা হয়তো আমরা প্রত্যাশিত পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারছি না। যে পরিমাণ সরবরাহ বাজারে এলে দামটা কমবে; শীতের পণ্যও এখন বাজারে নেই। শীতের সবজি কমতে থাকলে বাজারে ডিম বা অন্যান্য জিনিসের চাহিদা বেড়ে যায়। এগুলো বাজারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

'কারসাজি বা মজুতদারি কমে এসেছে। কেউ চেষ্টা করছে বলে গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে জানতে পারছি না। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। পণ্য পরিবহন ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা আরও ভালো করতে চাই। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে ট্রাক ভাড়া যেন বেড়ে না যায়, সেটা আমরা লক্ষ্য করব,' বলেন তিনি।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে প্রয়োজনে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

'বাসে যেমন ভাড়া নির্ধারিত আছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে তাদের জন্য একটা নির্ধারিত ট্যারিফ বিভিন্ন জেলা থেকে আমরা ঠিক করে দেবো,' যোগ করেন তিনি।

গত ১৫ দিন আগে ডিম ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, গতকাল ১৩৫ টাকা হয়েছে। ডিমের আবার সিন্ডিকেট হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'কোনো সিন্ডিকেট নেই। ডিমের দাম কোথাও ১২ টাকার বেশি হলে আমাদের জানাবেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।'

তিনি বলেন, 'ডিম উৎপাদনকারীরা আমাদের বলেছেন, রমজান পর্যন্ত ১২ টাকার উপরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। দুএকজন সুযোগ সন্ধানী থাকবে, এটা সাধারণভাবে না। উৎপাদকের মাঝখানে কয়েকটা হাত বদল হয়, ওইখানে হয়তো দুএকটা বাজারে, দুএকটা জায়গায় হতে পারে কিন্তু উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে এটা ঠিক আছে।'

হটলাইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মূল্য তালিকা পেলেই আমরা ওয়েবসাইটে দেবো এবং ট্রিপল থ্রিও চালু করে দেবো। আশা করছি, ১ মার্চের মধ্যে ৩৩৩ হটলাইন চালু হবে এবং কেউ দাম বেশি নিলে ভোক্তারা অভিযোগ করতে পারবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

6h ago