হামাস-ইসরায়েলের চুক্তি নিয়ে প্রধান প্রশ্নগুলো কী, ঝুঁকি কোথায়?

ইসরায়েলের হামলায় আহত এক ব্যক্তি তার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি দেখছেন। ছবি: রয়টার্স

গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে সম্মতি জানিয়েছে ইসরায়েল ও হামাস। এই পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত আছে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির চুক্তি, যা দুই বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে চলা ভয়াবহ সংঘাত শেষ করার দিকে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সামাজিক মাধ্যম এক্সে জানান, বুধবার রাতে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের সব শর্ত ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

চুক্তি নিয়ে যা জানা গেল

ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাব বা পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায় বাস্তবায়ন সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে মিসরে অনুষ্ঠিত এক পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে। গাজায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের যুদ্ধ চলছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এরপরই ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বিধ্বংসী অভিযান চালানো শুরু করে।

ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের চুক্তিতে সই করেছে। এর মাধ্যমে খুব শিগগিরই জিম্মিরা মুক্তি পাবে। পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনারা গাজায় 'হলুদ রেখা' পর্যন্ত সরে যাবে। ইসরায়েলের একজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, এটি ট্রাম্পের পরিকল্পনার অধীনে ইসরায়েলের প্রাথমিক সেনা প্রত্যাহারের সীমারেখা।

হামাস নিশ্চিত করেছে, তারা যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং বন্দি-বিনিময়। তারা ট্রাম্প এবং চুক্তির নিশ্চয়তা দেওয়া দেশগুলোর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলছে, ইসরায়েল যেন যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করে।

প্রধান প্রশ্নগুলো কী?

এই চুক্তিতে যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে সম্ভাবনার আলো থাকলেও এখনো গুরুত্বপূর্ণ অনেক দিক স্পষ্ট নয়। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সময়সূচি, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসন গঠন ও হামাসের ভবিষ্যৎ।

কেউ এখনো ঠিক জানে না যুদ্ধ শেষ হলে গাজা কে শাসন করবে। নেতানিয়াহু, ট্রাম্প, পশ্চিমা ও আরব দেশগুলো হামাসকে কোনো প্রশাসনিক ভূমিকা দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেছে। গোষ্ঠীটি ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করছে।

ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কিছু ভূমিকা নেবে। তবে সেটি কেবল তখনই সম্ভব, যখন বড় ধরনের সংস্কার সম্পন্ন হবে।

এরপর কী হবে?

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি তার সরকারকে ডেকে চুক্তি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেবেন।

হামাসের একটি সূত্র জানায়, ইসরায়েলি সরকার চুক্তি অনুমোদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত জিম্মিদের হস্তান্তর করা হবে। ইসরায়েল জানিয়েছে, জিম্মি মুক্তি শনিবার থেকে শুরু হতে পারে। মোট ৪৮ জিম্মির মধ্যে ২০ জন এখনো জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল চুক্তি অনুমোদনের পর নির্ধারিত সীমানায় সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এটি হবে। এরপর ৭২ ঘণ্টার সময় গণনা শুরু হবে। হোয়াইট হাউস আশা করছে, জিম্মিদের মুক্তি সোমবার থেকে শুরু হবে।

হামাস বুধবারের আগে তাদের কাছে থাকা জিম্মিদের তালিকা এবং যে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি তারা চায়, তা হস্তান্তর করেছে।

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে যেতে পারেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তিনি শুক্রবার সফরের কথা বিবেচনা করছেন। নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ইসরায়েলের সংসদে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং ট্রাম্প এ বিষয়ে রাজি আছেন বলে অ্যাক্সিওসকে বলেছেন।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যাকে 'বোর্ড অব পিস' বলা হচ্ছে, সেটি গাজায় যুদ্ধপরবর্তী প্রশাসনে ভূমিকা রাখবে। এটি ট্রাম্পের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এবং এতে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও থাকবেন।

চুক্তির সবচেয়ে বড় ঝুঁকিগুলো কী?

চুক্তি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে এটি ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির বড় সাফল্য হিসেবে গণ্য হবে। জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট পদে বসার সময় তিনি দ্রুত গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

অস্ত্র ছাড়তে হবে হবে, ইসরায়েলের এমন দাবি হামাস মানতে রাজি নয়। ফিলিস্তিনি সূত্র বলেছে, যতক্ষণ ইসরায়েলি সেনারা তাদের জমিতে আছে, হামাস ততক্ষণ অস্ত্র ছাড়বে না।

আলোচনার সঙ্গে পরিচিত দুটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, প্রধান সমস্যার মধ্যে একটি হলো ইসরায়েলের প্রত্যাহারের পদ্ধতি। হামাস চাচ্ছে জিম্মি মুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে একটি স্পষ্ট সময়সূচি এবং ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা।

গাজায় ট্রাম্পের নির্দেশে ইসরায়েল সামরিক অভিযান সীমিত করেছে। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে আক্রমণ বন্ধ করেনি।

ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন করা আরব দেশগুলো বলছে, শেষ পর্যন্ত একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে পৌঁছাতে হবে। নেতানিয়াহু বলছেন, এটি কখনোই হবে না।

হামাস জানিয়েছে, তারা গাজার শাসনভার শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এবং আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সমর্থনে একটি টেকনোক্রেট সরকারের হাতে ছাড়বে। তারা ব্লেয়ার বা কোনো বিদেশি শাসনের কোনো ভূমিকা মেনে নেবে না।

হামাস যে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে চাচ্ছে, আশা করা হচ্ছে, সেই তালিকায় এমন কয়েকজন বন্দি থাকবেন, যাদের মুক্তি আগের  যুদ্ধবিরতিগুলোতে অনুমোদিত হয়নি।

সংশ্লিষ্ট এক ফিলিস্তিনি সূত্র বলেছে, তালিকায় রয়েছেন ফাতাহ আন্দোলনের নেতা মারওয়ান আল-বারগৌতি এবং পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের প্রধান আহমেদ সাদাত। দুজনই একাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
 

Comments