বিনা ফিতে হিমালয়ের ৯৭টি চূড়ায় ওঠার সুযোগ, ৩৬% বাড়ছে এভারেস্টের ফি

হিমালয় পর্বতমালা। ফাইল ছবি: এএফপি
হিমালয় পর্বতমালা। ফাইল ছবি: এএফপি

সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্টে অভিযান পরিচালনার হিড়িক পড়েছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে অকাল মৃত্যুসহ নানা বিপর্যয়।

পর্যটক ও পর্বতারোহীদের বাড়তি আগ্রহে রাশ টেনে ধরতে নেপাল কর্তৃপক্ষ দ্বিমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এভারেস্টের বিকল্প ৯৭ পর্বতে বিনামূল্যে ওঠার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, আর অপরদিকে, এভারেস্টে ওঠার ফির বাড়ানো হচ্ছে।

গতকাল বুধবার যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি ও বার্তা সংস্থা এএফপি এসব তথ্য জানিয়েছে। 

ভরা মৌসুমে (এপ্রিল ও মে) এভারেস্টে ওঠার জন্য পর্বতারোহীদের ১৫ হাজার ডলার গুনতে হবে। সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই বর্ধিত ফি কার্যকর হবে।

এর আগে এই ফি ১১ হাজার ডলার ছিল। প্রায় এক দশক পর এই ফি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে নেপাল।

অন্যান্য মৌসুমের ফির ক্ষেত্রেও একই হারে (৩৬ শতাংশ) বাড়ছে ফি। শরৎকালে এই ফি সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে বেড়ে সাড়ে সাত হাজার ও শীত-বর্ষাকালে দুই হাজার ৭৫০ থেকে বেড়ে তিন হাজার ৭৫০ ডলার করা হয়েছে।

গত বছর পর্বতারোহণ ফি বাবদ প্রায় ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেছে নেপাল। তার মধ্যে এভারেস্ট থেকেই এসেছে ৭৫ শতাংশেরও বেশি।

অপরদিকে, এভারেস্টের ওপর চাপ কমাতে আগামী দুই বছর হিমালয়ের অপর ৯৭টি চূড়ায় বিনামূল্যে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশা, এই উদ্যোগে নেপালের কিছু দুর্গম জায়গায় পর্যটনের প্রসার ঘটবে।

দেশটির পর্যটক বিভাগ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের আশা এই উদ্যোগে দেশটির 'স্বল্প পরিচিত পর্যটন গন্তব্য ও সেসব এলাকার পণ্যের' প্রচার ঘটবে।

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ১০টি চূড়ার মধ্যে ৮টিই নেপালে অবস্থিত।

রাজস্বের বড় উৎস হিসেবে নেপালের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পর্বতারোহণ। গত বছর এই খাতে রাজস্ব আয় ছিল ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার, যার ৭৫ শতাংশই এককভাবে এভারেস্ট থেকে পাওয়া।

যেসব চূড়ায় বিনামূল্যে ওঠা যাবে, সেগুলো নেপালের কর্নালী ও সুদূরপশ্চিম প্রদেশে অবস্থিত। এগুলোর উচ্চতা পাঁচ হাজার ৯৭০ মিটার থেকে শুরু করে সাত হাজার ১৩২ মিটারের মধ্যে।

উভয় প্রদেশের অবস্থান নেপালের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে। এগুলো দেশটির সবচেয়ে হতদরিদ্র ও স্বল্পোন্নত অঞ্চলের অন্যতম। 

নেপালের পর্যটন বিভাগের পরিচালক হিমাল গৌতম বলেন, 'অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও ওই অঞ্চলগুলো পর্যটক ও পর্বতারোহীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। আশা করছি নতুন নীতি এই ধারায় পরিবর্তন আনবে।'

ওই দুর্গম এলাকায় অবকাঠামো ও যোগাযোগ উন্নয়নের কোনো পরিকল্পনার কথা জানানো হয়নি। পাশাপাশি, সেখানকার মানুষ বাড়তি পর্যটক ও পর্বতারোহীর ভিড় কীভাবে সামলাবে, সেটা নিয়েও কিছু জানানো হয়নি।

এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন পর্বতারোহী। ফাইল ছবি: রয়টার্স
এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন পর্বতারোহী। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নেপালের দুর্গম এলাকায় অবস্থিত ওই ৯৭ চূড়ার বিষয়ে পর্বতারোহীদের আগ্রহ বরাবরই কম। গত দুই বছরে সেখানে মাত্র ৬৮ জন পর্বতারোহী গেছেন।

অপরদিকে, ২০২৪ সালে শুধু এভারেস্ট আরোহণের জন্যই ৪২১টি অনুমতিপত্র ইস্যু করা হয়েছে।

আট হাজার ৮৪৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এভারেস্টে সাম্প্রতিক সময়ে মাত্রাতিরিক্ত ভীরের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। পাশাপাশি, বেশ কয়েকজন পর্বতারোহীর মৃত্যুও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

২০২৪ সালের এপ্রিলে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে এভারেস্ট ও আরও বেশ কয়েকটি পর্বতে আরোহণের অনুমতিপত্রের সংখ্যা কমিয়ে আনার নির্দেশ দেয়।

পাশাপাশি, নেপালের পার্লামেন্টে অপর একটি প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা চলছে। এভারেস্টে ওঠার অনুমতি চাইতে হলে আগে নেপালেরও অন্য কোনো চূড়ায় (অন্তত সাত হাজার মিটার উঁচু) ওঠার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

অনভিজ্ঞ পর্বতারোহীদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়াতেই এই উদ্যোগ।

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্নালী ও সুদূরপশ্চিমের পর্বতচূড়া এভারেস্ট অভিযানে যাওয়ার জন্য 'উত্তম প্রশিক্ষণ' দিতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Dozens of zombie firms still trading as if nothing is wrong

Nearly four dozen companies have been languishing in the junk category of the Dhaka Stock Exchange (DSE) for at least five years, yet their shares continue to trade on the country’s main market and sometimes even appear among the top gainers. 

3h ago