ফ্লোটিলা থেকে আটক গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতনের অভিযোগ, ইসরায়েলের অস্বীকার

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা' থেকে আটক হওয়া সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও তাকে নির্যাতন করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ফেরার পর এ অভিযোগ করেছিলেন ওই নৌবহরে অংশ নেওয়া কয়েকজন আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মী।
আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি
সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা জানায়, এ ধরনের কোনো দুর্ব্যবহার বা নির্যাতন নিয়ে গ্রেটা 'ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি।'
আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় ফ্লোটিলার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি নৌবাহিনী অভিযান চালায়। ওই অভিযানে বিভিন্ন নৌযানে উপস্থিত শত শত মানবাধিকারকর্মীকে আটক করে ইসরায়েল।
বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে গতকাল শনিবার ইস্তাম্বুলে ফেরেন তুরস্কের সাংবাদিক এরসিন সেলিক।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া সেলিক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতন করেছে, মাটির ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে এবং ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করেছে।'
তিনি স্বচক্ষে এসব নির্যাতন দেখেছেন বলে জানান।
ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে একই কথা বলেন মালয়েশিয়ার অধিকারকর্মী হাজওয়ানি হেলমি ও যুক্তরাষ্ট্রের উইন্ডফিল্ড বিবার। তারা জানান, 'থুনবার্গকে ধাক্কা দিয়ে তার গায়ে জোর করে ইসরায়েলি পতাকা মুড়িয়ে দেওয়া হয়।'
হাজওয়ানি হেলমি সাংবাদিকদের বলেন, 'এটাকে চরম বিপর্যয় বললেও কম বলা হবে। ওরা আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করেছে।'
আটক করার পর অধিকারকর্মীদের খাবার, পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধও দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
উইন্ডফিল্ড বিবার অভিযোগ করেন, থুনবার্গের সঙ্গে ভয়ানক আচরণ করা হয়েছে। তাকে অপপ্রচারের মাধ্যম বানানো হয়েছে।

'একটা কক্ষে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির প্রবেশ করার পর সেখানে ধাক্কা মেরে গ্রেটাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়', যোগ করেন তিনি।
ইতালির সাংবাদিক লরেঞ্জো আগোস্তিনোও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক হয়েছিলেন। তিনিও থুনবার্গের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কথা জানান।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে তিনি বলেন, 'গ্রেটা থুনবার্গ একজন সাহসী নারী। বয়স মাত্র ২২ বছর। তাকে অপমান করা হয়েছে। তার গায়ে ইসরায়েলি পতাকা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে একটি ট্রফির মতো প্রদর্শন করা হয়েছে।'
দুর্ব্যবহারের কথা জানান আটক হওয়ার পর ফিরে আসা আরও কয়েকজন অধিকারকর্মী।
তুরস্কের টেলিভিশন উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার বলেন, 'আমাদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করা হয়েছে। তিন দিন ধরে আমাদের খাবার দেওয়া হয়নি, পানি দেওয়া হয়নি। টয়লেটে থাকা পানি খেতে হয়েছে। ভীষণ গরম ছিল। আমরা রীতিমতো ঝলসে গেছি।'
'গাজাবাসীর সঙ্গে আসলে কী ঘটছে, এ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি', যোগ করেন তিনি।
তুরস্কের অধিকারকর্মী আয়চিন কানতুগলু ইসরায়েলি বন্দিশালায় রক্তমাখা দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের লেখা দেখতে পাওয়ার কথা জানান। সেখানে যারা আগে আটক ছিলেন, তারাই মূলত এসব বার্তা লিখে রেখে গেছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা দেখেছি, মায়েরা নিজেদের সন্তানের নাম দেয়ালে লিখে গেছেন। আমরা আসলেই কিছুটা অনুভব করতে পেরেছি, ফিলিস্তিনিরা কোন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।'
Comments