সুদান

সংকট সমাধানে চীন কি ভূমিকা রাখতে পারে?

সুদানে সংঘর্ষ
রক্তক্ষয়ী সংঘাত থেকে বিদেশিদের সরিয়ে নিতে সুদানের পোর্ট সুদানে সৌদি রাজকীয় নৌবাহিনী। ছবি: রয়টার্স

আফ্রিকায় বেশ প্রভাবশালী চীন। পূর্ব আফ্রিকার দেশ সুদানে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে সেখানকার নিয়মিত সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফ'র মধ্যে যে সংঘর্ষ হচ্ছে তা বন্ধে বেইজিং হয়তো সহযোগিতা করতে পারে—এমন আশা বিশ্লেষকদের।

আজ সোমবার চীনের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্লেষকরা মনে করছেন—চীন হয়তো সুদানের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে সহযোগিতা করতে সক্ষম। যদিও বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।

গত ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া সংঘর্ষে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৪২০ জন নিহত ও ৩ হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন।

চীনের ঝেজিয়াং ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মা শিয়াওলিন মনে করেন, 'গত মাসে চীনের মধ্যস্থতায় চিরবৈরী সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে শান্তিচুক্তি হয়েছে। এর মানে এই নয় যে সুদানের সংঘাত বন্ধেও চীন সফল হবে।'

'তবে এই সংকট সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চীন সুবিধাজনক অবস্থানে আছে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সুদানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো। দেশটির বিবদমান ২ পক্ষেরই চীনের ওপর আস্থা আছে।'

সংঘর্ষ শুরুর পরদিন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, 'বেইজিং মনে করে, সুদানের বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনায় জোর দেবে এবং যৌথভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে।'

সুদানে সংঘর্ষ
সুদানের রাজধানী খার্তুমে সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ। ছবি: রয়টার্স

লন্ডনের কিং কলেজের লাউ চায়না ইনস্টিটিউটের প্রভাষক জেনো লিওনি গণমাধ্যমটিকে বলেন, 'চীনের জন্য সুদান গুরুত্বপূর্ণ। বেইজিংয়ের যে পররাষ্ট্রনীতি তাতে আফ্রিকার এই অঞ্চলে সুদান চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হতে পারে।'

'এছাড়াও, সুদান দীর্ঘদিন ধরে বেইজিংয়ের সমর্থক। চীন তার পররাষ্ট্রনীতির কারণে আফ্রিকায় বিশেষ গুরুত্ব রাখে।'

তার মতে, 'সুদানে চীনের স্বার্থ হচ্ছে সংকটের সমাধান করে সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে সেখানকার তেল রপ্তানি নিশ্চিত করা।

বিশেষজ্ঞদের মতে—অর্থনৈতিকভাবেও চীন আফ্রিকার এই সংঘাতপীড়িত দেশটিতে অবদান রাখতে পারে।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট হানা রাইডার বলেন, 'সুদান সংকট সমাধানে আফ্রিকান ইউনিয়ন ও ইন্টারগভর্নমেন্ট অথরিটি অন ডেডেলপমেন্ট মধ্যস্থতার কাজ করছে। এক্ষেত্রে চীনও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।'

'আফ্রিকান ইউনিয়নের ভূমিকাকে চীন সমর্থন দিতে পারে। সুদানের সমস্যা সমাধানে চীন নিরপেক্ষ ভেন্যু হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে,' যোগ করেন তিনি।

২০১১ সালে সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান হওয়ার আগে থেকেই বিদেশে জ্বালানিখাতে চীনের বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল সুদান। চীনের মোট জ্বালানি চাহিদার ৫ শতাংশের বেশি সেখান থেকে আসতো।

এখন চীনের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ২ শতাংশ আসে দক্ষিণ সুদান থেকে আসে।

বড় বড় তেলখনিগুলো দক্ষিণ সুদানে হলেও তেলের পাইপলাইন ও অন্যান্য স্থাপনাগুলোর মালিক সুদান। এগুলোর মাধ্যমেই চীনে জ্বালানি তেল রপ্তানি করা হয়।

সুদান ও দক্ষিণ সুদানে তেল অনুসন্ধান ও পাইপলাইন নির্মাণে চীন বিনিয়োগ করে চলছে।

বর্তমানে সুদানে নির্মাণকাজের ৫০ শতাংশের বেশি চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো দেখভাল করছে। এখন পর্যন্ত চীন পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির অন্যতম শীর্ষ বিনিয়োগকারী।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, সুদানে ১৩০টি চীনা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ ও প্রকল্প পরিচালনা করছে। ২০২০ সালে দেশটিতে প্রচুর সংখ্যক চীনা শ্রমিক কাজ করতো।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন যে—সুদানের সমস্যা অভ্যন্তরীণ, আন্তর্জাতিক নয়। তাই সবার আগে প্রয়োজন দেশটির বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা।

এই সমঝোতার পথে চীন কতটা ভূমিকা রাখে এখন তাই দেখার বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

7h ago