ইরান-ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, পাল্টা হামলায় নতুন করে ধ্বংসযজ্ঞ

ইরান ও ইসরায়েলের হামলাস্থলগুলো।

মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রতিপক্ষ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার বহুদিনের টানাপোড়েন এবার পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি 'যুদ্ধ শুরু' বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এর আগে, গত শুক্রবার ইসরায়েলের আকস্মিক বিমান হামলার মাধ্যমে যুদ্ধের সূচনা হয়। ইরানের বেশ কিছু পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে আঘাত হানে ইসরায়েল।

পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইসরায়েলের বড় শহরগুলোর ওপর শত শত ড্রোন ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে প্রতিশোধ নেয়।

এ যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি, হামলার স্থানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মানচিত্রে চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

চলমান সংঘাতের ষষ্ঠ দিনে বুধবার জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর বরাতে এএফপি জানায়, ইরানে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ সেন্ট্রিফিউজ নির্মাণে ব্যবহৃত দুটি ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। তেহরানের খুব কাছে কারাজ শহরে ওই দুই পরমাণু স্থাপনার অবস্থান।

এছাড়া, ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে ৪০টির বেশি সামরিক স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে ইসরায়েল।

অপরদিকে, বুধবার সকালে একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইসরায়েলে আঘাত করে। এতে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে যায় বলে ইরানের ফারস নিউজ এজেন্সির বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ইরানের লক্ষ্যবস্তুগুলোর অন্যতম ছিল উত্তর ইসরায়েলের মেরন বিমানঘাঁটি।

এর আগে, তেল আবিবের দক্ষিণে বাত ইয়ামে ইসরায়েলে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।

রিশন অঞ্চলে একাধিক বাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে এবং পুরো এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি বাড়িয়েছে।

তেল আবিবের সংলগ্ন রামাত গান শহরে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বেশ কয়েকটি টাওয়ার ও আবাসিক কমপ্লেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে নয়টি ভবন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

গত শনিবার ইরানের ছোড়া ক্ষেপনাস্ত্র তেল আবিবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর (কিরিয়া) থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে আঘাত করেছে।

গত ১২ থেকে ১৬ জুনের মধ্যে ইসরায়েল ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা, তেহরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দর, গ্র্যান্ড বাজারের আশপাশে, ইসফাহান, হামেদান, তাবরিজের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও কমান্ড সেন্টারে হামলা করে।

সবচেয়ে বেশি বোমাবর্ষণ হয় রাজধানী তেহরানে। সেখানকার শারান অয়েল ডিপোর আগুন ও ধ্বংসস্তূপে ঢেকে যায় অনেক ভবন।

জবাবে ইরান তেল আবিবে একাধিক হামলা চালায়। এতে সেখানকার অনেক আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়। ইরানের হামলায় হাইফার তেল পরিশোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গত সোমবার তেল আবিবে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের একটি ভবন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রিড।

ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (আইএসডব্লিউ) এবং এইআই ক্রিটিক্যাল থ্রেটস প্রজেক্টের বিশ্লেষণ অনুসারে, ইসরায়েল 'ইরানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মিসাইল লঞ্চার ধ্বংস করেছে।' ইসরায়েলে পৌঁছাতে সক্ষম ইরানের এমন ক্ষেপণাস্ত্রের মজুতও ধীরে ধীরে কমছে।

ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশের সীমান্তের মধ্যকার সর্বনিম্ন দূরত্ব ৯০৬ কিলোমিটার এবং দুই প্রধান শহর তেহরান ও তেল আবিবের মধ্যকার দুরত্ব ১ হাজার ৯০৬ কিলোমিটার।

ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ছোড়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো হলো—১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার শাহাব-৩, ১ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার পাল্লার হাভেইজেহ, ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পাল্লার এমাদ এবং ২ হাজার কিলোমিটার পাল্লার হোরামশাহর, সেজিল ও খাদের।

এগুলো সবই ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম। তবে যুদ্ধের প্রথমদিকেই ইরান এসবের এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ফেলেছে বলে জানিয়েছে আইএসডব্লিউ।

ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েল আয়রন ডোম, ডেভিড স্লিং, অ্যারো টু ও অ্যারো থ্রি—এই চার স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে।

তবে, ইরান নতুন ধরনের কৌশল ব্যবহার করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা স্তরগুলোকে ফাঁকি দিতে পারায় কিছু ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, হামলা-পাল্টা হামলায় ইরানে ২২৪ জনের বেশি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলে নিহতদের মধ্যে অন্তত ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia’s body taken to Parliament Complex ahead of janaza

Janaza will be held at Manik Mia Avenue at 2pm

3h ago