কে এই জোহরান মামদানি? তাকে নিয়ে কেন এত আলোচনা?

জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

নিউইয়র্ক মহানগরীর মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানিকে নিয়ে শুধু মার্কিন রাজনীতিতে নয়, এখন আলোচনা হচ্ছে বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতেও। নির্বাচিত হলে তিনি হবেন নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোভূত মেয়র। 

আজ মঙ্গলবার নিউইয়র্কের বাসিন্দারা ভোট দিচ্ছেন নতুন মেয়র নির্বাচন করতে। তাদের ভোটেই সৃষ্টি হতে যাচ্ছে এই মহানগরীর নতুন ইতিহাস। 

বিশ্ববাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক নানা কারণে সবার কাছে আকর্ষণীয়। পশ্চিমের দেশগুলোয় সাধারণত অভিবাসীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। তবে বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ লন্ডন মহানগরীর মেয়র পদে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাদিক খান নির্বাচিত হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে থাকে। 
সেই ধারাবাহিকতায় আফ্রো-এশিয়ান পরিচয় নিয়ে জোহরান মামদানি এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের নির্বাচনী মহারণে।

প্রখ্যাত ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ারের ছেলে জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়, ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর। সদ্য ৩৪ বছরে পা দেওয়া এই রাজনীতিকের বাবা মাহমুদ মামদানি ভারতে জন্ম নেওয়া উগান্ডান শিক্ষাবিদ।

জোহরানের যখন ৫ বছর বয়স তখন তার মা-বাবা তাকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় আসেন। এর দুই বছর পর তারা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চলে যান নিউইয়র্কে।

মার্কিন রাজনীতিতে জোহরান মামদানির উত্থান অনেকটা হঠাৎ করেই। ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই রাজনীতিক নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন।

২০২৪ সালের অক্টোবরে জোহরান মামদানি যখন নিউইয়র্কের মেয়র পদে লড়াই করার ঘোষণা দেন, তখন তিনি প্রায় সবার কাছেই অপরিচিত ছিলেন। এক বছরের কম সময়ে তিনি এতটাই পরিচিত হয়ে ওঠেন যে, তাকে নিয়ে সারাবিশ্বেই আলোচনা হতে থাকে। তিনি তার দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানোর পর ভীষণভাবে আলোচনায় আসেন।

স্ত্রী সিরীয়-মার্কিন শিল্পী রামা দুয়াজিকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

নিউইয়র্কের বর্তমান মেয়র ও ডেমোক্র্যাট নেতা এরিক অ্যাডামস প্রথমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিলেও তার জনসমর্থন তলানিতে থাকায় তিনি নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যান। অপর প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট নেতা নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর কিছুটা জনসমর্থন থাকলেও তা তার প্রধান বিরোধী জোহরান মামদানির তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে, রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার জনসমর্থনের হার তিন প্রার্থীর মধ্যে তৃতীয়।

এসব প্রভাবশালী প্রার্থীদের বিবেচনায় জোহরান মামদানি একদিকে যেমন তরুণ অন্যদিকে অনভিজ্ঞ। তবে তার ভাষ্য—পৃথিবী বদলাতে বয়স বা অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় ইচ্ছার। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন যে তারা দায়িত্বশীল হয়েও সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলাতে কোনো ভূমিকা রাখেননি।

এরপর যেন 'মুখ পুড়তে' থাকে সেইসব বর্ষীয়ান রাজনীতিকদের। জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগগুলো জনমনে দাগ ফেলতে ব্যর্থ হয়। জোহরান মামদানি জনগণের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো নিরলসভাবে তুলে ধরতে থাকেন। ক্রমশ বাড়তে থাকে তার জনপ্রিয়তা।

আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট থেকে জোহরান মামদানি উঠে এসেছেন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে। তিনি গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি ক্ষমতায় গেলে ইসরায়েলে নিউইয়র্কের সরকারি অর্থ বিনিয়োগ বন্ধ করতে চেষ্টা করবেন।

তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত।

জোহরান মামদানির জনকল্যাণমূলক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলবিরোধিতায় বিরক্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে যেন আরও বেশি সংখ্যক মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয় জোহরান মামদানিকে নিয়ে।

একদিকে, নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষের সার্বিক মঙ্গলের কথা বলে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জোহরান মামদানি বিশ্বের সব প্রান্তেই আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠেন।

এখন সবার চোখ নিউইয়র্কে। সবাই যেন দেখতে চান কে আসেন নিউইয়র্কের মেয়র হয়ে। তিনি কি ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থী নাকি কোনো ট্রাম্পবিরোধী নেতা?

 

Comments

The Daily Star  | English

Trump imposes full travel bans on citizens from Syria, Palestine and 5 more countries

The latest move brings to nearly 40 the number of countries whose citizens face restrictions in coming to the US

1h ago