গ্রিসে ১৩ ঘণ্টার কর্মদিবস চালুর পরিকল্পনার প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট

গ্রিসের রক্ষণশীল সরকার দেশটিতে 'বিশেষ পরিস্থিতিতে' ১৩ ঘণ্টার কর্মদিবস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। স্বভাবতই, এই উদ্যোগে নাখোশ দেশটির জনগণ।
আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
সরকারের এই উদ্যোগের প্রতিবাদে সরকারি ও বেসরকারি কর্মী ইউনিয়ন ২৪ ঘণ্টা ধর্মঘটের আহবান জানিয়েছে। আজ বুধবারের ধর্মঘটে রাজধানী অ্যাথেন্সে ট্রেন ও ফেরি সেবা আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে শিক্ষক, হাসপাতালের কর্মী ও সরকারি কর্মচারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিৎসোতাকিস-এর কনজারভেটিভ সরকারের প্রস্তাবিত সংস্কারের প্রতিবাদে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে গ্রিসজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বেসরকারি খাতের প্রধান কর্মী ইউনিয়ন জিএসইই ও সরকারি খাতের ইউনিয়ন এডিইডিওয়াই এই বিক্ষোভ ও ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এক বিবৃতিতে জিএসইই জানায়, প্রস্তাবিত সংস্কার 'কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং এটি ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনের ভারসাম্য নষ্ট করবে।'
কমিউনিস্টপন্থি ইউনিয়ন পিএএমই সরকারের বিরুদ্ধে 'আধুনিক দাসত্ব' কায়েমের অভিযোগ এনেছে। পাশাপাশি, 'অমানবিক কর্মঘণ্টা ও অপর্যাপ্ত মজুরি' চালুর অপচেষ্টারও অভিযোগ এনেছে সংগঠনটি।
প্রস্তাবিত সংস্কার পরিকল্পনাটি বিল আকারে পার্লামেন্টে উত্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল নিউ ডেমোক্রেসি (এনডি)।
তবে সর্বস্তরে বা সব চাকরিতে ১৩ ঘণ্টার কর্মদিবস চালু হবে না। এতে রয়েছে নানা শর্ত ও বিধিনিষেধ।
'বিশেষ পরিস্থিতিতে', শুধুমাত্র বাড়তি মজুরির বিনিময়ে 'একই কর্মক্ষেত্রে' দিনে সর্বোচ্চ ১৩ ঘণ্টা কাজ করার বিধান চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিপুল দেনার বোঝা ও এ সংক্রান্ত সংকট থেকে বের হয়ে আসলেও গ্রিসের অর্থনীতি এখনো বেশ ভঙ্গুর অবস্থায় আছে।
গ্রিকদের অনেকেই তাদের মূল চাকরির প্রয়োজনীয় কর্মঘণ্টা শেষ করে অপর এক বা একাধিক খণ্ডকালীন কাজ করে বাড়তি রোজগারের চেষ্টা চালান।
নতুন বিধান চালু হলে এক চাকরিতেই তারা দীর্ঘ সময় কাজ করে বাড়তি আয় করতে পারবেন।
২০১৯ থেকে দেশের নেতৃত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী মিতসোতাকিস। তিনি উল্লেখ করেন, গ্রিসের অনেক তরুণ-তরুণী দুইটি চাকরি করছে। স্পষ্টতই, তারা বাড়তি পরিশ্রম করে উপার্জন বাড়াতে চায়।

তিনি এ মাসের শুরুতে প্রশ্ন তোলেন, 'আমরা নিয়োগদাতা ও কর্মী, উভয়ের জন্যই উপযুক্ত কর্মঘণ্টা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। তাহলে কেন এটাকে সমাজ-অবান্ধব উদ্যোগ বলা হচ্ছে?'
শ্রমমন্ত্রী নিকি কেরামেউস নিশ্চিত করেন, এটা শুধু 'ব্যতিক্রমী' পরিস্থিতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। সর্বক্ষেত্রে ১৩ ঘণ্টার কর্মদিবস চালুর কোন সম্ভাবনাই নেই।
তিনি জানান, বছরে সর্বোচ্চ ৩৭ দিন এভাবে ১৩ ঘণ্টা করে কাজ করতে পারবে কর্মীরা এবং এতে নিয়োগদাতার সম্মতি থাকতে হবে। পাশাপাশি, মূল মজুরি থেকে অন্তত ৪০ শতাংশ বেশি মজুরি দিতে হবে ওই বাড়তি কাজের জন্য।
বর্তমানে গ্রিসে দৈনিক কর্মঘণ্টার সর্বোচ্চ, আইনি সীমা আট ঘণ্টা। এর বেশি কাজ করলে 'ওভারটাইম' দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।
ইতোমধ্যে গ্রিসে সাপ্তাহিক ছুটি এক দিন কমিয়ে ছয় দিন কাজ করার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিশেষত, পর্যটনের মতো উচ্চ প্রবৃদ্ধির খাতে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, বাধ্যবাধকতা, বছরে মাত্র ৩৭ দিন ১৩ ঘণ্টা করে কাজ করানোর সীমাবদ্ধতা—নেপথ্যের কারণ যাই হোক, বিশ্লেষকদের মতে, দিনের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে কাজ করার এই কর্মঘণ্টা কখনোই স্বাভাবিক নয়।
Comments