যে ফোনালাপ পাল্টে দিলো বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট

ট্রাম্প-মোদির ফোনকল। প্রতীকী ছবি: কোলাজ
ট্রাম্প-মোদির ফোনকল। প্রতীকী ছবি: কোলাজ

খুব মোটা দাগেই বলা যায় যে গতকালের পৃথিবী থেকে আজকের পৃথিবী আলাদা। তবে কতটুকু আলাদা তা হয়ত খোলা চোখে দেখা যাবে না। কিন্তু, একটি ফোনালাপে পাল্টে যাওয়া পৃথিবীকে খোলা চোখেই দেখেছে বিশ্ববাসী। সেই ফোনালাপ হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে।

গত ৩০ আগস্ট প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, সেই ফোনালাপেই ট্রাম্পের ওপর চটেছিলেন মোদি। সেই ফোনালাপেই ট্রাম্প-মোদির সম্পর্ক তিক্ততার দিকে মোড় নেয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার জোর দিয়ে প্রকাশ্যে বলে আসছেন যে তিনিই ভারত-পাকিস্তানের সামরিক সংঘাত 'বন্ধ' করেছিলেন।

Modi and Trump
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এপি ফাইল ফটো

গত ১৭ জুন ট্রাম্প বিষয়টি আবারও সামনে আনেন। গর্বের সঙ্গে বলেন, তিনিই দক্ষিণ এশিয়ার বিবদমান দুই পরমাণু শক্তিধরের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছেন। আরও বলেন, পাকিস্তান তাকে নোবেল পুরস্কারের জন্য 'মনোনয়ন' দিতে যাচ্ছে। তিনি আশা করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদিও একই কাজ করবেন।

এতে ক্ষিপ্ত হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ট্রাম্পকে বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকাই ছিল না। নোবেল নিয়েও কথা বাড়াতে চাননি মোদি।

মোদ্দা কথা, এই ফোনালাপ ট্রাম্প-মোদির সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি করেছে। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরিণত হয়েছেন বিরক্তিকর শত্রুতে। সেই শত্রুতার জের পড়েছে দুই দেশের বাণিজ্যেও। ভারতের রপ্তানি পণ্যে মার্কিন শুল্ক পড়েছে ৫০ শতাংশ।

এতেই থেমে যায়নি দৃশ্যপট। বরং এখান থেকেই যেন শুরু হলো এক নতুন বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে মুখ ফিরিয়ে মোদি তাকিয়েছেন বেইজিংয়ের দিকে। চীনের তিয়ানজিন দেখা গেল 'ড্রাগন-হাতি'র করমর্দন। সেখানে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনে বিশ্বের দুই জনবহুল দেশের নেতারা ইঙ্গিত দিলেন নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার। সঙ্গে যোগ দিলেন অপর পরাশক্তিধর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেদিনের ফোনালাপটি হয়েছিল ৩৫ মিনিট। ট্রাম্প তখন ছিলেন ওয়াশিংটনের এয়ার ফোর্স ওয়ানে। তিনি কানাডায় জি সেভেন সম্মেলনে থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসেন। সেই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদিও।

Modi and Trump-2.jpg
আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে অবতরণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানান নরেন্দ্র মোদি। ছবি: নরেন্দ্র মোদির টুইটার থেকে নেওয়া

সেসময় ট্রাম্প মোদিকে অনুরোধ করেন দেশে ফেরার আগে তিনি যেন ওয়াশিংটনে আসেন। তখন ভারতীয় কর্মকর্তারা মোদিকে সতর্ক করেন এই বলে যে ওয়াশিংটনে ট্রাম্প সম্ভবত সফররত পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের সঙ্গে তার মোলাকাত করিয়ে দিতে পারেন। সেই সময় পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল।

ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ভারতীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে মোদির সঙ্গে কথা বলা জন্য ট্রাম্প কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, মোদি কথা বলেননি।

তবে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি।

এরপর বিশ্ববাসী দেখলো—সাত বছর পর প্রতিবেশী চীনের গেলেন নরেন্দ্র মোদি। যে চীনকে মোকাবিলার জন্য ভারত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চার-জাতি জোটে যোগ দিয়েছিলেন সেই চীনকে নিয়ে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার বাণী শোনালেন মোদি।

এখন দেখার বিষয় রাশিয়া-চীন-ভারত ঐক্য কতদূর গড়ায়।

Comments

The Daily Star  | English

BNP says ‘no’ to constitutional reforms under interim govt

The BNP has said it will not support any constitutional reforms before the national election in February 2026, arguing that such changes must be made by the next parliament.

4h ago