মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

মানসিক রোগীদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা এখনো অধরা

আজ ১০ অক্টোবর, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। মানসিক রোগীদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার ব্রত নিয়ে এ বছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে।

তবে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা এখনো মান্ধাতার আমলে আটকে আছে। এখানে এখনো অনেকে এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে দ্বিধা বোধ করেন। কারণ মানসিক রোগকে সমাজে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়।

এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানান কুসংস্কার। ফলে অনেকে সময়মতো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা পর্যন্ত পায় না। এতে রোগীরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়।

আবার পদ্ধতিগত ঘাটতি ও সঠিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তার সংকটও আছে। এজন্য যারা স্বাস্থ্যসেবা চান তারাও সময়মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা পেতে রীতিমতো লড়াই করেন।

পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার খাদিজা বেগমের (৩৫) ৫ বছর আগে সংসার বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় নানান মানসিক সমস্যা। প্রথম দিকে পরিবারের সবাই কালাযাদু নানা রকম ঝাঁড়-ফোঁক করেছে। পরে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে পাবনার মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সময়মত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ায় এখন তার অবস্থা শোচনীয়।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের সিনিয়র সাইক্রিয়াটিস্ট ডা. মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই রোগীকে রোগের শুরুর দিকে আনলে তার এ অবস্থা হত না। এখন তার অবস্থা শোচনীয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একমাস দেখার পর যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।'

ডা. মাসুদ বলেন, 'দেশে প্রায় ১৭ শতাংশ মানসিক রোগী রয়েছে, যার একটি বড় অংশই নূন্যতম চিকিৎসা পায় না। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি হচ্ছে না।'

পাবনা মানসিক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন এক নারী।

মানসিক ভারসাম্য হারানো অবস্থায় তাকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর বাজারে পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় কয়েকজন সমাজসেবী পাবনা মানসিক হাসপাতালে আনেন। তবে নাম-পরিচয়হীন রোগী ভর্তির সুযোগ না থাকায় তাকে ফিরে যেতে হয়েছে।

ওই নারীকে আনা সমাজকর্মী আতিউর রহমান আতিক বলেন, এখন কীভাবে এই রোগীর চিকিৎসা হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট ডা. এহিয়া কামাল জানান, কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী সঠিক ঠিকানা ও পরিচয়পত্র ছাড়া রোগী ভর্তির সুযোগ নেই।

অথচ, হাসপাতালের ভেতরের দৃশ্যও কম করুণ নয়। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালে কোনো জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা নেই।

ডা. মাসুদ রানা জানালেন, যদি ভেতরে ভর্তি থাকা কোনো রোগীর হঠাৎ জরুরি সেবা দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়, তবে তাকে বাইরে অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

অনেক আগে থেকেই দেশের এ বিশেষায়িত হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই বলে জানান তিনি।

হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট ডা. এহিয়া কামাল বলেন, ৩১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ২৬ জন চিকিৎসক আছে। তবে পাঁচশ শয্যার তুলনায় এই জনবল যথেষ্ট নয়।

তিনি জানান, সরকারের পরিকল্পনা আছে পাবনা মানসিক হাসপাতালকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার।

'প্রস্তাবিত প্রকল্পে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ সব প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। এই প্রকল্প অনুমোদিত হলে দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আরও জোরদার হবে,' বলেন তিনি।

ওষুধের ঘাটতি

এই হাসপাতালের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাব আছে। প্রয়োজনীয় কমপক্ষে দশ ধরনের ওষুধের বদলে মাত্র ছয় ধরনের অ্যান্টি-সাইকোটিক ওষুধ মজুত আছে। আর মুড স্ট্যাবিলাইজারের আছে কেবল একটি ভ্যারাইটি।

এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, কয়েকমাস ধরে ওষুধের নতুন কোনো সরবরাহ নেই। যা আছে তা দিয়েই কোনোমতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা চলছে।

ওষুধ স্বল্পতার জন্য দুর্ভোগে পড়ছেন পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দূর-দুরন্তের রোগীরা।

বগুড়া থেকে আসা মো. হাসান বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসাপত্র পেলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ পাননি।

তিনি বলেন, ডাক্তাররা পরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দিয়েছেন। আমরা সাধারণত আউটডোর থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পাই। কিন্তু এবার হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ না নিয়েই ফিরতে হলো।

Comments

The Daily Star  | English

Only one agreement under Indian line of credit cancelled: Foreign adviser

Touhid says several agreements mentioned in social media discussions 'don't even exist'

1h ago