ভাঙ্গুরায় রেলের জমিতে অবৈধ শত শত স্থাপনা

ভাঙ্গুরায় রেলওয়ের জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনা। ছবি: স্টার

পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলায় রেলওয়ের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান, মার্কেট, আবাসিক ভবন, চলাচলের রাস্তা, শিশুপার্ক ও বাসস্ট্যান্ড।

রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের তথ্য বলছে, ভাঙ্গুরা বড়াল ব্রিজ স্টেশন ও ভাঙ্গুরা স্টেশন এলাকায় রেলের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ২৭৫ একর। এর মধ্যে প্রায় ৭৩ একর জায়গা রেলওয়ের অপারেশনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। রেলের অবশিষ্ট জায়গার বেশিরভাগই লিজ দেওয়া হয়েছে।

দুই স্টেশন এলাকার ৫ দশমিক ৩৭ একর ভূমির জন্য ২৩৫ জনকে বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ১৫০ একর জায়গা কৃষি জমি হিসেবে পেয়েছেন ১২৬ জন। আর ২৯ একর জলাভূমি পেয়েছেন ১৮ জন। ভাঙ্গুরার দুটি রেলওয়ে স্টেশন এলাকার প্রায় তিন একর জায়গা অবৈধ দখলে রয়েছে বলে জানায় রেলওয়ে বিভাগ।

ভাঙ্গুরা বড়াল ব্রিজ স্টেশনের বুকিং সহকারী মো. আল মামুন বলেন, রেলওয়ের জায়গায় গড়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক স্থাপনা, যার মধ্যে অনেকগুলো পাকা স্থাপনা, দোতলা-তিনতলা ভবনও রয়েছে।

তিনি জানান, রেলওয়ের জায়গায় গড়ে উঠেছে দোকানপাট, মার্কেট, আবাসিক ভবন, বাসস্ট্যান্ড, সিএনজিস্ট্যান্ড, মসজিদ, শিশুপার্ক, চলাচলের রাস্তাসহ নানা স্থাপনা। স্টেশন এলাকায় এখন জমজমাট যে বাজার রয়েছে, তার বড় অংশই রেলওয়ের জমিতে।

স্থানীয়রা জানান, রেলওয়ের অব্যবহৃত জমি লিজ নেওয়ার পর নিয়ম ভেঙে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ভাঙ্গুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাকী বিল্লাহর পরিবার বড়াল ব্রিজ স্টেশন এলাকার জমির লিজগ্রহীতা। তার দাবি, প্রয়োজনের তাগিদেই এসব স্থাপনা বৈধ-অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে।

বড়াল ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের পাশের একটি বিশাল জলাশয়ের বড় অংশ ভরাট করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট। আশপাশের অনেক পাকা ভবনের বেশির ভাগই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে রেলের জমিতে।

ভাঙ্গুরা পৌরসভারও বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে রেলের জায়গায়। পৌরসভার মার্কেট নির্মিত হয়েছে রেলের জমিতে। পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, রেলওয়ের কাছ থেকে লিজ নিয়েই মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। মার্কেটের দোকানগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে মাস চুক্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

ভাঙ্গুরার খাদ্য গুদামের কাছে রেলের জায়গায় পাকা রাস্তা নির্মাণ করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পৌরসভার শিশু পার্ক, বাসস্ট্যান্ড, সিএনজিস্ট্যান্ড, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ সবই গড়ে উঠেছে রেলের জায়গায়।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় অফিসের অন্তর্গত উল্লাপাড়া এস্টেট কার্যালয়ের কর্মকর্তা আবু বক্কার জানান, রেলের নিয়ম অনুযায়ী অব্যবহৃত জায়গা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড, কৃষিকাজ ও মৎস্য চাষের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

রেলের নিয়ম অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে জমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। বরাদ্দের এসব জমিতে কোনোভাবেই স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা যাবে না এবং লিজ নেওয়া জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।

রেলের জমিতে ভাঙ্গুরা পৌরসভার বিভিন্ন স্থাপনা এবং অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবু বক্কার জানান, তিনি নতুন এসেছেন। এসব দখল সম্পর্কে কিছু জানেন না।

রেলের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় ভূমি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, লোকবলের অভাবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বেশির ভাগ জায়গাই দেখভাল করতে পারছে না। লিজ দেওয়া জমি কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, তা দেখভাল করার মতো লোকবল নেই। দেখভালের অভাবেই বৈধভাবে লিজ নেওয়া জমিতে অনেকেই অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলছেন।

রেলওয়ে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায়। ভাঙ্গুরাতেও এর আগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালান হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

ভাঙ্গুরা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুন নাহার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি দখলের বিষয়ে জানেন না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও তাকে কিছু জানায়নি। তারা চাইলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Farewell

Nation grieves as Khaleda Zia departs, leaving a legacy of unbreakable spirit

8h ago