ব্রিটেনের ডিফেন্স কলেজে নিষিদ্ধ হলো ইসরায়েলি সেনা

স্টারমার ও নেতানিয়াহু। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত
স্টারমার ও নেতানিয়াহু। কোলাজ ছবি: সংগৃহীত

প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় চলছে ইসরায়েলের নির্বিচার ও গণহত্যামূলক আগ্রাসন। দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রের প্রতি নীরব সমর্থন জানালেও ধীরে ধীরে ইসরায়েলের এসব মানবতাবিরোধী কাজের প্রতিবাদে মুখর হচ্ছে যুক্তরাজ্য। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে লন্ডন।

আগামী বছর থেকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী সামরিক অ্যাকাডেমি রয়েল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজ-এ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কোন সদস্য ভর্তি হতে পারবেন না। এই নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ গাজায় আগ্রাসন।

গতকাল রোববার ব্রিটিশ সরকার বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।

আজ টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

ব্রিটেনের রয়েল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজ ভবন। ছবি: লিংকডইন
ব্রিটেনের রয়েল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজ ভবন। ছবি: লিংকডইন

সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ার পর এই উদ্যোগ নিলো ডাউনিং স্ট্রিট।

দ্য টেলিগ্রাফকে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, 'যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মসূচির কোর্সগুলোয় বিভিন্ন দেশের মানুষ অংশ নিতে পারেন। সব সামরিক কোর্সের মূল সুর আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। কিন্তু ইসরায়েল সরকার গাজায় সামরিক অভিযান আরও তীব্র করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অন্যায়।'

মুখপাত্র আরও বলেন, 'এই যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের জন্য নিঃসন্দেহে একটি কূটনীতিক সমাধান আছে। তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি চালু, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা ও গাজার মানুষের কাছে ত্রাণ সরবরাহ আরও বাড়াতে হবে।'

ইসরায়েলের নিন্দা

১৯২৭ সালে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল রয়েল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ৯৮ বছর পর এবারই প্রথম ইসরায়েলি সেনারা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মেজর জেনারেল (রিজার্ভ) আমির বারাম ও আইডিএফের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিনসহ আরও অনেক ইসরায়েলি সেনা এই অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

বারাম একে 'পক্ষপাতদুষ্ট' ও 'যুদ্ধের সময় মিত্রের বিশ্বাসভঙ্গের অসম্মানজনক কাজ' হিসেবে আখ্যা দেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মেজর জেনারেল (রিজার্ভ) আমির বারাম। ছবি: আইডিএফ
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মেজর জেনারেল (রিজার্ভ) আমির বারাম। ছবি: আইডিএফ

তার ভাষ্য, 'যুক্তরাজ্যের সহনশীলতার গর্বের ইতিহাস আছে। সোজা ভাষায় বলতে গেলে, এটা সেই ঐতিহ্য ও ভদ্র আচরণ থেকে লজ্জাজনক বিচ্যুতি।'

তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল আগ্রাসন চালাচ্ছে না। তার মতে, ইসরায়েলের সামরিক উদ্যোগের লক্ষ্য হুতিদের থেকে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলকে সুরক্ষা দেওয়া। পাশাপাশি, একটি ইসলামপন্থি সরকার, যাদের দেশের মানুষ 'ইংল্যান্ড ধ্বংস হোক রব তোলে'—তারা যাতে পরমাণু অস্ত্রের নাগাল না পায়, তাও নিশ্চিত করছে ইসরায়েল।

পাশাপাশি, হামাসের হাত থেকে ৪৮ জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার জন্যেও ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন ওই জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা।

লন্ডন-তেল আবিব সম্পর্কে টানাপড়েন

সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল-যুক্তরাজ্যের সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। গাজায় চলমান আগ্রাসন নিয়ে ব্রিটিশদের ক্ষোভ ও রাগের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে নিয়মিতই।

গত জুনে ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থি নেতা ইতামার বেনগভি ও বেজালেল স্মৎরিচের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় লন্ডন। পাশাপাশি, তেল আবিবের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য আলোচনাও স্থগিত হয়ে যায়।

গত জুলাইতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন কিয়ার স্টারমার। এতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। তবে এখানেই থামেনি ডাউনিং স্ট্রিটের ইসরায়েলি গণহত্যাবিরোধী উদ্যোগ।

গত আগস্টে ব্রিটিশ সরকার লন্ডনে অস্ত্র মেলায় ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের যোগদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট হারজগের সঙ্গে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের বৈঠক। ফাইল ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট হারজগের সঙ্গে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের বৈঠক। ফাইল ছবি: এএফপি

দুই দেশের সম্পর্কের অচলাবস্থা নিরসনে গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য যান ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ। তিনি স্টারমারের সঙ্গে 'কঠিন' আলোচনায় বসেছেন বলে দাবি করেন।

ওই বৈঠকের পর দুই নেতা দাবি করেন, বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েল একে অপরের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেই পথ চলতে চায়।

তবে এখনো যুক্তরাজ্যকে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে দেখা যায়নি। বিপরীতে, সামরিক অ্যাকাডেমিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইসরায়েলকে আরও চাপে রেখেছে ব্রিটিশ সরকার।

এই 'অপমান' ইসরায়েলিরা সহজে হজম করতে পারবে না বলেই মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

Comments

The Daily Star  | English

Shibli Rubayat, Reaz Islam banned for life in market over scam

In 2022, asset management firm LR Global invested Tk 23.6 crore to acquire a 51 percent stake in Padma Printers, a delisted company, from six mutual funds it manages

2h ago