ইন্টার্ন চিকিৎসকের প্রচেষ্টায় বিনামূল্যে রামেক হাসপাতালে এলো ১৭ কোটি টাকার বিদেশি ওষুধ

ছবি: আজাহার উদ্দিন

বাংলাদেশের বাজারে ইনজেশনটির সম্পূর্ণ ডোজের জন্য খরচ পড়ে প্রায় দুই লাখ টাকা। জীবনরক্ষাকারী এই অতি উচ্চমূল্যের ওষুধটি কেনার সাধ্য নেই নিম্ন বা সীমিত আয়ের মানুষের। তবে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের প্রচেষ্টায় অন্তত ৫০০ জন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগী বিনামূল্যে পেতে যাচ্ছেন এই ইনজেকশন।

'আল্টেপ্লেজ' ইনজেকশনটি একটি যুগান্তকারী থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ, যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োগ করা হলে রোগীকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু বা স্থায়ী অক্ষমতা থেকে রক্ষা করা যায়। স্ট্রোক রোগীদের ক্ষেত্রে উপসর্গ শুরু হওয়ার সাড়ে চার ঘণ্টা ও হার্ট অ্যাটাক রোগীদের ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টার মধ্যে এই ইনজেকশন কার্যকর।

এরই মধ্যে মো. রফিকুল ইসলামের ভাইকে রামেক হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে এই ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে আমার ভাইয়ের তীব্র বুক ব্যথা শুরু হয়। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তাররা ইসিজি করে জানান ওনার হার্টে ব্লক আছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা এই ইনজেকশনের ব্যবস্থা করেন।'

তিনি বলেন, 'আমাদের কাছ থেকে হাসপাতাল কোনো টাকা নেয়নি। এতো দামী ওষুধ কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। বিনামূল্যে না পেলে আমার ভাই হয়তো বাঁচতো না।'

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক আজিজুল হক আজাদ জানান, একটি বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের হাসপাতালে ১৭ কোটি টাকা মূল্যের এসব ওষুধ দান করেছে।

তিনি বলেন, 'ইন্টার্ন চিকিৎসক শীর্ষ শ্রেয়ান নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ করে এই সহায়তা এনেছেন।'

গত ২০ আগস্ট ওষুধগুলো নেদারল্যান্ডস থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছায় এবং ২৫ আগস্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

রামেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি ইউনিটের নার্স ইনচার্জ শৈলী খাতুন বলেন, 'মোট ৫২টি ভায়াল কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে পৌঁছেছে এবং সেগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে আমরা দুই রোগীর জন্য ইনজেকশন অর্ডার করেছি, যার মধ্যে একজন ইতোমধ্যেই পেয়েছেন। রোগী এখন ভালো আছেন। ওজনভেদে প্রতি রোগীকে তিন থেকে পাঁচটি ডোজ দিতে হয়।'

শীর্ষ শ্রেয়ান রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৬১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক। তিনি বিশ্ব স্ট্রোক অর্গানাইজেশন, ডিরেক্ট রিলিফ ও অ্যাঞ্জেলস ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে সমন্বয় করে ওষুধগুলো এ দেশে এনেছেন।

শ্রেয়ান বিশ্ব স্ট্রোক অর্গানাইজেশনের সঙ্গে গবেষণা করে আসছেন। সম্প্রতি তিনি তাদের অবহিত করেন, এত ব্যয়বহুল ইনজেকশন কেনার সামর্থ্য না থাকায় বাংলাদেশে বেশিরভাগ স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগী মারা যান বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন।

সরকারের পক্ষে এই ইনজেকশন বিনামূল্যে দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংস্থা ডিরেক্ট রিলিফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শীর্ষ শ্রেয়ান। ওই সংস্থার কাছে এই ইনজেকশনের প্রায় পাঁচ হাজার ভায়াল মজুত ছিল।

দ্য ডেইলি স্টারকে শ্রেয়াণ বলেন, 'ডিরেক্ট রিলিফের পরিচালক যখন রামেক হাসপাতালের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানলেন, তখন তিনি আড়াই হাজার ইনজেকশন বিনামূল্যে দিতে সম্মত হন।'

'এ সহায়তার ফলে রামেক হাসপাতালে অন্তত ৫০০ রোগী এখন বিনামূল্যে আল্টেপ্লেজ ইনজেকশন পাবেন। বহু পরিবার তাদের প্রিয়জনকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে পারবেন,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Badruddin Umar: An overlooked yet everlasting beacon of light

The best way to honour Badruddin Umar is to read him, to learn from his words and thoughts

37m ago