ইসরায়েলের আচরণে হোয়াইট হাউসের হতাশা বাড়ছে
ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের যেকোনো আইনবিরোধী কাজে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষেত্র বিশেষে, ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রেরই 'অংশ' মনে করেন কেউ কেউ। ইসরায়েলের ওপর আঘাতকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরই আঘাত হিসেবেও গণ্য করেন দুই দেশের অধিবাসীদের অনেকে। ইসরায়েলের নিরাপত্তার গুরুভারও তাই যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
এমন পরিস্থিতিতেও বয়ে চলছে উল্টো স্রোত। জরিপ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫৯ শতাংশ মানুষ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলছেন। এটি একসময় কল্পনাও করা যেত না। মার্কিনিদের এমন মনোভাবে নিশ্চয় নাখোশ ইসরায়েল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হোয়াইট হাউসের 'হতাশা'।
গতকাল শুক্রবার বিশ্বখ্যাত সাময়িকী পলিটিকোর বরাত দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুসালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়—গাজায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ও পশ্চিমতীর আত্মসাতের ভোটের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলকে নিয়ে হোয়াইট হাউসের হতাশা ক্রমশ বাড়ছে।
এতে বলা হয়, গত ২২ অক্টোবর জেরুসালেম বৈঠকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে 'কড়া বার্তা' নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৯ অক্টোবর গাজায় সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলকে নিয়ে হতাশা বাড়ছে। নেসেটে পশ্চিমতীর আত্মসাতের ভোট সেই হতাশা আরও বাড়িয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের ঘন ঘন ইসরায়েল সফরের মাধ্যমে সেই হতাশার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের কথাবার্তায় তা ফুটে উঠছে।
গত ১৫ অক্টোবর টাইম সাময়িকীতে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প পশ্চিমতীর অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ভোটাভুটির কারণে ইসরায়েলের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার ভাষ্য, 'এটি হতে দেব না। কারণ, আমি আরব দেশগুলোকে কথা দিয়েছি। যদি এমনটি হয় তাহলে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সমর্থন হারাবে।'
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জারেড কুশনারও ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীর দখল করে তা ইসরায়েলের ভেতর নিয়ে নেওয়ার বিরোধিতা করেছেন।
অপর ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের শিরোনামে বলা হয়, ট্রাম্প বলেছেন 'পশ্চিমতীর নিয়ে ইসরায়েল কিছুই করতে পারবে না'। পশ্চিমতীর আত্মসাতের ইসরায়েলি ভোটের পর ক্রোধ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৩ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন যে পশ্চিমতীর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। গত ২২ অক্টোবর ইসরায়েলের নেসেটে পশ্চিমতীর আত্মসাতের ভোটের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন। কোনো বিতর্কিত সিদ্ধান্তে নেতানিয়াহু অংশ নেবেন না—ট্রাম্পের কাছে এমন প্রতিজ্ঞা করায় নেতানিয়াহু ভোটদানে বিরত থাকেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমটি বলেন, 'ইসরায়েলিরা আমাদেরকে জো বাইডেনের প্রশাসনের লোক ভাবলে ভুল করবে।'
অপর ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল টুয়েলভ-এর বরাত দিয়ে দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, একই দিনে অপর মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, 'নেতানিয়াহু যদি গাজা যুদ্ধবিরতিকে বিপদে ফেলেন তাহলে ট্রাম্প তাকেও বিপদে ফেলবেন।' নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এক জটিল পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে বলেও জানান তিনি।
ইসরায়েলের সরকারি সংবাদমাধ্যম কান-এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, নেতানিয়াহু সফররত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, নেসেটে পশ্চিমতীর আত্মসাতের ভোটের তেমন গুরুত্ব নেই।
গত ২৩ অক্টোবর ইসরায়েল ছাড়ার সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট বিমানবন্দরে নেসেটের এই ভোটাভুটিকে নিকৃষ্ট 'রাজনৈতিক ভাওতাবাজি' হিসেবে আখ্যা দেন।
সেদিন পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে তাদের জানানো হয়েছে যে নেসেটে পশ্চিমতীর নিয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতানিয়াহুর বিরোধীরা বিভেদের বীজ বুনছেন। সেই ভোটে ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সমর্থন নেই।
একই দিনে সাময়িকীটির অপর প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুই সপ্তাহ আগে ইসরায়েলে এসে ট্রাম্প যে বলিষ্ঠ ভাষায় কথা বলেছিলেন এবং শান্তি ও বন্ধুত্বের যে বাণী শুনিয়েছিলেন তা এখন পাল্টে গেছে। এখন নেতানিয়াহু সরকার নিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে হতাশার বার্তা প্রকাশিত হচ্ছে।
সেদিন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় হামলা ও নেসেটে পশ্চিমতীর আত্মসাতের ভোট নিয়ে ইসরায়েলের ওপর হোয়াইট হাউস হতাশ বলে জানা যাচ্ছে।
এর আগের দিন তথা গত ২২ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা মনে করি, নেসেটে পশ্চিমতীর নিয়ে ভোটাভুটি গাজা শান্তিচুক্তিকে সম্ভাব্য হুমকিতে ফেলেছে।'


Comments