‘নেপো কিডস’ কারা? নেপালের সরকার পতনের নেপথ্যে আরও যত কারণ

ছবি: এএফপি

সামাজিক মাধ্যমে বিষেধাজ্ঞা, রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপন, ব্যাপক বেকারত্ব আর দুর্নীতির অভিযোগে দেশজুড়ে তরুণদের নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করলেন নেপালের চার বারের প্রধানমন্ত্রী কেপি অলি শর্মা।

এই আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে 'নেপো কিডস' নামে পরিচিত একটি শ্রেণি, যাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে বিলাসী জীবনযাপনের অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেকারত্বের হতাশা ও সামাজিক মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা থেকে তৈরি হওয়া ক্ষোভ। মূলত তরুণ প্রজন্মের এই ক্ষোভই সরকারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। এই আন্দোলনে গতকাল সোমবার একদিনে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না।

কারা এই 'নেপো কিডস'

নেপালজুড়ে এই বিক্ষোভের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিল 'নেপো কিডস'। ধনী রাজনীতিবিদ এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সন্তানদেরকে এই নামে অভিহিত করা হচ্ছে। নেপোটিজম বা স্বজনপ্রীতি থেকে এই নামকরণ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতির সুবিধাভোগী এই তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের দামী গাড়ি, বিলাসবহুল অবকাশ যাপন এবং জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাত্রার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করছে। এতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রকট বৈষম্য উঠে আসছে।

ছবি: এএফপি

অনেকের মতে, সম্পদ ও ক্ষমতার এই নগ্ন প্রদর্শন করছেন নেপো কিডসরা। তাদের কর্মকাণ্ড নেপালের ধনী ও দরিদ্রের মধ্যকার বিশাল ফারাক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তরুণদের অভিযোগ, এই বিলাসী জীবনযাত্রার অর্থের উৎস হলো পদ্ধতিগত দুর্নীতি, যা নেপালের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি টিকটক ভিডিওতে এক ব্যবহারকারী বলেন, "'নেপো কিডস'রা ইনস্টাগ্রাম আর টিকটকে তাদের জীবনযাত্রা দেখায়, কিন্তু এই টাকা কোথা থেকে আসে, তা কখনো বলে না।" বর্তমানে #NepoKids হ্যাশট্যাগটি নেপালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যতম শীর্ষ ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।

কেন ফুঁসছে তরুণ প্রজন্ম

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে নেপালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ২০.৮ শতাংশ। চাকরির খোঁজে বহু তরুণ বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশটির মোট জিডিপির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। এই কঠিন বাস্তবতার বিপরীতে 'নেপো কিডস'দের বিলাসী জীবন তরুণদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

তরুণদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেননি নেপালি কংগ্রেসের নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনপি সৌদ। তিনি বলেন, 'এটি দীর্ঘকাল ধরে নেপালি রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তবে এর সমাধান আইন ও সংবিধান অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে হওয়া উচিত।'

অন্যদিকে, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও আরেক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গাওয়ালি বলেছেন, স্বজনপ্রীতির অভিযোগগুলো ঘটনা অনুযায়ী সমাধান করা উচিত। তিনি বলেন, দেশের আইন বলে না যে, নেতারাদের সন্তান হওয়ার কারণে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে হবে। যদি অন্যায়ভাবে সুরক্ষা বা উৎসাহ দিয়ে এটি করা হয়, তবে নির্দিষ্ট ঘটনা ধরে আলোচনা হতে পারে। তবে আমি মনে করি না এটি একটি সাধারণ পরিস্থিতি।

আন্দোলনের হাতিয়ার সামাজিক মাধ্যম

নেপালে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহার। দেশটিতে মাথাপিছু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নেপালে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪৩ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৪৮.১ শতাংশ। এর তুলনায়, প্রতিবেশী ভারতে এই হার মাত্র ৩৩.৭ শতাংশ।

বিশ্লেষক সংস্থা কেপিওসের মতে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে ২০২৫ সালের শুরু পর্যন্ত নেপালে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ৭৫ লাখ (৫.৬ শতাংশ) বেড়েছে। সেখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, যার ব্যবহারকারী ১ কোটি ৪৩ লাখ। এরপর রয়েছে ইনস্টাগ্রাম (৩৯ লাখ) ও লিংকডইন (২০ লাখ)।

নেপালে সামাজিক মাধ্যমের এই বিপুল জনপ্রিয়তার পেছনে বিভিন্ন কারণ আছে। নেপালের জনসংখ্যার ৭৭.৪ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে বাস করে এবং পার্বত্য অঞ্চল হওয়ায় যোগাযোগ রক্ষা করা বেশ কঠিন। এছাড়া, জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কাজের জন্য বিদেশে থাকেন। পড়াশোনার জন্যও অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে থাকেন। তার ওপর, নেপালের জনসংখ্যার মধ্যম বয়স (মিডিয়ান এজ) ২৫ বছর। এই বয়সীরাই সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। এ কারণে সরকারের সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা দেশটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Shibir leading in top two Ducsu posts

Islami Chhatra Shibir-backed vice-president candidate Abu Shadik Kayem was leading the Ducsu polls in six out of 18 halls of Dhaka University.

52m ago