‘নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করুন’, ট্রাম্পকে ৬০০ সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তা

ঘনিষ্ঠ মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ঘনিষ্ঠ মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে গাজার যুদ্ধ বন্ধ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রায় ৬০০ সাবেক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানরাও আছেন।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। 

হামাস এখন আর হুমকি নয়

ট্রাম্পকে পাঠানো চিঠিতে ওই কর্মকর্তারা বলেন, 'আমাদের পেশাদারি মূল্যায়ন হলো, হামাস এখন আর ইসরায়েলের প্রতি কোনো ধরনের কৌশলগত হুমকি সৃষ্টি করছে না।'

গাজার যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
গাজার যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

সাবেক কর্মকর্তারা চিঠিতে ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, 'বেশিরভাগ ইসরায়েলি আপনার ওপর ভরসা করে, এবং তাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী (বেনিয়ামিন) নেতানিয়াহু ও তার সরকারকে সঠিক পথে পরিচালনা করার ক্ষমতা আপনার আছে। এই যুদ্ধের অবসান ঘটান, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন এবং সবার দুর্ভোগ দূর করুন'।

এমন সময় কর্মকর্তারা এই আহ্বান জানালেন যখন নেতানিয়াহু নতুন করে সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিচ্ছেন। হামাসের সঙ্গে জিম্মি মুক্তির আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দেওয়ায় তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সবার দুর্ভোগের অবসান ঘটানোর আহ্বান

ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পাঠানো খোলা চিঠিতে সবার দুর্ভোগের অবসান ঘটানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি হামাস ও ইসলামিক জিহাদ নামের সংগঠন দুই ইসরায়েলি জিম্মির ভিডিও প্রকাশের পর দেশটি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় বয়ে গেছে। ভিডিও থেকে বিষয়টি স্পষ্ট, জিম্মিরা ভালো করে খেতে না পেয়ে দুর্বল ও জীর্ণ হয়ে পড়েছেন।

অনাহারে জর্জরিত ইসরায়েলি জিম্মি এভিয়াতার ডেভিড। ছবি: হামাসের প্রকাশ করা ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিণশট/এএফপি।
অনাহারে জর্জরিত ইসরায়েলি জিম্মি এভিয়াতার ডেভিড। ছবি: হামাসের প্রকাশ করা ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিণশট/এএফপি।

ভিডিও প্রকাশের পর নেতানিয়াহু ওই দুই জিম্মির পরিবারকে আশ্বাস দেন, 'জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান আছে।'

তবে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা দাবি করেন, নেতানিয়াহু কূটনীতি বা দরকষাকষি নয়, 'সামরিক আগ্রাসন ও হামাসকে পরাজিত করেই' জিম্মিদের মুক্ত করতে চান।

জিম্মি হওয়া ইসরায়েলিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি অধিকার সংগঠন নতুন সামরিক অভিযান বা অভিযানের সম্প্রসারণের প্রতি নিন্দা জানিয়ে বলেছে, 'নেতানিয়াহু ইসরায়েল ও জিম্মিদের ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।'

যারা সই দিয়েছেন

খোলা চিঠিতে সই দেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান তামির পারদো, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের সাবেক প্রধান আমি আয়ালন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালনসহ আরও অনেকেই।  

আয়ালন বলেন, 'শুরুতে এটা শুধু একটি যুদ্ধ ছিল। প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ। এরপর আমরা সকল সামরিক লক্ষ্য পূরণ করলাম। তারপর থেকে এটাকে আর "শুধু যুদ্ধ" বলা যায় না।'

শিন বেটের সাবেক প্রধান আমি আয়ালন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
শিন বেটের সাবেক প্রধান আমি আয়ালন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

সাবেক কর্মকর্তারা কমান্ডার্স ফর ইসরায়েল'স সিকিউরিটি (সিআইএস) গ্রুপ নামের সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করছেন। তারা সরকারকে এর আগেও জিম্মিদের মুক্তির দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তারা বলেন, 'গাজার যুদ্ধ বন্ধ করুন! সাবেক আইডিএফ জেনারেল, মোসাদ, শিন বেট, পুলিশ ও কূটনীতিবিদদের সবচেয়ে বড় সংগঠন সিআইএসের পক্ষ থেকে আমরা গাজার যুদ্ধ বন্ধের অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনি লেবাননে এটা করে দেখিয়েছেন। এখন গাজায় এটা করে দেখানোর সময় এসেছে।'

গাজার পরিস্থিতি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। ওই হামলার জবাবে সেদিনই গাজায় নজিরবিহীন প্রতিশোধমূলক আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। 

প্রায় দুই বছরের আগ্রাসনে ৬০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ—নারী ও শিশু। 

গাজায় গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে অন্তত ২৪ জন ত্রাণ নিতে এসে মারা পড়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের প্রহরায় ভাঙা হচ্ছে দালান। ছবি: এএফপি
গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের প্রহরায় ভাঙা হচ্ছে দালান। ছবি: এএফপি

পাশাপাশি, ওই অঞ্চলে চলছে তীব্র খাদ্য সংকট। গাজায় ত্রাণ প্রবেশে চূড়ান্ত পর্যায়ের বাধার সৃষ্টি করে ইসরায়েল যার ফলে, ৯৩ শিশুসহ মোট ১৮০ জন অপুষ্টি ও অনাহারে মৃত্যুবরণ করেছেন। 

জাতিসংঘের সমর্থনপুষ্ট সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় 'সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি' দেখা দিয়েছে।

কী করবেন ট্রাম্প? 

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আদৌ নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাপ দেবেন কী না, বা দিলেও, সেটা কীভাবে দেবেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে মিত্র নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে গেছেন ট্রাম্প। তবে গত সপ্তাহে ট্রাম্প স্বীকার করেন, 'গাজায় প্রকৃতপক্ষে অনেক মানুষ না খেয়ে আছে'।

'গাজায় কেউ ক্ষুধার্ত নেই', নেতানিয়াহু এমন দাবি করলে ট্রাম্প তার বিপরীতে যেয়ে ওই মন্তব্য করেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

2h ago