জোহরান মামদানিকে হারাতে মাঠে নামছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জোহরান মামদানির লড়াই জমে উঠেছে। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জোহরান মামদানির লড়াই জমে উঠেছে। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত

মাত্র ৩৩ বছর বয়সী স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানিকে ৭৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেখছেন 'প্রেস্টিজ ইস্যু' বা 'ইজ্জত কা মামলা' হিসেবে। ট্রাম্প চান না স্বঘোষিত ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান বিশ্ববাণিজ্যের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক শহরের মেয়র হোক।

ডেমোক্র্যেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নিউইয়র্কের মেয়র পদে লড়ছেন জোহরান মামদানি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চক্ষুশূল। জোহরানের বিজয় ঠেকাতে তাই মাঠে মানতে হচ্ছে খোদ প্রেসিডেন্টকে—এমনটিই জানা গেল মার্কিন গণমাধ্যম সূত্রে।

ট্রাম্পের ইচ্ছা—জোহরানের বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থীর পরিবর্তে একজন প্রার্থী লড়াই করুক। তাহলে জোহরানবিরোধী সব ভোট পড়বে একজনের বাক্সে। আর এভাবেই জোহরানের পরাজয় নিশ্চিত করা যাবে।

শুধু ইচ্ছা করেই থেমে নেই ট্রাম্প। প্রিয় নিউইয়র্ক শহরকে একজন সমাজতান্ত্রিকের হাত থেকে বাঁচাতে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসকে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে উৎসাহ দিচ্ছেন হোয়াইট হাউসের এই সম্মানিত বাসিন্দা।

৬৫ বছর বয়সী এরিক ডেমোক্র্যেটিক পার্টির মেয়র হলেও এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। কেননা, দলে তার খ্যাতি তলানিতে। অপর ডেমোক্র্যেট নেতা ও নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ৬৭ বছর বয়সী অ্যান্ড্রু কুয়োমো দলীয় প্রার্থিতা বাছাইয়ে জোহরান মামদানির কাছে পরাজিত হয়ে নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমো। ছবি: রয়টার্স
নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমো। ছবি: রয়টার্স

এ ছাড়াও, মেয়র পদে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ৭১ বছর বয়সী কার্টিস স্লিওয়াকে 'বুঝিয়ে' বা 'ধমক' দিয়ে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। গত ৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের উপদেষ্টারা স্লিওয়ার জন্য নতুন চাকরির প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

শুধু স্লিওয়া নয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে নতুন চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে এরিক অ্যাডামসের জন্যও। জল্পনা উঠেছিল, এরিককে মধ্যপ্রাচ্যে রাষ্ট্রদূত করার কথা ভাবা হচ্ছে। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এরিকের দেওয়া বাণীতে তার মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রকাশ পাওয়ায় সেই জল্পনা আরও জেঁকে বসেছিল। তবে তার ভবিষ্যৎ এখনো ট্রাম্পের হাতেই বন্দি।

ফ্লোরিডার ভোটার হলেও ট্রাম্প নিউইয়র্কের পুরোনো বাসিন্দা। তিনি চান নিউইয়র্কের মেয়র পদটিকে ডেমোক্র্যেটদের হাত থেকে 'ছিনিয়ে' নেওয়া হোক। এই কাজে তিনি ভরসা রাখতে চান অ্যান্ড্রু কুয়োমোর ওপর। ট্রাম্প মনে করছেন, কুয়োমো বর্ষীয়ান নেতা। তিনিই পারবেন জোহরানবিরোধী ভোটগুলো একত্রিত করতে।

বার্ধ্যককে জয় করেছেন ৭৯ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
বার্ধ্যককে জয় করেছেন ৭৯ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

সম্প্রতি, হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের আসন্ন মেয়র নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি মনে করি—যতক্ষণ না আপনি একক প্রার্থী দিচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার জেতার সম্ভাবনা নেই। আমি চাই নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে দুই প্রার্থী সরে দাঁড়াক। তখন নির্বাচন হবে একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনের। আমার মনে হয়, সেটাই হবে আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।' ট্রাম্পের এই মন্তব্যে এটা পরিষ্কার হয় যে, তিনি চান জোহরানের বিরুদ্ধে একজন লড়াই করুক।

