নভেম্বরে ডেঙ্গু সংক্রমণ সর্বোচ্চ, ভোগান্তিতে আক্রান্তদের পরিবার

মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের একই শয্যায় শুয়ে আছে ১২ বছর বয়সী নুহাস ও তার আড়াই বছর বয়সী বোন নাজাত। তাদের দুজনেরই ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। 

তাদের দাদি দিনা জানান, শুক্রবার নুহাসের জ্বর আসে। ডেমরার স্থানীয় একটি ক্লিনিকে তার চিকিৎসা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করা হয়। মঙ্গলবার তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়।

দিনা বলেন, নুহাস ভর্তি হওয়ার পর নাজাতেরও জ্বর হয় এবং বুধবার তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে।

তাদের মা সোনিয়া জানান, বৃহস্পতিবার নুহাসের প্লাটিলেট কাউন্ট ২৬ হাজারে নেমে আসে। এখন তার অবস্থার সামান্যই উন্নতি হয়েছে। চিকিৎসকরা এখনো নাজাতের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন।

পরিবার জানায়, তারা প্রয়োজন ছাড়া নাজাতকে ভর্তি করতে চাইছে না। কারণ তারা খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া তাকে স্যালাইনও দিতে চায় না।

মুগদার আরেকটি পরিবারও এমন অবস্থায় পড়েছে। মঙ্গলবার চার বছর বয়সী মোহাম্মদ বাগদাদকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। 

মা সামসুন্নাহার জানান, রোববার থেকে তার জ্বর ছিল। এই হাসপাতালে আসার আগে ইসলামিয়া হাসপাতালে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। 'তার এখনও জ্বর এবং পেটে ব্যথা আছে,' বলেন তিনি।

বাগদাদের দুই বছর বয়সী বোন কানিজ ফাতিমাও সোমবার থেকে জ্বরে ভুগছে। কিন্তু তাকে ভর্তি করা হয়নি। ডাক্তাররা তাকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন, জানান সামসুন্নাহার।

এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নভেম্বরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা এ বছরের সর্বোচ্চ। যদিও সম্প্রতি তা কমতে শুরু করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে ৩৭৭ জন মারা গেছেন। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৩ হাজার ১৯৪ জন। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে ৯৪ জন মারা গেছেন, যা এক মাসে সর্বোচ্চ। এর আগে অক্টোবরে ৮০ জন ডেঙ্গুতে মারা যান।

নভেম্বরে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। অক্টোবরে এই সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৫২০।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পোকামাকড় বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গুর সংখ্যা সামান্য কমবে এবং জানুয়ারির শেষের আগ পর্যন্ত তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে না।

তিনি বলেন, 'ঢাকার বহুতল ভবনের বেসমেন্টে এডিস মশা ঘন ঘন বংশবিস্তার করছে। এই ঘটনা বৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এগুলো অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি।'

এই অধ্যাপক পুরান ঢাকার নির্মাণাধীন ভবন এবং পরিত্যক্ত কাঠামোগুলোকে মশার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ প্রজনন অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, ভবনের বেসমেন্ট, পরিত্যক্ত ভবন এবং নির্মাণ স্থান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

কবিরুল বাশার সতর্ক করে বলেন, পুরান ঢাকার কিছু অংশে পানি সরবরাহ অনিয়মিত। এ কারণে বাসিন্দারা পানি ধরে রাখেন। এতে মশার প্রজননের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

'বাসিন্দাদের উচিত প্রতি তিন থেকে সাত দিন অন্তর পানি ভর্তি করার আগে ডিটারজেন্ট দিয়ে পাত্র পরিষ্কার করা,' বলেন তিনি।

কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর ঘটনা ধীরে ধীরে কমতে পারে, তবে শিগগির তা অদৃশ্য হবে না।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমবে। সতর্ক করে এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, কিউলেক্স মশার সংখ্যা বাড়ছে এবং জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে।

তার পরামর্শ, পানি জমানোর পাত্র শুকনো থাকলেও তাতে ডিম থাকতে পারে। এগুলো সঠিকভাবে নষ্ট করতে হবে। সক্রিয় প্রজনন স্থানগুলো অবিলম্বে ধ্বংস করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সময় বেশি নেই। 

'যদি এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে মার্চ বা এপ্রিল মাসের প্রথম বৃষ্টির পর সাধারণত যে ডেঙ্গুর ঢেউ আসে, তা কিছুটা পেছাতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body taken to Parliament Complex ahead of janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

2h ago