যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসা কঠিন হচ্ছে, তবে খোলা থাকছে ৭ বিকল্প

ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চাকরি করতে আগ্রহী দক্ষ কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এইচ-১বি ভিসার ফি বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামীকাল রোববার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই আদেশের ফলে দেশটির প্রযুক্তি খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে আমেরিকার স্বপ্নযাত্রার পথ সুগম করতে পারে এমন আরও কিছু বিকল্প ভিসা চালু থাকছে।

এইচ-১বি ভিসা কি

এইচ-১বি হলো যুক্তরাষ্ট্রের একটি ওয়ার্ক ভিসা। মূলত উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন বিদেশি পেশাজীবীদের আকৃষ্ট করতে এই ভিসা দেওয়া হয়। তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল, চিকিৎসা, গবেষণা, কিংবা শিক্ষকতার মতো বিশেষায়িত ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মী নিয়োগে মার্কিন কোম্পানিগুলো বিদেশি নাগরিকদের এই ভিসা স্পনসর করতে পারে। এই ভিসাধারী ব্যক্তি স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য পরে গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবছর যতগুলো এইচ-১বি ভিসা ইস্যু করে তিন-চতুর্থাংশই পান ভারতীয় নাগরিকেরা। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রশন সার্ভিসের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসাধারী ভারতীয় ছিলেন ২ লাখ ৭৯ হাজার জন। এর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিলেন চীনের ৪৫ হাজার জন। এই ভিসাধারীদের গড় বার্ষিক আয় ১ লাখ ১৮ হাজার ডলার।

তবে নতুন ফি নির্ধারণের ফলে এই জনপ্রিয় ভিসাটি এখন অনেকেরই নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এইচ-১বি ভিসার বিকল্প 

এইচ-১বি ভিসার পথ কঠিন হলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজ করার জন্য আরও কয়েকটি বিকল্প পথ খোলা রয়েছে। জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিন তাদের এক নিবন্ধে এরকম সাতটি বিকল্প ভিসার কথা জানিয়েছে।

ক্যাপ-এক্সেম্পট এইচ-১বি

সাধারণত লটারির মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৮৫ হাজার এইচ-১বি ভিসা দেওয়া হয়। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়, অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোর জন্য এইচ-১বি ভিসার কোটা বা লটারির নিয়ম প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ, এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পেলে কোটার বাইরেই সরাসরি এইচ-১বি ভিসা পাওয়া সম্ভব।

বহুজাতিক কোম্পানির কর্মীদের জন্য এল-১ ভিসা

যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বহুজাতিক কোম্পানির শাখা রয়েছে, তারা তাদের অন্য দেশের অফিসের ম্যানেজার, এক্সিকিউটিভ বা বিশেষজ্ঞ কর্মীদের এল-১ ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় স্থানান্তর করতে পারে। এক্ষেত্রে কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগের তিন বছরের মধ্যে অন্তত এক বছর ওই কোম্পানির হয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।

শিক্ষার্থীদের জন্য ওপিটি

যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা বিদেশি শিক্ষার্থীরা এফ-১ স্টুডেন্ট ভিসার অংশ হিসেবে 'অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং' (ওপিটি) এর আওতায় এক বছর কাজের সুযোগ পান। তবে আবেদনকারী যদি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল বা গণিত (STEM) বিষয়ে পড়াশোনা করে থাকেন, তবে এই কাজের মেয়াদ আরও ২৪ মাস বাড়ানো যায়। অর্থাৎ, মোট তিন বছর কাজের সুযোগ পাওয়া যায়, যা পরবর্তী ভিসার পথ সহজ করে।

নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের জন্য বিশেষ ভিসা

কানাডা ও মেক্সিকোর নাগরিকদের জন্য টিএন (টিএন) ভিসা, অস্ট্রেলিয়ার জন্য ই-৩ এবং চিলি ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের জন্য এইচ-১বি১ ভিসা রয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু বাণিজ্য চুক্তির আওতায় এসব দেশের পেশাজীবীরা যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ পান। বাংলাদেশিদের মধ্যে যাদের এসব দেশের নাগরিকত্ব আছে তারা এই ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে কাজ করতে পারেন।

ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ই-১ এবং ই-২ ভিসা

যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, সেসব দেশের নাগরিকেরা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা বা বিনিয়োগের জন্য ই-১ বা ই-২ ভিসার আবেদন করতে পারেন।

বিনিয়োগকারী ও বিশেষজ্ঞদের জন্য গ্রিন কার্ড

প্রায় ৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে ইবি-৫ ভিসার মাধ্যমে সরাসরি গ্রিন কার্ড পাওয়া সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ১৯৯০ সাল থেকে এই ভিসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বা বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা, যারা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ব্যবসা দাঁড় করাতে চান, তারা ইবি-২ ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ওয়েভার ক্যাটাগরিতে গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।

স্বামী বা স্ত্রীর ভিসার মাধ্যমে কাজের সুযোগ

অনেক সময় আবেদনকারীর স্বামী বা স্ত্রী যদি এল-১, ই-২ বা জে-১ ভিসাধারী হন, তবে তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অনুমতি পেতে পারেন। এমনকি আবেদন করা হলে এইচ-১বি ভিসাধারী ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীও কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন।

এইচ-১বি ভিসার পথ সংকুচিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা থাকায় যোগ্য আবেদনকারীদের জন্য বিকল্প পথগুলো খোলা থাকছে। সঠিক তথ্য ও অভিবাসন আইনজীবীর পরামর্শ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Hasina can’t evade responsibility for Khaleda Zia’s death: Nazrul

In 2018, Khaleda walked into jail, but came out seriously ill, he says

5h ago