সেই হিসাবে ট্রাম্প সমর্থন দিচ্ছেন কুয়োমো কে। কেননা, এরিকের ভোটার কমেছে আর নিউইয়র্কের মতো একটি ডেমোক্র্যেট শহরে রিপাবলিকান স্লিওয়ার জেতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ২০২১ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে দাঁড়িয়ে ডেমোক্র্যেট এরিকের বিরুদ্ধে স্লিওয়া পেয়েছিলেন প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট। এবার তিনি জেতার আশা করলেও ট্রাম্প তার ওপর খুব একটা ভরসা করতে পারছেন না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্লিওয়ার অনেক সমর্থক সাবেক গভর্নর কুয়োমো কে ভীষণ অপছন্দ করেন। কেননা, গভর্নরের পদ থেকে তাকে সরতে হয়েছিল যৌন কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে। আবার, বিতর্কিত ব্যক্তি কুয়োমো কে ট্রাম্প সমর্থন দেওয়ায় অনেক ট্রাম্প-ভক্ত যারপরনাই নাখোশ।

গত ৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কভিত্তিক গণমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়, 'নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে হোয়াইট হাউসের হস্তক্ষেপের সংবাদকে 'গণতন্ত্রের অবমাননা' হিসেবে অভিহিত করেছেন জোহরান মামদানি।

এ বিষয়ে জোহরানের বক্তব্য—'সবাই জেনে গেছেন অ্যান্ড্রু কুয়োমো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থী। নিউইয়র্কবাসী দীর্ঘদিন ধরে এমনটিই সন্দেহ করছিলেন।'

নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: রয়টার্স
নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: রয়টার্স

তিনি আরও বলেন, 'খবরে প্রকাশ হোয়াইট হাউস থেকে এরিক অ্যাডামস ও কার্টিস স্লিওয়াকে নতুন চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে ভাবছি না। আমরা গতকাল যেমন আত্মবিশ্বাসী ছিলাম আজকেও তেমন আত্মবিশ্বাসী আছি। আগামী নভেম্বরে আমরাই জিতবো।'

গত ৫ সেপ্টেম্বর জোহরান মামদানির প্রচারণা দল ফক্স নিউজ ডিজিটালকে এক বার্তায় বলেছে, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সত্যিই মেয়র প্রতিযোগিতায় হস্তক্ষেপ করতে চান তাহলে তার উচিত নিউইয়র্ক শহরে আসা।'

একই দিনে এনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউসে শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের সঙ্গে নৈশভোজে ট্রাম্প বলেন, 'আমি একজন কমিউনিস্টকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই না।'

তবে কোন দুই প্রার্থীকে তিনি সরে যেতে দেখতে চান তা খোলাসা করেননি।

সংবাদমাধ্যম সিবিএস জানায়, নিউইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচন শুধু শহরের আলোচ্য বিষয় নয়, সব দেখে মনে হচ্ছে, এটি এখন হোয়াইট হাউসেরও আলোচনার বিষয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, এখন নির্বাচনী লড়াই হবে চার প্রার্থীর মধ্যে। এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে নির্বাচনী দৌড়ে এই চারজনের মধ্যে এগিয়ে আছেন জোহরান মামদানি। তবে তার সঙ্গে একজনের লড়াই হলে ফলাফল কী হবে তা অনিশ্চিত। আর এই সুযোগটিকেই যেন কাজে লাগাতে চাচ্ছেন ট্রাম্প।

এখন প্রশ্ন— ট্রাম্প কি নিছক নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে মামদানিকে ঠেকাচ্ছেন না ভবিষ্যতের একজন শক্তিশালী ডেমোক্র্যাট নেতার ক্যারিয়ার অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে চাচ্ছেন?

Comments

The Daily Star  | English
Yunus, Charter, and Our Future

Yunus, Charter, and Our Future

Can the vision for 'New Bangladesh' ignore the poor, farmers, workers, youth, women, or employment and climate crises?

6h ago