‘জনসমর্থন ছাড়া নির্বাচন দেশের মানুষের কোনো উপকারে আসবে না’

আরাকান আর্মির সেনাদের প্রশিক্ষণ। ফাইল ছবি: আরাকান আর্মির সামাজিক মাধ্যম পোস্ট
আরাকান আর্মির সেনাদের প্রশিক্ষণ। ফাইল ছবি: আরাকান আর্মির সামাজিক মাধ্যম পোস্ট

সম্প্রতি মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম করতে ইতোমধ্যে দেশটি থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তবে জান্তার এই পরিকল্পনায় বাদ সেধেছে দেশটির শক্তিশালী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। তাদের দাবি, জনসমর্থন ছাড়া নির্বাচনে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হবে। এতে কারো উপকার হবে না।

আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি। 

জান্তার ভাষ্য, চলমান গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে ডিসেম্বরে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে।

২০২১ সালে ক্যুর মাধ্যমে অং সান সুচির সরকারকে উৎখাত করেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। সে সময় থেকেই মিয়ানমারে চলছে গৃহযুদ্ধ। বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সামরিক সরকারকে হঠাতে তৎপর হয়েছে।

এই সংঘাতে ইতোমধ্যে দেশের ভূখণ্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সরকার।

সরকার বিরোধী পক্ষের সবচেয়ে বড় নাম আরাকান আর্মি (এএ নামেও পরিচিত)। সর্বশেষ তথ্য মতে, পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ এখন ওই গোষ্ঠীর হাতে।

শুধু আরাকান আর্মি নয়, আরও বেশ কয়েকটি গোত্রভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে লড়ছে সামরিক বাহিনী।

গত মাসে জান্তা  জরুরি অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে ক্যুর সময় ক্ষমতাচ্যুত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা এবং অন্যান্য বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ এই নির্বাচনকে 'প্রতারণা' বলে আখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, কৌশলে মিয়ানমারে জান্তা তাদের সামরিক শাসন অব্যাহত রাখতে এই উদ্যোগ নিয়েছে।

আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থু খা জানান, রাখাইন রাজ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।

ওই রাজ্যের ১৭ টাউনশিপের মধ্যে ১৪টিই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আছে বলে সংঘাত পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন।

আরাকান আর্মির মহড়া। ফাইল ছবি: আরাকান আর্মির সামাজিক মাধ্যম পোস্ট
আরাকান আর্মির মহড়া। ফাইল ছবি: আরাকান আর্মির সামাজিক মাধ্যম পোস্ট

লাইভস্ট্রিমে প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনে খাইং থু খা বলেন, 'জনসমর্থন ছাড়া নির্বাচন দেশের মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। এটা জনমানুষের মনে আরও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।'

'সামরিক কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে থাকা জায়গাগুলোতে নির্বাচন হলেও আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় নির্বাচন হতে দেব না', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'নিশ্চিতভাবেই, রাখাইনের মানুষ এই নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী নয়।'

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের পাঁচ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ২৫ লাখের বসবাস।

শুরুতে আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে গেলেও পরবর্তীতে ২০২৩ সালের শেষ দিকে ওই চুক্তি ভেস্তে যায়। সে সময় থেকে সংগঠনটি অন্যান্য স্বাধীনতাকামী সংগঠনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাদের সমন্বিত উদ্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে জান্তা।

জবাবে তীব্র বিমান হামলা চালানোর পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যকে কার্যত দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে জান্তা।

এ মুহূর্তে রাখাইন রাজ্যের প্রায় পাঁচ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।

জান্তা বলেছে, তারা ওই রাজ্যের ১৪টি টাউনশিপে স্থানীয় পর্যায়ের জরুরি ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে, যাতে 'স্থিতিশীলতা, শান্তি ও আইনের শাসন অটুট থাকে।'

Comments

The Daily Star  | English

Farewell

Nation grieves as Khaleda Zia departs, leaving a legacy of unbreakable spirit

8h ago