ট্রাম্প-শুল্কে উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে ভারতীয় হীরা

ভারতীয় হীরা
বিশ্ববাজারে প্রতি ১৫টি কাটা হীরার ১৪টি আসে ভারত থেকে। ছবি: রয়টার্স

গুজরাটের সুরাট শহর। সেখানে হীরা কাটা ও পালিশের ছোট কারখানা চালান কালপেশ পাটেল। তার কারখানায় কাজ করেন জনা চল্লিশেক শ্রমিক। সেই কারখানার হীরা রপ্তানি হয় বিশ্ববাজারে।

আগামী দীপাবলিকে সামনে রেখে পুরোদমে কাজ চলছে কারখানাটিতে। প্রায় আট বছর পুরোনো এই কারখানার মালিক-শ্রমিক সবার চোখ অক্টোবরের এই উৎসবের দিকে। কারও দৃষ্টিতে, এটিই প্রধান সর্বভারতীয় উৎসব।

গত কয়েক বছর নানা উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে গিয়েছে কালপেশের ব্যবসা। এবার ভালো বিক্রির আশা করছিলেন তিনি। কিন্তু, বিধি-বাম।

ভারতীয় পণ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোকে তিনি দেখছেন 'কফিনের শেষ পেরেক' হিসেবে। তার কারখানা বন্ধ হয়ে যায় কিনা এখন সেই আশঙ্কাই দেখা দিয়েছে।

গত ১৩ আগস্ট আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়—ভারতে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ কাজ করেন হীরা শিল্পে। বিশ্ববাজারে প্রতি ১৫টি কাটা হীরার ১৪টি আসে ভারত থেকে।

ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের 'রাহু' যেন গ্রাস করতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই দেশের হীরা শিল্প। কালপেশ সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, 'দীপাবলিকে সামনে রেখে কিছু অর্ডার পেয়েছি। সেগুলো শেষ করার চেষ্টা করছি।'

'আশঙ্কা করছি, দীপাবলির আগেই কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উচ্চহারে শুল্ক ধরার কারণে অনেকে অর্ডার বাতিল করে দিতে পারে।'

বিদেশ থেকে কাজের অর্ডার না পেলে কর্মীদের বেতন-ভাতা দিয়ে কারখানা চালানো সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন ৩৫ বছর বয়সী কালপেশ পাটেল।

সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, সুরাটে প্রায় ২০ হাজার ছোট-মাঝারি হীরা ব্যবসায়ী আছেন। এই শহরটিকে ভারতের 'হীরার শহর' হিসেবে গণ্য করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, ভারতীয় হীরার একক বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ভারতীয় সংগঠন জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (জিজেইপিসি) হিসাবে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে কাটা ও পালিশ করা নানান ধরনের রত্ন রপ্তানি হয়েছিল চার দশমিক আট বিলিয়ন ডলার। ভারতে অর্থবছর শেষ হয় মার্চে।

একই সময়ে ভারত কাটা ও পালিশ করা হীরা রপ্তানি করে ১৩ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার।

কলকাতার হীরা রপ্তানিকারক ডিম্পল শাহ বলেন, 'উচ্চহারে শুল্ক চাপানোর জেরে মার্কিন ক্রেতারা পণ্য কিনতে নারাজ। হীরার বাজারে প্রায় ২০ বছর কাটিয়ে দিলাম। এমন দুর্দশা আগে দেখিনি।'

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনা মহামারীর সময় থেকে ভুগছিল ভারতের হীরা শিল্প। এরপর ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে তা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জি৭-এর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া থেকে কাঁচামাল হিসেবে হীরা আমদানির পথও বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া ভারতের শীর্ষ হীরা আমদানিকারক দেশ ছিল।

গত ১৪ এপ্রিল বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে চাহিদা কমে যাওয়ায় গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের হীরা রপ্তানি গত প্রায় ২০ বছরে সবচেয়ে কম।

জিজেইপিসির হিসাবে, তা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক আট শতাংশ কমে হয়েছে ১৩ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার।

তবে অনেকে আশা করছেন, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার হীরা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করতে পারে।

উত্তর প্রদেশের বারাণসী শহরের নারায়ণ দাস সারাফ জুয়েলার্সের পরিচালক রাধাকৃষ্ণ আগারওয়াল মনে করেন, মার্কিন শুল্ক ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে এই শিল্পকে আরও চাঙা করবে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, 'এটি শাপে বর হতে যাচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English
government action on illegal political gatherings

Local administration told to go tough, surveillance to be tightened on flash processions

Directives follow high-level meeting at chief adviser’s residence, says press secretary

43m ago